BRAKING NEWS

বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ হয়েছে, অসমে এবার নিষিদ্ধ হবে বহুবিবাহ, ২৪ মাসের কর্মকাণ্ডের খতিয়ান উপস্থাপন করে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীরএ বছর থেকে রাজ্যে কার্যকর হবে জাতীয় শিক্ষানীতি

আগামী জুনে আরও ১০ হাজার নিয়োগ, এক লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি পূরণ হতে যাচ্ছে
গুয়াহাটি, ৯ মে (হি.স.) : অসমে ইতিমধ্যে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ হয়েছে। এবার নিষিদ্ধ হবে বহুবিবাহ। আজ মঙ্গলবার তাঁর সরকারের ২৪ মাসের কর্মকাণ্ডের খতিয়ান উপস্থাপন করে এই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

আজ ৯ মে হিমন্তবিশ্ব শর্মা নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোট সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে গুয়াহাটির খানাপাড়ায় কইনাধরা পাহাড়ে রাজ্য অতিথিশালায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ২৪ মাসে তাঁর সরকার কর্তৃক গৃহীত নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প এবং নয়া নীতি প্রবর্তন সম্পর্কিত বিস্তৃত তথ্য দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ড. শর্মা বলেন, অসমে ইতিমধ্যে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ হয়েছে। বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতারি তিন গুণ বেড়েছে। এজন্য রাজ্যে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। এবার বহুবিবাহ প্রথা নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। বলেন, গোটা দেশে এখনও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউনিফর্ম সিভিল কোড)-র প্রচলন হয়নি। তবে রাষ্ট্রীয় নীতির নির্দেশমূলক নীতির সাথে সম্পর্কিত মুসলিম পার্সনাল ল (শরীয়ত), ১৯৩৭-এর ধারা ২৫ যাচাই করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করবেন। কমিটি সব ধর্মের বিশেষজ্ঞ, সমাজকর্মীর সঙ্গে কথা বলে তাদের পরামর্শ দেবে। এর ভিত্তিতে সরকার ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, আমরা আইনগতভাবে এই প্ৰথা বন্ধ করব। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চার-চারটি বিয়ে সাংবিধানিকভাবে অন্যায়। এটা বন্ধ করা প্রয়োজন। এই উদ্যোগ কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়।
এর পরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের প্রথম লক্ষ্য হলো, রাজ্যে শান্তির পরিবেশ তৈরি করা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বড়ো, কারবি, ডিমাসা প্ৰভৃতি আদিবাসী উগ্ৰপন্থী সংগঠনগুলির সাথে পৃথক পৃথক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তিগুলি সারা দেশে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে।’ এ প্ৰসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি ২০২৩ সালে আমাদের সরকারের লক্ষ্য রাজ্যের পাঁচটি জেলায় শান্তি ফিরিয়ে এনে সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইন (আফসপা) সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা। আগামীকাল থেকে শুরু হবে আমার সরকারের তৃতীয় বছর। তৃতীয় বছরে একেই বিশেষ চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমরা গ্রহণ করেছি।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এক লক্ষ চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আমরা পূরণ করতে যাচ্ছি। এর সম্পূর্ণ তথ্য সৰ্বজনীন করব আমরা। আগামী ২৬ মে ৪৫ হাজার প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, আগামী জুনে আরও ১০ হাজার নিয়োগ দেওয়া হবে।
হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা বলেন, রাজ্যে দুর্নীতি এখন আর কোনও সমস্যা নয়। কারণ এখন সব কাজ সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন আর থানায় যাওয়ার দরকার নেই। কেবল পুলিশ অ্যাপ-এর মাধ্যমে এফআইআর করতে পারবেন ভুক্তভোগী। এছাড়া পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্যও থানায় যাওয়ার দরকার নেই। অ্যাপের মাধ্যমেই সব কাজ হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমস্ত সরকারি কাজ ঘরে বসেই ডিজিটালি উপলব্ধ করতে কাজ চলছে। এভাবে ড. শর্মা সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের তথ্য তুলে ধরেন।
রাজ্যের কৃষিক্ষেত্র প্ৰসঙ্গে তিনি রাজ্যে ধান ক্রয়, গুদাম নির্মাণ এবং রাইস মিল স্থাপনের কথা বলেছেন ড. শর্মা। তিনি জানান, এবার ৫ লক্ষ ২৫ হাজার কুইন্টাল ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী বছর ১০ লক্ষ কুইন্টাল এবং আগামী পাঁচ বছরে ২০ লক্ষ কুইন্টাল ধান কেনার লক্ষ্য রয়েছে তাঁর সরকারের। তিনি বলেন, রাজ্যকে সরিষার তেলেও স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সরকারিভাবে বাজরা সংগ্রহ করা হবে।
হিমন্তবিশ্ব বলেন, আগামী ১ জুন থেকে দুগ্ধের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে দুধ ক্রয়ের জন্য কৃষকদের অতিরিক্ত ৫ টাকা দেবে সরকার। অসমে ডায়েরির একটি বড় ব্র্যান্ড তৈরির প্রচেষ্টার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, যে কোনও সমবায় সমিতি কৃষকদের কাছ থেকে দুধ কিনবে, কিন্তু ব্র্যান্ডের নাম একই থাকবে। রাজ্যে আমুল বা নন্দিনী স্তরের ব্র্যান্ড তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, জানান মুখ্যমন্ত্রী।
আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে নারী নির্যাতন, সম্পত্তির বিরুদ্ধে অপরাধের প্রতি নজর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ড. শর্মা বলেন, আজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বহু এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘রাজ্যে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার বাড়াতে হবে। আগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার ছিল ৪ থেকে ৬ শতাংশ, আমরা তা ১৪ শতাংশে নিয়ে আসতে পেরেছি।’ বলেন, একে জাতীয় গড় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য সরকারের। আসাম পুলিশ সাইবার ও ফরেনসিক বিষয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কথা বলেছে। তিনি জানান, সুপারি ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতম পদক্ষেপ নিয়েছে তাঁর সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে স্বাস্থ্য খাতে নতুন পদক্ষেপ গ্ৰহণ করা হয়েছে। শীঘ্রই তিনসুকিয়া মেডিক্যাল কলেজ চালু হবে। পাশাপাশি করিমগঞ্জের রাতাবাড়ি এবং শিবসাগরে প্রস্তাবিত মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের কথা বলেন তিনি। ড. শৰ্মা জানিয়েছেন, রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে এমএসসি, বিএসসি নার্সিং কলেজ খোলা হবে। এগুলো একটি বিদেশি ভাষা এবং উপ-দক্ষতার প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। রাজ্যে বিশ্বস্তরের নার্স তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন করা হবে।
তিনি বলেন, রাজ্যের প্রতিটি রেশন কার্ডধারীকে মুখ্যমন্ত্রী আয়ুষ্মান যোজনার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এর মাধ্যমে সব ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার ব্যবস্থা থাকবে।
শিক্ষাক্ষেত্র প্ৰসঙ্গে তিনি বলেন, রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের অনেক ভালো অগ্রগতি হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিকে আধুনিকায়ন করা হবে। তৈরি করা হবে ৪০টি নতুন কলেজ। পাশাপাশি তিনি সৈনিক সোসাইটির অধীনে আরও পাঁচটি স্কুল খোলার কথাও বলেন। মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, সৈনিক স্কুলের খরচ কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার বহন করে। তবে, সৈনিক সোসাইটির অধীনে যে পাঁচটি স্কুল খোলা হবে, তার পুরো খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে, যা কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে।
এ বছর থেকে রাজ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী। জানান, এর আওতায় চার বছর মেয়াদি ইন্টিগ্রেটেড ডিগ্রি কোর্স চালু করা হবে। এর আগে ঘোষিত ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে সংসদে নতুন আইন পাস হবে। এছাড়া অসমে নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মাণের কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের পরিকাঠামো সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গুয়াহাটিতে রিং রোড, গোলাঘাট-গহপুরে ব্রহ্মপুত্রের উপর একটি সেতু এবং কাজিরঙা জাতীয় উদ্যানে একটি উন্নত করিডোর তৈরি করা হবে। তবে ইস্ট-ওয়েস্ট করিডোর এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে শেষ হবে জানিয়ে তিনি জানান, একই সঙ্গে নদীবাঁধের উন্নয়নেও দ্রুত কাজ চলছে।
তিনি বলেন, আর্থিক পরিবেশ উন্নয়নে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এর আওতায় জাইকা এবং এডিবির সঙ্গে আরও ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির আরও ভালো বাস্তবায়ন রাজ্যকে আর্থিকভাবে অনেক সাহায্য করেছে। যার দরুন রাজ্যের পরিকাঠামো দ্রুত বিকাশ হচ্ছে।
নারীর ক্ষমতায়নের ওপর জোর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা জানান। তিনি বলেন, এ বছর অরুণোদয় যোজনার আওতায় ২৭ লক্ষ নতুন সুবিধাভোগী যুক্ত হবে। এখন থেকে তাঁদের প্রতি মাসে ১৪ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। ক্ষুদ্র অর্থ ঋণে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ লক্ষ মহিলাকে তাঁদের ঋণের জন্য সরকার ছাড় দিয়েছে, জানান তিনি। এই দফায় ১০ লক্ষ মহিলাকে তাঁদের ঋণের টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে এনওসি দেওয়া হবে।
চড়াইদেও মৈদামকে ইউনেস্কোয় অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, দুই মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এর রূপরেখা তৈরি করবেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, চা চাষের দু বছর পূর্ণ হলে একে উৎসব হিসেবে পালন করবে সরকার।
শ্রীমন্ত শংকরদেব জয়ন্তী পালনের পাশাপাশি গোয়ালপাড়িয়া সংগীতশিল্পী প্রতিমা বরুয়া পাণ্ডের বাসভবন সংরক্ষণের কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, আগামীকাল মাধবদেব কলাক্ষেত্রের উদ্বোধন হবে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, এ বছরই কামাখ্যা করিডোর নির্মাণের কাজ শুরু হবে। প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গেছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার ২৪ মাসের মেয়াদের উপর ভিত্তি করে একটি স্মরণিকাও আজ প্রকাশ করা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে পরিষদীয় মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি, অতুল বরা, রঞ্জিতকুমার দাস, উর্খাও গৌরা ব্রহ্মস প্রমুখ হিমন্তবিশ্ব শর্মার মন্ত্রিসভার সকল সহকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *