BRAKING NEWS

জুট মিলের শ্রমিক ও কর্মচারীদের সংশোধিত বেতনক্রম ও বিভিন্ন ভাতা প্রদান করার জন্য ত্রিপুরা উচ্চ আদালতের রায়কে বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট

আগরতলা , ৫ সেপ্টেম্বর : জুট মিলের শ্রমিক ও কর্মচারীদের ০১.০১.১৯৯৬  সন থেকে সংশোধিত বেতনক্রম ও বিভিন্ন ভাতা প্রদান করার জন্য ত্রিপুরা উচ্চ আদালতের রায়কে বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। জুটমিল ও রাজ্য সরকারের দায়ের করা এস.এল.পি ৪ঠা সেপ্টেম্বর  খারিজ করেছে বিচারপতি জে. কে. মহেশ্বরী ও বিচারপতি কে.ভি. বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চ। ত্রিপুরা জুট মিলের স্পেশাল লীভ পিটিশন খারিজ করার সংবাদ গতকাল আগরতলায় পৌছামাত্রই কয়েক হাজার প্রাক্তন ও বর্তমান শ্রমিক কর্মচারী ও  তাদের পরিবারবর্গ খুশিতে মেতে উঠেন।
 চতুর্থ বেতন কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক, রাজ্য সরকারের অধীন ৩৩টি পি এস ইউর মধ্যে ৩২ টি পিএস ইউর শ্রমিক কর্মচারীদের সংশোধিত বেতন ক্রম প্রদান করা হয় ০১.০১.১৯৯৬ থেকে বিভিন্ন ভাতা সমেত।  অন্যদিকে জুটমিলের শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনক্রম সংশোধন করা হয় ০১.০৪.১৯৯৯ থেকে। কোন রকম ভাতা তাদেরকে প্রদান করা হয়নি। এর ফলে ৩২টি পি এস ইউর শ্রমিক কর্মচারীদের তুলনায় জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা প্রতিমাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা বেতন ভাতা বাবদ কম পেতেন। জুট মিলের অফিসাররাও একইভাবে বেতন ভাতা বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছিল।
 জুট মিলের অফিসাররা এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট মামলা দাখিল করেছিলেন। গোয়াহাটি হাইকোর্টের আগরতলা বেঞ্চের তৎকালীন বিচারপতি টি  ভাইফাই রিট মামলা খারিজ করে দেন। এর বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে রিট আপিল করা হয়।  ডিভিশন বেঞ্চ রিট আপিল মঞ্জুর করেন। রায়ে ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্টভাবে বলে যে সংশোধিত বেতন ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে জুট মিলের অফিসার ও শ্রমিক কর্মচারীদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। অন্য ৩২ টি পি এস ইউর শ্রমিক কর্মচারী ও অফিসারদের মতো তারাও সংশোধিত বেতনক্রম বিভিন্ন ভাতা সমেত ০১.০১.১৯৯৬ থেকে পাওয়ার অধিকারী ।  ডিভিশন বেঞ্চের এই রায় সুপ্রিম কোর্টেও বহাল থাকে। এর ফলে জুট মিলের অফিসাররা দারুণভাবে উপকৃত হন। প্রত্যেকের বেতন ভাতা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে বাড়িয়ে এবং বকেয়া বেতন ভাতা বাবদ প্রত্যেকেই মাথাপিছু ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়।
জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা অফিসারদের মত ০১.০১.১৯৯৬ থেকে সংশোধিত বেতনক্রম ভাতা সমেত প্রদানের দাবি জানায় জুট মিল ও রাজ্য সরকারের কাছে। কিন্তু সুবিচার মেলেনি। ২০১৭ সনে জুট মিলের তিনটি সংগঠন উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়ের করে। রিট মামলার ফয়সালা হয় ৪ঠা  সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সনে।  ত্রিপুরা হাইকোর্টের তৎকালীন  প্রধান বিচারপতি  অজয় রাস্তোগির রায়ে রাজ্য সরকারকে ও জুটমিলকে নির্দেশ দেন,  ০১.