BRAKING NEWS

দূষণে ওষ্ঠাগত প্রান, কাঁকসায় বেসরকারি কারখানার গেট আটকে বিক্ষোভ মহিলাদের

দুর্গাপুর, ৬ মার্চ (হি. স.) কারখানার কালো ধোঁয়ায় নাভিঃশ্বাস দশা। বর্জ্য জলে নষ্ট হচ্ছে চাষজমি। এককথায় বেসরকারি ইস্পাত কারখানার দূষণে ওষ্ঠাগত প্রাণ গ্রামবাসীদের। অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি। অবশেষে ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙল গ্রামবাসীদের। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের প্রতিবাদে কারখানার গেট আটকে বিক্ষোভে বসে পড়ল গ্রামের মহিলারা। বিক্ষোভের জেরে আটকে কারখানায় ঢুকতে আটকে পড়ে শ্রমিক থেকে আধিকারিকরা। সোমবার ঘটনাকে ঘিরে চরম উত্তেজনা ছড়াল কাঁকসার বাঁশকোপা শিল্পতালুকের বেসরকারী স্পঞ্জ আয়রন কারখানায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামল বিশাল পুলিশবাহিনী। ঘন্টা তিনেক পর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে উঠল বিক্ষোভ।

নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে কাঁকসার বাঁশকোপা শিল্পতালুকের উত্থান হয়। গড়ে ওঠে একের পর এক স্পঞ্জ আয়রন কারখানা। শিল্প দেখে গোড়ার দিকে হাসি ফুটলেও, পরবর্তীকালে দূষণ কার্যত নাজেহাল অবস্থা বাঁশকোপা, বাবনাবেড়া, আমলাজোড়া, নরায়নপুর সহ ৭-৮ গ্রামের বাসিন্দারা। অভিযোগ জয় বালাজী নামে ওই কারখানার কালো ধোঁয়া গ্রাস করেছে গ্রামের জলাশয়, পুকুর থেকে গোটা পরিবেশ। দুষিত বিষাক্ত ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বহু গ্রামবাসী। মাত্রাতিরিক্ত দূষনের প্রতিবাদে বেসরকারি এক স্পঞ্জ আয়রন কারখানার গেট আটকে বিক্ষোভ দেখান বাঁশকোপা গ্রামের মহিলারা। বিক্ষোভরত মহিলারা জানান,” পুকুরের জল দুষিত হয়ে গেছে। বাতাস দুষিত। তার ফলে চর্মরোগ থেকে হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট সহ নানান ধরনের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের অবস্থা আরও খারাপ। চোখে বাতাসের বিষাক্ত ছাই ধুলো ঢুকলে জ্বালা করে। চোখ নষ্ট হওয়ার উপক্রম।” মহিলারা আরও বলেন,” দিনের বেলা তো আছেই , রাতের দিকে দূষনের মাত্রা আর বেড়ে যায়। সকালে বাড়ির উঠোন কালো ছাইয়ের গুড়োর স্তর বসে থাকে। পুকুরের জলে স্তর বসে থাকে। এছাড়াও কারখানার নোংরা বর্জ্য জলে নষ্ট হচ্ছে এলাকারন দু’ফসলি চাষজমি।” মহিলারা জানান,” বিগত কয়েকমাস ধরেই অভিযোগ জানানো হচ্ছে। কিন্তু, সুরাহা কিছুই হয়নি। তাই কারখানার গেটে বসে আজ বিক্ষোভে সামিল হয়েছি।” এদিন সকালে কারখানা নির্গত বিষাক্ত কালো ছাই নিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয় মহিলারা।”

এদিন কারখানার গেট আটকে বিক্ষোভের জেরে শ্রমিকরা কারখানায় ঢুকতে পারেনি। আটকে পড়ে কারখানার পরিবহন। ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কাঁকসা থানার পুলিশ। ক্ষুব্ধ মহিলারা কারাখানার ভেতরে ঢুকে পড়ে। এবং আধিকারিকদের অফিসে ঢোকার চেষ্টা করে। পুলিশের বাধায় আটকে পড়ে মহিলারা। তাদের সঙ্গে একপ্রস্থ বচসা সৃষ্টি হয় পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের। যদিও কারখানা কতৃপক্ষ দূষণের দায় চাপিয়েছে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার ওপর। কারখানার জেনারেল ম্যানেজার অশোক সিং জানান,” বহুদিন বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। তবে কতৃপক্ষ গ্রামবাসীদের পাশে আছে। গত দু বছরে এরকম সমস্যা হয়নি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ গনেশ মন্ডল জানান,”আরও আগেই তাদের আন্দোলনে নামা উচিৎ ছিল। এই ধরনের কারখানা গুলি ব্যায়ভারের কারনে দুষন নিয়ন্ত্রন যন্ত্র চালায় না।দূষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদও উদাসীন। নজরদারি রাখে না। ফলে এই মাত্রাতিরিক্ত দূষনে নাকাল বাঁশকোপা, বামুনাড়া, গোপালপুর এলাকার সাধারন মানুষ। দুষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদের উচিৎ কড়া পদক্ষেপ নেওয়া।”

প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য দুষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদের ভুমিকায়। এর আগে পানাগড় শিল্পতালুকের একটি মদ তৈরী কারখানার বিরুদ্ধে একইরকম দুষন ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি গ্রীন ট্রাইবুনালে মামলাও হয়। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে গ্রীণ ট্রাইবুনালের নির্দেশিকা চাপা পড়ে যায়। তারপর এদিনের ঘটনা সেই একই প্রশ্ন জোরালো উঠেছে। খোদ শিল্পশহরের সিটি সেন্টারের বিলাসমহুল অফিস দুষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদের। শহরের আকাশে বাতাসে বিষাক্ত ধোঁয়া গ্রাস করলেও, তাদের নজরে কিম্বা পর্ষদের আধুনিকমানের পরিমাপক যন্ত্রে ধরা পড়ে না কেন? তবে এবিষয়ে কোনরকম মন্তব্য করতে চায়নি দুর্গাপুর দুষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদ। কর্তৃপক্ষের

আশ্বাসে বিক্ষোভ তুলে নিলেও মহিলারা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান,” ৭২ ঘন্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে।” দুর্গাপুর মহকুমাশাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় জানান,” বিষয়টি খোঁজ নিয়ে, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *