দুর্গাপুর, ২৬ জুন (হি. স.) কয়েকদিন পরই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে অশান্তির দগ দগে ঘা এখনও রাজ্যবাসীর চোখে মুখে আতঙ্কের প্রভাব রয়েছে। আর তাই নির্বাচনের আগে শিল্পাঞ্চলে কড়া নজরদারি তৎপর হল আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট পুলিশ। রবিবার রাত্রে কেন্দ্রীয়বাহিনীর রুটমার্চের অন্ডাল ও পান্ডবেশ্বরে পুলিশের জালে ধরা পড়ল ৪ সশস্ত্র দুস্কৃতী। সোমবার ধৃতদের দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন খারিজ করে দেন। ঘটনাকে ঘিরে বিস্তর শোরগোল পড়েছে গোটা শিল্পাঞ্চলজুড়ে।
ঘটনায় জানা গেছে, রবিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অন্ডালের সিঁদুলি ডোম পাড়ায় হানা দেয় পুলিশ। সেখান তল্লাশী চালিয়ে তিন সশস্ত্র দুস্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের নাম শামীম আনসারী সিঁদুলি ডোমপাড়ার বাসিন্দা।
ইউসুফ শেখ দুর্গাপুর চাষি পাড়ায় ঘাটি করেছিল। মুল বাসিন্দা উত্তর ২৪ পরগনা। এছাড়াও আরও একজন জিতেন্দর প্রসাদআসানসোল নর্থ থানার বাসিন্দা। জিতেন্দ্র প্রসাদ পুলিশের খাতায় কুখ্যাত দুষ্কৃতী। আসানসোল নর্থ থানায় একটি বোমাবাজির ঘটনায় তার পাঁচ বছর সাজা হয়েছিল।তিন বছর জেলও খেটেছে। করোনা আবহের সময় ছাড়া পেয়েছিল। ধৃতদের কাছ থেকে পুলিশ একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও তিন রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান অস্ত্র কেনাবেচার উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতীরা জড়ো হয়েছিল। অন্যদিকে রবিবার রাত্রে পান্ডবেশ্বরের অজয় সেতুর ওপর পুলিশের নাকা চেকিং চলছিল। ওইসময় একটি দেশী পাইপগান ও এক রাউন্ড কার্তুজসহ একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের নাম ইন্দ্রনীল চ্যাটার্জী।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারী গোপনসুত্রে খবর পেয়ে অন্ডালের বহুলার ভিখারি ধাওড়া এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। তল্লাশীতে দেশী পাইপগানসহ দুই দুস্কৃতি পুলিশের জালে ধরা পড়ে। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, ধৃতদের নাম জয় দাস (১৯) ও দেবু মেহরা (২০) । তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি গুলি ভর্তি পাইপ গান ও দুটি থ্রি নট থ্রি কার্তুজ।
উল্লেখ্য, সিমান্তবর্তী নাকা চেকপোষ্টে নজরদারিতে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা। পাণ্ডবেশ্বরের অজয় নদীর ব্রিজে বসানো রয়েছে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা। অজয় নদীর প্রান্তে পশ্চিম বর্ধমান, অন্যপান্তে বীরভূম। দুই সীমান্তবর্তী জেলার মাঝে অজয় সেতুর সামনে রয়েছে নাকা চেকিং পোষ্ট । সীমান্তে নজরদারি রাখার জন্য এই নাকা চেকিং পোস্ট টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাচার ও দুষ্কৃতীমূলক কার্যকলাপ করে সহজেই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গিয়ে অপরাধীদের পক্ষে গা ঢাকা দেওয়া সহজ। ফলে সর্বদা ওই নাকা চেকিং এ তৎপর থাকতে হয় পুলিশ আধিকারিকদের। গত ফেব্রুয়ারী মাসে সেখানে একটি এএনপিআর ক্যামেরা লাগানো হয়। মুলত আসা-যাওয়ার পথে সমস্ত গাড়ির নাম্বার ক্যামেরা বন্দি করে রাখার জন্য ও কড়া নজরদারির জন্যই ওই ক্যামেরা। জানা গেছে, এএনপিআর ক্যামেরাটি অত্যাধুনিক ও স্বয়ং সক্রিয়। ৫ থেকে ১৪০ কিমি গতিবেগের যে কোন গাড়ির নম্বর সহজেই এই ক্যামেরায় বন্দি হয়। ফলে পাচার অথবা অপরাধমূলক কাজ করে কোন গাড়ি সীমান্ত পেরিয়ে গেলে পরে সেই নাম্বার দেখে গাড়িকে চিহ্নিত করা সহজ হয় বলে দাবি পুলিশ আধিকারিকদের। উল্লেখ্য, আর কয়েকদিন পরই পঞ্চায়েত ভোট। মনোনয়ন পর্ব মিটতেই জোরকদমে প্রচারপর্ব শুরু হয়েছে। অন্ডালের কাজী নজরুল ইসলাম বিমাননগরীর একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী জওয়ানদের। এছাড়াও অন্ডালের খাস কাজোড়া হাই স্কুল ও অন্ডাল মোড়ের কাছে একটি স্কুলে থাকার ব্যবস্থা থাকছে এই বাহিনীর জওয়ানদের। জানা গেছে, আপাতত শিলিগুড়ি থেকে এক কোম্পানি বাহিনী এসে পৌঁছেছে। সোমবার কাঁকসার বামুনাড়ায় কেন্দ্রীয়বাহিনীর রুট মার্চ শুরু হয়। তারপর সেখান থেকে অন্ডাল ও পান্ডবেশ্বরে যাবে কেন্দ্রীয় আধা সামারিক বাহিনী তার আগে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
বিজেপি নেতা অমিতাভ ব্যানার্জী বলেন,” গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদলের সন্ত্রাস মানুষ দেখেছে। বিধানসভা নির্বাচনের পরও মানুষ শাসকদলের সন্ত্রাস দেখেছে। মানুষ তৃণমূলের হাত থেকে পরিত্রান চাইছে। আর তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে তৃণমূল আশ্রিত দুস্কৃতিরা সন্ত্রাস করতে অস্ত্র মজুত করছে। আমাদের দাবী, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করা হোক।” যদিও বিজেপির সমসৃত অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের দাবী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর রাজ্যের মানুষের ভরসা আছে। তাই তৃণমূলের সঙ্গে আছে মানুষ। বিজেপি মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
সোমবার ধৃতদের দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন খারিজ করে দেন। পুলিশ জানিয়েছে,” কি উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ধৃতরা ঘুরছিল, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।