BRAKING NEWS

পরিবহণ দপ্তরে প্রথমবারের মতো চালু হতে যাচ্ছে কমিশনারেট অব ট্রান্সপোর্ট অফিস

নিজস্ব প্রতিনিধি,আগরতলা, ৩০ ডিসেম্বর৷৷ রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরে প্রথমবারের মতো চালু হতে যাচ্ছে ’কমিশনারেট অব ট্রান্সপোর্ট’ বা ’ডাইরেক্টরেট অব ট্রান্সপোর্ট’ অফিস৷ সাধারণ জনগণ পরিবহণ দপ্তরের বিভিন্ন সুুবিধা পেতে এবং পরিবহণ দপ্তরের কাজকর্ম সাধারণ জনগণের কাছে পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যেই ’কমিশনারেট অব ট্রান্সপোর্ট’ অফিস চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে পরিবহণ দপ্তরের সচিব উত্তম কুমার চাকমা এই সংবাদ জানিয়েছেন৷ পরিবহণ দপ্তরের সচিব জানান, পরিবহণ সেক্টর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, যেখানে জনগণের যাতায়াত ব্যবস্থা এবং পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে, কর্মসংস্থানের সুুযোগ সৃষ্টি করতে এবং বিভিন্ন পরিবহণ ক্ষেত্রে জনসাধারণকে যুক্ত করতে পরিবহণ সেক্টরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তিনি জানান, গত সাড়ে চার বছরের বেশি সময়ের মধ্যে রাজ্যের পরিবহণ ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে৷ রাজ্যে পরিবহণ দপ্তর চালু হওয়ার পর থেকে দপ্তরের কোনও ডাইরেক্টরেট অব ট্রান্সপোর্ট বা ট্রান্সপোর্ট কমিশনারেট অফিস ছিল না৷ সচিবালয় থেকেই দপ্তরের প্রধান সচিব বা সচিবগণ সচিবালয়ের জিএ (এসএ) দপ্তরের কয়েকজন কর্মীদের মাধ্যমে মূলতঃ পরিবহণ দপ্তরের কাজকর্ম পরিচালনা করতেন৷ পরিবহণ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের আধিকারিক সচিবালয় থেকেই পরিবহণ দপ্তরের হেড অব ডিপার্টমেন্টের কাজ করতেন৷ কিন্তু সেখানেও প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য পরিবহণ দপ্তরের কোনও আধিকারিক ছিলেন না৷ ফলে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরে কাজের ক্ষেত্রে বিরাট ব্যবধান দেখা দিত৷ ফলে সাধারণ জনগণ পরিবহণ দপ্তরের সুুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বা পরিবহণ দপ্তরের কাজকর্ম সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হত৷ এই ব্যবস্থা দূর করার জন্য এবং প্রশাসনকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যেই নতুনভাবে ট্রান্সপোর্ট কমিশনারেট এবং পশ্চিম জেলা পরিবহণ কার্যালয় পৃথকভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি পরিবহণমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় এই অফিসের উদ্বোধন করবেন৷
সাংবাদিক সম্মেলনে পরিবহণ দপ্তরের সচিব জানান, দেশের সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অ’লে ’কমিশনারেট অব ট্রান্সপোর্ট’ অথবা ’ডাইরেক্টরেট অব ট্রান্সপোর্ট’ অফিস রয়েছে৷ কিন্তু ত্রিপুরায় এই ধরণের কোনও অফিস ছিল না৷ রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ত্রিপুরাও এর সঙ্গে যুক্ত হল৷ একজন কমিশনারেট অব ট্রান্সপোর্ট পদাধিকার আধিকারিক / ট্রান্সপোর্ট কমিশনারের দায়িত্বে থাকবেন৷ পরিবহণ সচিব জানান, বর্তমানে পরিবহণ দপ্তর কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বেশ কিছু প্রকল্প রূপায়িত করছে যার রাজস্বমূল্য প্রায় ২৫১ কোটি টাকা৷ এছাড়াও পরিবহণ দপ্তর চলতি অর্থবছরে ১১০ কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে৷ এরমধ্যে প্রায় ৭০ কোটি টাকা আদায় হয়ে গেছে৷  তিনি জানান, ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দরের আধুনিক সুুযোগ সুুবিধা সহ নতুন টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করেন৷ এই নতুন টার্মিনাল ভবনে ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ থেকে যাত্রী পরিষেবা শুরু হয়৷ এছাড়া শীঘই আগরতলা-চিটাগাং-আগরতলা রুটে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা চালু হবে৷ এরজন্য ভারত সরকারের অসামরিক বিমান পরিষেবা মন্ত্রকের কাছ থেকে গত ১২ সেপ্ঢেম্বর, ২০২২ স্পাইসজেট এয়ারলাইন্সকে এই বিষয়ে বরাত দেওয়া হয়েছে৷ পরিবহণ সচিব জানান, কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রক ২০১২-১৩ সালে ১২.৩ কিমি দীর্ঘ আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ প্রকল্পটির রূপায়ণের জন্য ৯৭২ কোটি টাকা অনুমোদন করে৷ বর্তমানে এই প্রকল্পটির ভারতীয় অংশের ৮১ কাজ শেষ হয়েছে৷ আশা করা যাচ্ছে, ২০২৩-এর মার্চ মাসের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন হবে৷ তিনি জানান, ঊনকোটি জেলার হীরাছড়ায় একটি গ্রীণ-ফিল্ড এয়ারপোর্ট নির্মাণের জন্য রাজ্য সরকারের কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের কাছে অনুরোধ করা হয়েছিল৷ রাজ্য সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সমীক্ষার কাজ এবং গ্রীণ-ফিল্ড নির্মাণের জন্য প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করতে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের থেকে একটি এজেন্সিকে গত ১৭ আগস্ট, ২০২২ সালে কাজের বরাত দেয়া হয়েছিল৷ এই এজেন্সি গত ২০ অক্টোবর, ২০২২ ট্রপোগ্রাফি সার্ভের কাজ শেষ করে এবং বর্তমানে সেটি অন্যান্য পরীক্ষা সহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করেছে৷ ইতিমধ্যে এজেন্সি ডিপিআর তৈরির কাজ সম্পন্ন করে রাজ্য সরকারের কাছে তা পাঠিয়েছে৷
সাংবাদিক সম্মেলনে পরিবহণ সচিব জানান, ’হেলি ট্যুরিজম পলিসি’ অনুসারে রাজ্যে ছয়টি হেলিপোর্ট নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের কাছে পরিবহণ দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল৷ যে ছয়টি স্থানে হেলিপোর্ট নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল সেগুলি হলো উদয়পুরের মাতাবাড়ি, ডম্বরনগরের নারিকেলকু’, জম্পইয়ের ভাংমুন, আমবাসার রাইপাশা, অমরপুরের দেববাড়ি এবং বিলোনীয়ার মাইছড়া৷ তিনি জানান, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ প্রকল্পের অন্তর্গত নিশ্চিন্তপুরে একটি আধুনিক সর্বসুুবিধাযুক্ত রেল ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ করছে৷ যাত্রী পরিষেবা, পণ্য পরিবহণ এবং ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে রেল ইয়ার্ড অনেক সুুবিধা প্রদান করবে৷ পাশাপাশি আগরতলা-কুমারঘাট রেলপথে ২৩টি রেলওয়ে ওভার বিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ পরিবহণ সচিব জানান, রাজ্যের গোমতী জেলায় এবং ঊনকোটি জেলায় ২টি আ’লিক ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এরজন্য গোমতী জেলাতে ৭ একর জমি এবং ঊনকোটি জেলাতে ৭.৮৯ একর জমি চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ রাজ্যের দক্ষিণ ত্রিপুরা, খোয়াই, ধলাই, সিপাহীজলা এবং উত্তর ত্রিপুরা- এই ৫টি জেলাতে ড্রাইভিং ট্রেইনিং সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও গাড়ি পরিদর্শন ও সার্টিফিকেশন সেন্টার নির্মাণের জন্য বোধজংনগরে ৬ একর জমি পরিবহণ দপ্তরের অধীনে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে৷ সাংবাদিক সম্মেলনে পরিবহণ দপ্তরের আরও জানান, নিশ্চিন্তপুরে একটি মাল্টি মডেল লজিস্টিক পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে৷ এখানে রেলওয়ে একটি আধুনিক ’রেল ইয়ার্ড’ নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছে৷ এছাড়া ল্যাল্ডপোর্ট অথরিটি অব ইণ্ডিয়া সেখানে একটি সুুসংহত চেকপোস্ট নির্মাণ করবে এবং যার জন্য ৪০ একর জায়গা ইতিমধ্যেই চিহ্ণিত করা হয়েছে বলে পরিবহণ সচিব সাংবাদিক সম্মেলনে জানান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *