মেঘালয়ে এনপিপি-বিজেপি জোটকে সরকার গঠনে সমর্থন ইউডিপি ও পিডিএফ-এর, কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত কনরাডের

দুই দলের সমর্থনে এনপিপি-বিজেপি জোটের ম্যাজিক সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে ৪৫

শিলং, ৬ মার্চ (হি.স.) : কংগ্রেস-তৃণমূল, সর্বোপরি খ্রিষ্টান পাদ্রিদের কোনও কূটকৌশল ধোঁপে টেঁকেনি। অগত্যা এনপিপি-বিজেপি জোট সরকারকে সমর্থন করবে বলে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দুই আঞ্চলিক দল ইউডিপি এবং পিডিএফ। লিখিত প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর দুই দল যথাক্রমে পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (পিডিএফ) এবং ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (ইউডিপি)-কে ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)-প্রধান তথা ভাবী মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কঙ্খল সাংমা। এই দুই দলের সমর্থনে এনপিপি-বিজেপি জোটের ম্যাজিক সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে পৌঁছছে ৪৫-এ।

প্রসঙ্গত, ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর কনরাড কঙ্খল সাংমা নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস ফ্রন্ট (এনপিপি)-বিজেপি জোট যাতে সরকার গঠন করতে না পারে, সেজন্য বহু নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে মেঘালয়ে। প্ৰথমে কথা ছিল, হিল স্টেট পিপলস ডেমোক্ৰ্যাটিক পাৰ্টি (এইচএসপিডিপি)-র দুই বিধায়ক মেথোডিয়াস ডখার এবং শাকলিয়ার ওয়ারজরি এনপিপি-বিজেপি জোট সরকারকে সমর্থন করবেন। কিন্তু ৩ মার্চ রাতে আচমকা একটি চিঠি পাঠিয়ে দুই বিধায়ক জোট সরকারকে সমর্থন করবেন না বলে এনপিপি-প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী কনরাডকে জানান এইচএসপিডিপি-র সভাপতি কেপি পাংনিয়াং৷ তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে এনপিপি-কে সরকার গঠনে এইচএসপিডিপি-র দুই বিধায়ক সমর্থন করবে বলে ঘোষণা করেন। এ নিয়ে রাজ্যে গত দুদিন কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গাড়ি এবং এইচএসপিডিপি-এর বিধায়ক মেথোডিয়াস ডখারের অফিস। এ সব ঘটনা সংগঠিত করেছেন নিজের দলের সদস্যরা।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, কনরাড সাংমা নেতৃত্বাধীন বিগত সরকারের শরিক ছিল ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (ইউডিপি)। কিন্তু এবার বিরোধী ঐক্য জোটের প্রলোভন দিয়ে ইউডিপিকে বিভ্রান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা হয়েছিল।

মূলত, কোনও খাসি জনজাতিভুক্ত বিধায়ককে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসাতে এ ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছিল। এনপিপি-প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা মেঘালয়ের ভূমিপুত্র হলেও, গারো জনজাতিভুক্ত। তাই মেঘালয়কে আর খাসি ছাড়া অন্য জনজাতিভুক্তের হাতে ছাড়তে চাইছিল না বিরোধী আঞ্চলিক এবং নির্দলীয়রা। এনপিপি (খাসি ও গারোদের নিয়ে দল), বিজেপি, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস (মুকুল সাংমাও গারো জনজাতিভুক্ত) ছাড়া সব আঞ্চলিক দল খ্ৰিষ্টান প্ৰভাবিত খাসি জনজাতিদের নিয়ে গঠিত। এই দলগুলি যথাক্রমে এইচএসপিডিপি, নিৰ্দলীয়, পিডিএফ, ইউডিপি এবং ভিপিপি।

তাই বিজেপি-এনপিপিকে বাদ দিয়ে বাকি দলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মেঘালয়ে সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়। কেউ কেউ বলছেন, বিজেপি-এনপিপিকে সরকার থেকে দূরে রাখতে মূল চালিকাশক্তি ছিল রাজ্যের খ্রিষ্টান সংগঠন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের সামনে থেকে প্ররোচিত করেছে খ্রিষ্টান প্রভাবিত আঞ্চলিক দল ও সংগঠন। এছাড়া অনেকে বলছেন, তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকবার নির্বাচনী প্রচারে এসে ভূমিপুত্রকে মেঘালয়ের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী এবং সরকার গঠনে সহায়তা করতে রাজ্যবাসীর কাছে অনুরোধ করেছিলেন। মমতার ওই ডাকেই আগুনে প্রবল হাওয়া দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, ৬০ বিধায়ক-বিশিষ্ট মেঘালয় বিধানসভা নির্বাচনে ৫৯টি আসনে ভোট হয়েছে। ভোটে বিজয়ীদের সংখ্যা যথাক্রমে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ২৬, বিজেপি ২, আঞ্চলিক দল হিল স্টেট পিপলস ডেমোক্ৰ্যাটিক পাৰ্টি (এইচএসপিডিপি) ২, নিৰ্দলীয় ২, আঞ্চলিক দল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (পিডিএফ) ২, আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (ইউডিপি) ১১, ভয়েস অব দ্য পিপল পার্টি (ভিপিপি) ৪, ভারতীয় জাতীয় কংগ্ৰেস ৫ এবং তৃণমূল কংগ্রেস ৫-।

একটি আসন ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (ইউডিপি)-র প্রার্থী এইচডিআর লিংডোহের মৃত্যুতে সোহিয়ং বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।

তাই সরকার গঠনে ৩১ বিধায়কের বদলে ৩০ বিধায়ক দরকার। এবার পিডিএফ, ইউডিপি, এইচএসপিডিপি এবং দুই নির্দলীয় বিধায়কের সমর্থন লাভের পর এনপিপি-বিজেপি জোটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫-।

এদিকে, কনরাড সাংমা তাঁর টুইটারে লিখেছেন, ‘সরকার গঠনে এনপিপিকে সমৰ্থনের জন্য এগিয়ে আসায় ইউডিপি এবং পিডিএফ-কে ধন্যবাদ। আমরা স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলির শক্তিশালী সমর্থনে মেঘালয় এবং এর জনগণের সেবা করতে আরও সক্ষম হব।’

আগামীকাল ৭ মার্চ এনপিপি-জোট সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। শিলঙে অনুষ্ঠেয় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্ৰ মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিজেপি-র কো-অর্ডিনেটর সম্বিত পাত্র, উত্তরপূর্বীয় রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা নেডা-র আহ্বায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *