কলকাতা, ২৪ এপ্রিল (হি. স.) : পশ্চিমবঙ্গে উচ্চশিক্ষামন্ত্রীর কাছে আসন্ন শিক্ষাবর্ষে চার বছরের স্নাতক কার্যক্রম চালু করা প্রসঙ্গে একটি চিঠি দিয়েছে সারা বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (আবুটা)।
আবুটার সাধারণ সম্পাদক গৌতম মাইতি জানান, সোমবার পাঠানো এই চিঠিতে লেখা হয়েছে, “জাতীয় শিক্ষানীতি (২০২০) অনুসারী ইউজিসি ‘কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’ এর ভিত্তিতে চার বছরের আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রাম আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু করার জন্য অতি তৎপরতা আমাদের চোখে পড়ছে। ছাত্রদের ‘পছন্দ’, ‘মাল্টিডিসিপ্লিনারি কোর্স,” ‘মাল্টিপল এন্ট্রি এবং এক্সিট’, ইত্যাদির কথা বলে চার বছরের এই সাম্মানিক পাঠ্যক্রম চালু হলে প্রান্তিক স্তরের ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশের পথ রুদ্ধ হবে। ড্রপ আউট বাড়বে।
অনার্সে বিভিন্ন শাখার একাধিক সঙ্গতিহীন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু, মূল বিষয়গুলির ক্রেডিট পয়েন্ট যথেচ্ছভাবে হ্রাস করে সেগুলিকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। যা সুসংহত জ্ঞানচর্চার পরিপন্থী। মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে বৃত্তিমূলক কোর্সগুলির সংযোজিত করে সমগ্র উচ্চ শিক্ষা অনানুষ্ঠানিক বৃত্তিমূলক শিক্ষার স্তরে নামিয়ে আনা হয়েছে।
অন্যদিকে, স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স কোর্সগুলিকে সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন করে দেওয়া হয়েছে। তাদের সময়কাল দুই বছর থেকে কমিয়ে মাত্র এক বছর করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বৌদ্ধিক বিকাশ ব্যাহত হবে। শিক্ষার গুনমানও ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে।
এ সবই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসনের ওপর সরাসরি আক্রমণ। সেইসাথে শিক্ষকদের পাঠ্যক্রম তৈরি করার অধিকারে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ। শিক্ষার এই নয়া মডেলের কোনও একাডেমিক ন্যায্যতা প্রমান করা যাবেনা। এটা শিক্ষার কর্পোরেটাইজেশনের একটি নকশা, যা সময়-পরীক্ষিত রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেবে।
শিক্ষক নিয়োগ এতদিন বন্ধ রয়েছে। নয়া শিক্ষাক্রম চালু হলে শিক্ষকদের বিদ্যমান কাজের চাপ ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে, যা শেষ পর্যন্ত শিক্ষকদের অপ্রয়োজনীয় করে তুলবে।
আমরা আরও মনে করি যে এই নয়া স্কীমের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, বিধি, অর্ডিন্যান্স, রেগুলেশনস, ছুটি ও অবকাশের নিয়ম, ইত্যাদির ব্যাপক সংশোধন দরকার হবে। এ পদক্ষেপগুলির জন্য রাজ্য সরকারের পূর্বানুমতি প্রয়োজন। সেইসঙ্গে চাই প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ এবং শক্তিশালী পরিকাঠামো, যার জন্যও সরকারের সম্মতি প্রয়োজন। কিন্তু এ বিষয়ে রাজ্য সরকার তাদের অবস্থান এখনো স্পষ্ট করেনি।
তা সত্বেও, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কীভাবে এই স্কিম চালু করার জন্য এত তৎপর পদক্ষেপ নিচ্ছে? আমরা দৃঢ়ভাবে দাবি করছি চার বছরের স্নাতকোত্তর অনার্স কোর্স চালু করার জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, এ বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের মতামত নেওয়া হোক।”