০১.১৯৯৬ থেকে জুট মিলের শ্রমিক ও কর্মচারীদের সংশোধিত বেতনক্রম ও বিভিন্ন ভাতা প্রদান করতে হবে এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মচারীর পাওনা হিসাব করে মিটিয়ে দিতে হবে । একক বিচারপতির রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার ও জুটমিল রিট এপিল দায়ের করে। ২০২২ সনের সেপ্টেম্বর মাসে উচ্চ আদালতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ মহান্তি ও এস জি চট্টোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের জুট মিলের দায়ের করা রিট আপিল গুলো খারিজ করে দেন। ডিভিশন বেঞ্চের পক্ষে বিচারপতি এস জি চট্টোপাধ্যায় একটি রায় লেখেন। এই রায়ে সমস্ত ঘটনাক্রম ও আইনি প্রশ্নগুলো সঠিকভাবে উত্থাপন করে আইনি জবাব দেওয়া হয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে স্পষ্টভাবে বলেছে, জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা সংশোধিত বেতন ক্রম ও ভাতার ক্ষেত্রে বঞ্চিত এই নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই কারণ এই  বিষয়ে অফিসারদের মামলায় উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণকে সুপ্রিম কোর্ট মান্যতা দিয়েছে। শ্রমিক কর্মচারীদের পক্ষে মামলায় ছিলেন আইনজীবীপুরুষোত্তম রায় বর্মন, সমরজিৎ ভট্টাচার্য ও কৌশিক নাথ । আপিল মামলায় উচ্চ আদালতকে বিভ্রান্ত করার জন্য রাজ্য সরকার ও জুট মিল আদা জল খেয়ে লেগেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মামলা চলাকালীন প্রতিদিন দলে দলে অবসরপ্রাপ্ত জুট  মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা আদালতে আসতেন। অনেকেই অসুস্থ। অধিকাংশই আর্থিক সংকটে জেরবার। অগ্নি মূল্যের বাজারে ২০০০ টাকার ইপিএফ পেনশনই  সম্বল। চোখে মুখে আশা। যদি ডিভিশন বেঞ্চে সরকারের আপিল খারিজ হয় তবে বকেয়া বেতন ভাতা বাবদ প্রত্যেকেই কয়েক লক্ষ টাকা পাবেন। কেউ হিসেব করছেন মেয়ের বিয়ে দেবেন। কেউবা ঠিক করছেন টাকাটা পেলে বসত ঘরটা  সারাই করবেন। কেউবা স্ত্রীর চিকিৎসা করাবেন ও নিজের ঔষধপত্র চিকিৎসার ব্যবস্থার একটু সুরাহা হবে। মামলার তারিখ থাকলেই তারা আদালতে আসতেন। ধৈর্য হারাতেন না। হয়তো আদালতে আসার ক্ষেত্রে ভাড়া জোগাড় করাই অনেকের পক্ষে কষ্টকর। তবুও আসতেন, লড়াই জারি রাখতেন। গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে যখন উচ্চ আদালতের ডিভিশন  বেঞ্চ রায় ঘোষণা করল ,  আপিল খারিজ হলো, তখন অনেকেরই চোখে আনন্দের জল। হিসেব করছেন কত পাবেন , কবে পাবেন। অনেকেরই সংশয় বেঁচে থাকতে পাবেন কিনা, কারণ শরীর জবাব দিয়ে দিচ্ছে।
সরকার ও জুটমিল নাছোড়বান্দা। ডিভিশন বেঞ্চের রায় মাথা পেতে গ্রহণ না করে সুপ্রিম কোর্টে ছুটলেন সরকার ও জুটমিল । ৫০-৬০ লক্ষ টাকা খরচ করে এসএলপি দায়ের করা হলো।  উচ্চ আদালতের রায় কার্যকর না করায় রাজ্য সরকারের শীর্ষ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ও জুট মিলের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়ে গেছে।
অবশেষে গতকালকে  সংবাদ এসে পৌঁছল আগরতলায়। সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের এস এল পি খারিজ করে দিয়েছে। ত্রিপুরা উচ্চ আদালতের রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *