ককবরক ভাষার পরীক্ষা নির্দিষ্ট হরফে লিখতে বাধ্য করা নিয়ে বিধানসভায় প্রতিবাদের ঝড় তিপরা মথার, ১০ মিনিটের জন্য সভা মুলতবি

আগরতলা, ২৮ মার্চ (হি. স.) : ককবরক ভাষা পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট হরফে লিখতে বাধ্য করা নিয়ে আজ বিধানসভায় প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন তিপরা মথার বিধায়কগণ। শিক্ষা দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক(ডা:) মানিক সাহা ওই বিষয়টি নিয়ে তদন্তক্রমে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি সত্বেও তাঁরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ফলে, তুমুল হৈ হট্টগোলের জেরে অধ্যক্ষ বাধ্য হয়ে ১০ মিনিটের জন্য সভা মুলতবি ঘোষণা দেন।
আজ বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা ২০২৩ সালের ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত উচ্চ মাধ্যমিকের ককবরক ভাষার পরীক্ষায় নির্দিষ্ট হরফে লিখতে বাধ্য করা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশ আনেন। ওই নোটিশের জবাবে শিক্ষা দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক(ডা:) মানিক সাহা বলেন, গত ১৭ এবং ১৮ মার্চ ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত উচ্চতরমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষার ককবরক ভাষা বিষয়ের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এই পরীক্ষায় নির্দ্দিষ্ট একটি হরফে উত্তরপত্র লেখার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের বাধ্য করা হয় বলে একটি সংবাদ কিছু সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে হরফ ব্যবহার করা সম্পর্কে অভিযোগ নিয়ে খোঁজখবর করে ওই সংবাদের কোনো সত্যতা পাওয়া যায় নি ।
সাথে তিনি যোগ করেন, তাছাড়াও বিষয়টি নিয়ে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অভিমত চাওয়া হয়েছে। তাতে জানানো হয়েছে, পর্ষদ শুরু থেকেই ককবরক ভাষার প্রশ্নপত্র বাংলা হরফে তৈরী করে আসছে এবং দেখা গেছে পরীক্ষার্থীরাও এই বিষয়ের উত্তরপত্র লেখার সময় বাংলা হরফই ব্যবহার করছে। তবে গত বছর ২০২২ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষার ককবরক ভাষার উত্তরপত্র মূল্যায়ণের সময় দেখা গেছে মাধ্যমিকে মোট ৩২৩৫ জন ককবরক ভাষার পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৫৫ জন এবং উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষার ককবরক ভাষার মোট ২৬০৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৪৫ জন উত্তরপত্র লেখার সময় রোমান হরফ ব্যবহার করেছিল। তাতে মাধ্যমিক ও উচ্চতর মাধ্যমিক মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে মাত্র ১.৭১% পরীক্ষার্থী রোমান হরফ ব্যবহার করে উত্তরপত্র লিখেছিল। পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে রোমান হরফ ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রও যথারীতি সমান গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ণ করা হয়েছিল, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর সাফ কথা, ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে ককবরক ভাষার পরীক্ষার উত্তরপত্র লেখার সময় পরীক্ষার্থীরা কোন হরফ ব্যবহার করবে এ সম্পর্কে বিগত বছরের মতো এবছরও তাদের ওপর কোন চাপ ছিল না। তবুও ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করা হবে।
কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর এই জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিপরা মথার বিধায়কগণ। বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা বলেন, তৈদু উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক স্বপন কলই রোমান হরফে উত্তরপত্র লেখা যাবে না বলে পরীক্ষার্থীদের সাফ জানিয়েছেন। ফলে, পরীক্ষার্থীরা খালি উত্তরপত্র জমা দিয়েছে। এমন ৪৫ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা পুণরায় নেওয়ার জন্য তিনি দাবি জানিয়েছেন। এই বিষয়েই অম্পিনগরের বিধায়ক পাঠান লাল জমাতিয়া দাবি করেন, তিনি খবর সমস্ত কিছুর খোঁজ নিয়েছেন। লিখিত নির্দেশনামা ছাড়াই পরীক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট হরফে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়েছে।
এদিকে, সিবিএসই পরিচালিত ককবরক ভাষা পরীক্ষায় বাংলা হরফ ব্যবহার নিয়ে শিক্ষা দফতর থেকে চিঠি পাঠানোর বিরোধিতায় সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, ৩১ মার্চের মধ্যে ওই চিঠি বাতিল করে রোমান হরফেও পরীক্ষা দেওয়া যাবে জানানো না হলে সিবিএসই শুধুমাত্র বাংলা হরফ নথিভুক্ত করবে। ত্রিপুরায় নিয়মে রোমান এবং বাংলা উভয় হরফে পরীক্ষা দেওয়ার বিধান থাকা সত্বেও ওই চিঠির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। সিপিএমের পরিষদীয় দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরীও ওই সময় বিরোধী দলনেতার সমর্থনে উঠে দাড়ান। তাঁর বক্তব্য, অতি সত্বর ওই চিঠি বাতিল করে সিবিএসই-কে বাংলা এবং রোমান উভয় হরফের বিষয়ে জানানো হোক।
বিরোধীদের সমস্ত বিষয় শুনে মুখ্যমন্ত্রী তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু, তিপরা মথার বিধায়কগণ তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিরোধী দলনেতার নেতৃত্বে তিপরা মথার বিধায়কদের শ্লোগানে বিধানসভা অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ফলে, বাধ্য অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন ১০ মিনিটের জন্য সভা মুলতবি ঘোষণা দেন। অধিবেশন পুণরায় শুরু হওয়ার পর বিরোধী দলনেতা আবারও একই ইস্যুতে সোচ্চার হন। তখন পরিবহণ মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। এক্ষেত্রে তদন্ত ছাড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ভরসা করা উচিত হবে না। এরপর তিপরা মথার বিধায়কগণ বিষয়টি নিয়ে তরজা থামিয়ে দেন।