BRAKING NEWS

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুপ্রেরণা ও দক্ষ নেতৃত্বে আগামীদিনে ত্রিপুরা বিকাশের পথে আরও এগিয়ে যাবে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ মে৷৷  রাজ্য সরকার ২০৪৭ পর্যন্ত রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের রূপরেখা নির্দিষ্ট করে ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি পূর্নরাজ্য দিবস উপলক্ষে ’লক্ষ্য-২০৪৭’ শীর্ষক ভিশন ডকুমেন্ট প্রকাশ করেছে৷ রাজ্যে শিল্পের বিকাশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, রাবার, চা, বাঁশ ভিত্তিক শিল্প, হস্তশিল্প, ক’ষি ও উদ্যান ফসল ভিত্তিক অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজেসের (এমএসএমই) ইউনিটগুলিকে রাজ্য সরকার সহায়তা দিচ্ছে৷ কেননা এমএসএমই ক্ষেত্রের উন্নয়ন বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যের সম্পসারণে সহায়তা করছে৷ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুপ্রেরণা ও দক্ষ নেত’ত্বে আগামীদিনে ত্রিপুরা বিকাশের পথে আরও এগিয়ে যাবে৷ আজ নয়াদিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন৷ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিবগণ ও নীতি আয়োগের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷
নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, উল্লিখিত এমএসএমইগুলির জন্য মূলধনী ভর্তুকী, কমখরচে বিদ্যৎ ইত্যাদি সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে ’ত্রিপুরা ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন ইনসেনটিভ স্কিম (টিআইআইপিআইএস) ২০২২’-এর অধীনে৷ ত্রিপুরাকে দেশের মধ্যে আগর বাণিজ্যের হাব হিসেবে গড়ে তুলতে এবং ২০২৫-র মধ্যে ২০০০ কোটি টাকা মূল্যের আগর অর্থনীতির সুুযোগ নিতে রাজ্য সরকার ’ত্রিপুরা আগরউড পলিসি-২০২১’ প্রকাশ করেছে৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার বিনিয়োগ বাড়াতে এবং কর্মসংস্থানের সুুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে উন্নয়নমুখী প্রশাসন চালাতে অঙ্গিকারবদ্ধ৷ সরকার ইতিমধ্যে উৎপাদন নির্ভর শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ টানতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে৷ সেই উদ্দেশ্যেই ’স্বাগত’ পোর্টালের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিনিয়োগের প্রস্তাবগুলিকে ’সিঙ্গল উইণ্ডো সিস্টেমে’ অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ এই পোর্টালে ১৭টি দপ্তরের ৬০টি পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে যাতে ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুমোদন তাড়াতাড়ি দেওয়া যায়৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার তার মূলধনী ব্যয় ২০২০-২১-এর ৮৩৫.০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০২২-২৩ বছরে ২২০০ কোটি টাকা করেছে অর্থাৎ বার্ষিক বৃদ্ধি হয়েছে ৬২ শতাংশ৷ নর্থ-ইস্ট গ্লোব্যাল ইনভেস্টস সামিট-২০২৩-এর প্রাক্কালে রাজ্য সরকার ডোনার মন্ত্রকের সাথে মিলে রাজ্যে বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে খতিয়ে দেখতে একটি গোল টেবিল সম্মেলন করেছে৷ এই সম্মেলনের ফলে দেশী ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সাথে ৩৩৮.০০ কোটি টাকা মূল্যের মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ শিল্পোন্নয়নের জন্য ২ হাজার একর জমি চিহ্ণিতকরণ, পিপিপি প্রকল্প, বিশেষ আর্থিক জোন স্থাপন ইত্যাদি উদ্যোগ ও রাজ্য সরকার নিয়েছে এবং রাজ্যের ১৫টি শিল্প নগরীয় উন্নয়নের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও ঋণ দিতে রাজি হয়েছে৷ বিমান যাত্রীদের সুুবিধার্থে রাজ্য সরকার এভিয়েশন টার্বাইন ফিউল-এ ১ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে দিয়েছে৷
নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগরতলা-চ-গ্রামের মধ্যে বিমান পরিষেবাকে উৎসাহ দিতে রাজ্য সরকার বার্ষিক ১৪ কোটি টাকা ভর্তুকী দিয়েছে৷ বিজনেস রিফর্মস অ্যাকশন প্ল্যান (বিআরএপি) ২০২০-র রিপোর্টে ত্রিপুরাকে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রগতিশীল শ্রেণীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে এবং বাণিজ্যিক সুুযোগ-সুুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ে রাখা হয়েছে৷ সরকারের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস নীতিকে আইনী সমর্থন দেওয়ার লক্ষ্যে ’ত্রিপুরা ইণ্ডাস্ট্রীজ (ফ্যাসিলিটেশন) অ্যাক্ট ২০১৮’ প্রনীত হয়েছে৷ তেমনি ’দ্য ত্রিপুরা গ্যারান্টিড সার্ভিসেস টু সিটিজেনস অ্যাক্ট ২০২০’-এর মাধ্যমে সময়মত পরিষেবা প্রদানের প্রচেষ্টা করা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ’মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য ত্রিপুরা রাজ্য পলিসি ২০২২’ রাজ্য প্রণয়ন করেছে৷ রাজ্যে মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, সরকারি চাকুরিতে রাজ্যে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ পদ সংরক্ষণ রাখা হয়েছে৷ ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসে শুধুমাত্র মহিলাদের নিয়ে একটি ব্যাটেলিয়ান গঠন করা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহিলাদের আর্থিক দিক দিয়ে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে এবং তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার মহিলাদের নিয়ে স্বসহায়ক দল গঠনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে৷ তিনি বলেন, গ্রামীণ গরিব অংশের ৪,১৬,২৯২ জন মহিলা ৪৬,৪৭৫টি মহিলা স্বসহায়ক দল, ১,৯৫০টি ভিলেজ অর্গানাইজেশন ও ৮৮টি ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশনের (সিএলএফ) সাথে যুক্ত রয়েছেন৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলি মহিলা স্বসহায়ক দলগুলির প্রয়োজনীয়তাকে মেটানোর জন্য ৪০১.৯০ কোটি টাকা রিভলভিং ফাণ্ড (আরএফ) হিসেবে এবং কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফাণ্ড (সিআইএফ) হিসেবে ম’র করেছে৷ এছাড়া মহিলা স্বসহায়ক দলগুলি যাতে বিভিন্ন বৃত্তিমূলক কাজে অংশ নিতে পারে সেজন্য এই দলগুলিকে ৭২৪.৯২ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনাথ, শিশু এবং মায়েদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে, তাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে, নিরাপদ প্রসব সুুনিশ্চিত করা, অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনা ও রক্তাল্পতার হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার অবিরাম কাজ করে চলেছে৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী মাত্র পুষ্টির উপহার নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করেছে যাতে ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের (ডিবিটি) মাধ্যমে প্রত্যেক গর্ভবতি মহিলাকে চার কিস্তিতে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে৷ রাজ্য সরকার এছাড়াও প্রথম সন্তানের জন্মের জন্য গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এবং তাদের স্বাস্থ্যের অন্যান্য বিষয়ের দিকে নজর রেখে প্রধানমন্ত্রী মাত্র পুষ্টি বন্দনা যোজনা রূপায়ণ করছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিশুরা যাতে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার পেতে পারে সেই লক্ষ্যে চিফ মিনিস্টারস পোষণ অভিযানের মাধ্যমে নজর রাখা হচ্ছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় দক্ষতা এবং পরম্পরার বিকাশ ও সংরক্ষণে রাজ্য সরকার ব্যাপকভাবে ’ভোক্যাল ফর লোক্যাল’ নীতি প্রচার করে চলেছে৷ স্থানীয় উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সম্পদকে ব্যবহার করে ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নেওয়ার লক্ষ্যেই এই নীতির ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য শিল্পক্ষেত্রে যেসব কাজের বা পেশার চাহিদা রয়েছে সেগুলিকে চিহ্ণিত করার জন্য রাজ্যে একটি ’স্কিল গ্যাপ স্ট্যাডি’ শীর্ষক সমীক্ষা করা হয়েছে৷
এই সমীক্ষা করা হয়েছে রাজ্যের যেসমস্ত প্রাক’তিক সম্পদ পাওয়া যায় সেগুলির উপর নির্ভরশীল শিল্পগুলিতে৷ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটকদের কাছে রাজ্যকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে রাজ্য সরকার একটি সার্বিক পরিকল্পনা নিয়েছে৷ সেজন্য ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ এই লক্ষ্যে রাজ্যের সর্বত্র উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পর্যটকদের জন্য থাকার জায়গার ব্যবস্থা করা, পর্যটন কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ আয়ুর্বৈদিক পার্ক, প’কর্ম কেন্দ্র, যোগ ব্যায়াম ও ওয়েলনেস কেন্দ্র, নেচারোপ্যাথি কেন্দ্রের মতো পরিকাঠামো গড়ে তুলে ত্রিপুরাকে একটি চিকিৎসা কেন্দ্রিক সুুস্বস্থ্যের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে রাজ্য সরকার ’ত্রিপুরা মেডিক্যাল ট্যুরিজম পলিসি’ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পিএম গতিশক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজ্যকে ’ফার্স্ট মুভার’ রাজ্য হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ এই প্রকল্পে ১০৯.১৯ কোটি টাকা মূল্যের ৮টি প্রকল্প চিহ্ণিত করে অর্থ ম’রির জন্য ভারত সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব ইণ্ডাস্ট্রি এণ্ড ইন্টারনেল ট্রেডের (ডিপিআইআইটি) কাছে পাঠানো হয়েছে৷ এর মধ্যে ৪টি প্রকল্পের জন্য ৩৫ কোটি টাকা ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রকের অধীন ব্যয় দপ্তরের ম’রি পাওয়া গেছে৷ দ্য ত্রিপুরা ইন্টিগ্রেটেড লজিস্টিক পলিসি-২০২২ তৈরি করা হয়েছে এবং ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি তা বি’াপিত হয়েছে৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *