আমাদের সাৰ্বভৌমত্ব ও মৰ্যাদার সঙ্গে কাউকে খেলতে দেওয়া হবে না, গুয়াহাটি আইআইটি-র ২৫-তম সমাবৰ্তন অনুষ্ঠানে বলেছেন জগদীপ
গুয়াহাটি, ৪ জুলাই (হি.স.) : ইউনিফৰ্ম সিভিল কোড (অভিন্ন দেওয়ানি বিধি) রূপায়ণে খুব বিলম্ব হলে আমাদের মূল্যবোধের ক্ষতি হবে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ভারত এবং তার জাতীয়তাবাদকে আরও ফলপ্ৰসূভাবে বেঁধে রাখবে। আমাদের সাৰ্বভৌমত্ব, মর্যাদা ও প্ৰতিপত্তির সঙ্গে কাউকে খেলতে দেওয়া যায় না, বক্তা উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়।
আজ মঙ্গলবার আইআইটি গুয়াহাটির ২৫-তম সমাবৰ্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে এই মন্তব্য করে উপ-রাষ্ট্ৰপতি ধনকড় রাজ্যের নিৰ্দেশনামূলক নীতি (ডিপিএসপি) দেশের শাসন ব্যবস্থার মৌলিক কাঠামো বলে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, নিয়মের মধ্যে বেঁধে রাখা দেশের কৰ্তব্য। বলেন, পঞ্চায়েত, সমবায় সমিতি এবং শিক্ষার অধিকার ইতিমধ্যে আইনে পরিণত হয়েছে। উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, এখন সংবিধানের ৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদকে কাৰ্যকর করার সময় এসে পড়েছে। ভারতের ভাবমূৰ্তি কলঙ্কিত করার অদম্য চেষ্টার বিরুদ্ধে সতৰ্ক করে ধনকড় দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ভারত-বিরোধী সব ধরনের কাৰ্যকলাপকে প্ৰত্যাখ্যান করার সময় এসে গেছে।
উপ-রাষ্ট্ৰপতি জগদীপ বলেন, কোনও বিদেশি সত্ত্বাকে আমাদের সাৰ্বভৌমত্ব ও মৰ্যাদার সঙ্গে খেলা করতে দেওয়া যাবে না। ভারতবৰ্ষকে সবচেয়ে পুরনো, সৰ্ববৃহৎ, কর্মক্ষম এবং জীবন্ত গণতন্ত্ৰ বলে অভিহিত করে ধনকড় বলেন, আমাদের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধশালী গণতন্ত্ৰ এবং সাংবিধানিক প্ৰতিষ্ঠানগুলিকে ক্ষতিগ্ৰস্ত করতে দেব না।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি দুৰ্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ারও আহ্বান জানান তিনি। বলেন, দুৰ্নীতি হলো অগণতান্ত্ৰিক প্রবণতা। দুৰ্নীতি হচ্ছে খারাপ শাসন, সুশাসন নয়। দুৰ্নীতি আমাদের বিকাশের সব দরজা রুদ্ধ করে দেয়। দুৰ্নীতিমুক্ত সমাজ উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে, বলেন তিনি। দুৰ্নীতির অভিযোগে কেউ ধরা পড়লে আইনি প্ৰক্ৰিয়ার আশ্ৰয় গ্রহণের পরিবৰ্তে রাজপথে বেরিয়ে আসার ঘটনায় অসন্তোষ প্ৰকাশ করেন উপ-রাষ্ট্রপতি। তাই তিনি ছাত্ৰছাত্ৰীদের ভারতীয় হওয়ার পাশাপাশি ভারতের ঐতিহাসিক কৃতিত্বের জন্য গৌরবান্বিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অৰ্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের প্ৰতি দায়বদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। বলেন, জাতি ও জাতীয়তাবাদের মূল্যে আৰ্থিক লাভালাভ থেকে আপনারা বিরত থাকবেন। দূরদৰ্শী ব্যক্তিত্ব ড. বিআর আম্বেদকরের বহুমূল্য বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি ছাত্ৰছাত্ৰীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের প্ৰথমে ভারতীয় হতে হবে। ভারতীয়ত্ব ছাড়া অন্য কিছু নেই।
সমাবৰ্তন ভাষণে উপ-রাষ্ট্ৰপতি ধনকড় সহনশীল হওয়ার প্ৰয়োজনীয়তার ব্যাপারেও ছাত্ৰছাত্ৰীদের দৃষ্টি আকৰ্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের অন্যের পন্থাও বিবেচনা করা উচিত। কারণ, প্ৰায়ই অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক বলে বিবেবিত হয়।
সমাবৰ্তনের পর উপ-রাষ্ট্রপতি আইআইটি-র ছাত্ৰছাত্ৰীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন। অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল গুলাবচান্দ কাটারিয়া, মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা, আইআইটি গুয়াহাটির বোর্ড অব গভর্নর্স-এর চেয়ারম্যান ড. রাজীব মোদী, আইআইটি গুয়াহাটির ডিরেক্টর অধ্যাপক পরমেশ্বর কে আয়ার, জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক সদস্য, ছাত্রছাত্রী সহ অন্যান্য বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন৷ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করেছেন রাজ্যপাল কাটারিয়া, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা প্রমুখ৷
প্রসঙ্গত আজকের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ২,০১১ জন স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচ.ডি ডিগ্ৰি-প্ৰাপ্তদের সংবৰ্ধনা জ্ঞাপন করা হয়েছে৷ আজ উপ-রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপালরা আইআইটি গুয়াহাটি চত্বরে একটি করে ঔষধি গাছের চারা রোপণ করেছেন৷
গুয়াহাটিতে এসেছেন উপ–রাষ্ট্ৰপতি জগদীপ ধনকড়। আইআইটি গুয়াহাটিতে দুটি অনুষ্ঠানে অংশগ্ৰহণ করতে আজ মঙ্গলবার সকালে সস্ত্রীক এসেছিলেন উপ-রাষ্ট্রপতি। বিমানবন্দর থেকে তিনি সোজা চলে যান নীলাচল পাহাড়ে কামাখ্যা মন্দিরে। সেখানে মায়ের পুজো দিয়ে চলে যান আইআইটিতে।
উল্লেখ্য, আজ মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় বায়ুসেনার উড়ানে গুয়াহাটির বড়ঝাড়ে গোপীনাথ বরদলৈ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন সস্ত্রীক উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। বিমানবন্দরে তাঁদের উষ্ণ স্বাগত জানান রাজ্যপাল গুলাবচান্দ কাটারিয়া, মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা, গুয়াহাটির সাংসদ কুইন ওজা, মন্ত্ৰী অতুল বরা, বিজেপির প্রদেশ সভাপতি ভবেশ কলিতা, মেয়র মৃগেণ শরণিয়া এবং সাধারণ ও পুলিশ পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।