BRAKING NEWS

অনুব্রতহীন বীরভূমে পুরানো কর্মীদের সন্মান দিয়ে বাজিমাত করতে চাইছেন কাজল শেখ

বোলপুর, ১০ মার্চ (হি. স.) অনুব্রত যখন দিল্লিতে, তখন দলের বসে যাওয়া পুরানো কর্মীদের সন্মান দেওয়াই কাজল শেখের এখন তুরুপের তাস। জেলা জুড়ে এই তাস খেলেই পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের অন্দরে জনপ্রিয় বাড়ানোর কৌশল অতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। অন্যদিকে প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ‘অনুব্রত দাওয়াই’ থাকত। এবার সেই হাল কে ধরবে সেটাই সময়ের অপেক্ষা। যদিও কর্মীদের মনোবল বাড়াতে মরিয়া শতাব্দী-চন্দ্রনাথ।

এমনিতেই অনুব্রতহীন বীরভূমে আচমকাই দলের সাধারণ সদস্য থেকে সরাসরি দলের কোর কমিটিতে জায়গা পাকা করে দিয়ে গেছেন খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে দলের অন্দরে কাজল বিরোধীরাও আর টু শব্দ করতে পারছে না। উল্টে দলের কর্মসূচীতে কাজলের জেলা জুড়ে চরকি ঘোড়া দেখে অনেকেই অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে অস্বস্তিকর পরিবেশ চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ৩০ জানুয়ারি বীরভূম জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৭ জনের একটি কোর কমিটি গঠন করে দেন। বীরভূম জেলার কোর কমিটিতে রয়েছেন বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহা, বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী , বিধায়ক আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, সাংসদ শতাব্দী রায়, সাংসদ অসিত মাল ও নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখ। প্রত্যেক সপ্তাহে এই কোর কমিটির সদস্যদের বসে বৈঠক করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, এই নির্দেশের পর দেড় মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনও বৈঠকে বসেনি বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটি। একদা তৃণমূল বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে পরিচিত ছিলেন এই কাজল শেখের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা হয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত সদস্য । পাশাপাশি এক নাগাডে দলীয় কর্ম সূচীর আয়োজন করে নিচু তলার কর্মী দের বিপূল জন সমর্থন পাওয়া। তাই দায়িত্ব পেয়েই ইতিমধ্যেই একাধিকবার ফোঁস করেছে কাজল।

এদিকে বহু চেষ্টা করেও অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লি যাত্রা রোখা যায় নি। ফলে দলের অন্দরে ই চরম অস্বস্তি শুরু হয়েছে। দলীয় কর্মসূচী পালিত হলেও সব সময় কি হয় কি হয় ভাব।

কিন্তু এবার কি হবে!

এই আশঙ্কা ইতিমধ্যে দলের অন্দরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন, অনুব্রতহীন বীরভূমে কতটা প্রভাব পড়বে তা নিয়েই কিছুটা হলেও চিন্তিত জেলা নেতৃত্ব৷ যদিও, সেকথা মুখে স্বীকার করছেন না কেউ৷ তবে কর্মীদের মনোবল বাড়াতে মরিয়া শতাব্দী-চন্দ্রনাথ সকলেই ।

এবার অনুব্রতহীন বীরভূমের পঞ্চায়েত নির্বাচন। নেই ‘অনুব্রত দাওয়াই’৷ যে দিন অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হল তারপর থেকে কার্যত শুনশান বোলপুরে দলের জেলা কার্যালয়। যে কজন পার্টি অফিসে আনাগোনা করছে তাদের মুখে ও রা নেই। এতদিন না হয় অনুব্রতর দাপটে বিরোধীরা মুখ খুলতে পারত না, এই অভিযোগ ছিল। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের তৃণমূলের ফল কি হবে, কে হাল ধরনে সেটাই প্রশ্নের৷ এই সময়ের মধ্যেই কাজল কিন্তু ঘর গোছাতে শুরু করছে। ইতিমধ্যেই নানুর বিধানসভার এলাকার প্রতি টি ব্লক ঘরে ঘরে কর্মী সন্মেলন। পাশাপাশি অঞ্চল কমিটি, বুথ কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছে। বুথ কমিটি থেকে পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী নাম উঠে আসুক বলে নিচু তলার কর্মী দের বাড়তি ক্ষমতা দিতে শুরু করেছে কাজল। অঞ্চল ও বুথ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ও বর্তমান ও পুরোনো কর্মী দের সমান গুরুত্ব দিতে শুরু করায় দলের নিচু তলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। তবে দলের বিরুদ্ধে ফোঁশ করতে ছাড়ছেন না তিনি। এই সময় কে বলেন, “দলের সাধারণ কর্মী থেকে দলের কোর কমিটির সদস্য করেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার একটাই কারন আমি কোন দিন ধান্দা করে দল করি নি। কিন্তু প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল আজ ও কোর কমিটির বৈঠক হল না। তাই এবার দলের স্বার্থে খোদ দলনেত্রীর কাছে বিষয় টি জানাবো।”

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কোর কমিটিই নিজ নিজ এলাকায় সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখবেন ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে নেতৃত্ব দেবেন। তবে কোর কমিটির সদস্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “একটু অসুবিধা হবে৷ তবে পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে কোন প্রভাব পড়বে না৷ দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করি, মানুষের পালস বুঝি, সুবিধা-অসুবিধা বুঝি৷ অল্প অসুবিধা থাকলে সেটা কাটিয়ে উঠব। আমরা কোর কমিটি এক সঙ্গে কাজ করি।”

কোর কমিটির আরেক সদস্যা তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন, “প্রভাব পড়বে না৷ সবাই লাফাচ্ছে ভাবছে অনুব্রত দিল্লি গিয়েছে। সেটা নয়৷ আইনের বিষয়, সেই নিয়ে কিছু বলব না। তবে ওনার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে সেই দায়িত্ব ইডি-সিবিআইকে নিতে হবে৷ অনুব্রতর সঙ্গে থাকা নেতারা যারা এক সঙ্গে রাজনীতি করেছে তারা সবাই সংগঠন করতে জানে। অন্য ইলেকশনের সময়তো নজর বন্দি থাকত। ইলেকশন হবে যেমন হয়, জিতও হবে।”

কোর কমিটির অপর সদস্য বিকাশ রায় চৌধুরী বলেন,” সমস্ত নেতা নেত্রী দিদির দূত কর্মী সূচীতে টানা ব্যস্ত তাই কোর কমিটির মিটিং হয় নি। খুব শীঘ্রই বৈঠকে বসা হবে। “

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *