ফলং (অসম), ৮ মে (হি.স.) : অসমের অন্যতম পাহাড়ি জেলা ডিমা হাসাওয়ের সদর শহর হাফলঙের চারিদিকে এখন পানীয় জলের জন্য হাহাকার পরিস্থিতি। জলের তীব্র সংকটে হাফলং শহরের নাগরিকরা নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ হাফলং শহরের বিভিন্ন এলাকায় গত আড়াই তিন মাস থেকে পানীয় জল সরবরাহ করেনি।
সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এক সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, বৃষ্টি না হওয়ার জেরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের উৎসস্থলগুলি শুকিয়ে গেছে। তাই শহরে পানীয় জল সরবরাহ করতে পারছে না জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ। এই অবস্থায় বৃষ্টি না হলে হাফলং শহরে জল সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তাই ভগবানই একমাত্র ভরসা বলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছিলেন।
ইঞ্জিনিয়ারের কথামতো এবার সত্যি সত্যি বৃষ্টির জন্য পূজার্চ্চনা শুরু করেছেন হাফলং শহরের নাগরিকরা। জলের সমস্যা নিরসনে এবার ভগবানের দ্বারস্থ হলেন হাফলং শহরের নাগরিকরা। গত বছর এই মে মাসেই প্রচণ্ড বৃষ্টির দরুন ডিমা হাসাও জেলা প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছিল। কিন্তু এবার বৃষ্টির অভাবে এক ফোটা জলের জন্য হাহাকার করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে হাফলঙে বৃষ্টি নেই। যার দরুন জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের উৎসস্থলগুলি যে ভাবে শুকিয়ে গেছে ঠিক সে ভাবে পাহাড়ি নদীতে জল শুকিয়ে গেছে। কিন্তু হাফলং শহরে বছরের পর বছর ধরে যে ভাবে জলের সংকট বাড়ছে এতে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। কারণ ডিমা হাসাও জেলায় যে ভাবে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে, যে ভাবে গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে এতে সমস্যা বাড়ছে।
তাছাড়া পাহাড়ি নদীগুলি থেকে যেভাবে পাথর তুলে বাইরে পাচার করা হচ্ছে এতেও সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করছে। পাহাড়ি নদী থেকে পাথর প্রায় নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। তাই নদীগুলি জল ধরে রাখতে পারছে না। তাছাড়া এভাবে প্রকৃতির সঙ্গে অত্যাচার চালানোয় এর প্রভাব জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর পড়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। যার দরুন পাহাড়ে বৃষ্টির মাত্রা কমে গেছে। আর এভাবে যদি প্রকৃতির ধ্বংসলীলা চলতে থাকে তা-হলে আগামী দিনে হাফলঙে জলের অভাবে যে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হবে তা এক প্রকার নিশ্চিত।
এদিকে হাফলং শহরে জলের অভাব দেখা দেওয়ায় এবার সাধারণ নাগরিকরা জল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু এতেও সমস্যা, টাকা দিয়েও জল মিলছে না। জল কিনতে হলে যারা গাড়ি দিয়ে জলের ব্যবসা করছে তাদের পাঁচ থেকে সাতদিন আগে জলের জন্য জানাতে হয়। তার পরই বহু কষ্টে মিলছে জল। তা-ও আবার চড়া দামে। এখন হাফলং শহরে প্রতি আড়াই হাজার জল কিনতে হচ্ছে ১২শো থেকে ১৩শো টাকায় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই অবস্থায় এখন হাফলং শহরে জলের ব্যবসা চলছে রমরমিয়ে।