BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় উপজাতি দলগুলি বুদ্বুদের মত হারিয়ে যায়, স্বার্থান্ধ রাজনীতি উপজাতিদের সর্বনাশ করেছে

৷৷ পরিতোষ বিশ্বাস ৷৷

রবিবার বিবেকানন্দ ময়দানে প্রধানমন্ত্রী বিশাল জনসমাবেশে স্বল্পকালীন ভাষণে বিজেপি সরকারের প্রশংসা করেছেন৷ তাঁর ভাষণে বলেছেন, সুবিধাবাদী রাজনীতি জনজাতিদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করেছে৷ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য আজ অনুধাবন করার সময় এসেছে৷ ত্রিপুরার উপজাতিদের নিয়ে একের পর এক রাজনীতি হয়েছে৷ কিন্তু, সমগ্র উপজাতি সমাজকে জাতীয় স্রোতে সামিল করা যায়নি৷ আজও তাঁরা পিছিয়ে আছে৷ আর এই পিছিয়ে থাকার পিছনে কারণ তাঁদের নিয়ে রাজনীতির স্বার্থবাদ খেলা৷ স্বাধীন ত্রিপুরার ডাক দিয়ে এরাজ্যের উগ্রপন্থীরা মানুষ খুন করেছে আর অর্থ লুট করেছে৷ মহম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল উগ্রপন্থীদের স্বর্গোদ্যান৷ এরশাদ সরকারের মদতে উগ্রপন্থীরা ত্রিপুরায় গণহত্যা চালিয়ে, অপহরণ করে মোটা টাকা লুট করে বাংলাদেশের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেত৷ এইসব উগ্রপন্থীরা এই লুট করা অর্থে সুখভোগের রাজত্ব করত৷ এইভাবেই একের পর এক উপজাতি অংশের মানুষ জনজাতিদের উন্নয়নের নামে, স্বাধীনতার নামে ত্রিপুরার ভয়ানক সর্বনাশ করে গেছে৷ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আজকের সময়ে অর্থপূর্ণ৷ তিনি জানেন উগ্রপন্থীরা জনজাতিদের কল্যাণের জন্য মোটেই চিন্তিত ছিল না৷ তারা লুটতরাজ, রক্ত ঝরিয়ে টাকা আদায় এসব করে গিয়েছে৷ বিভিন্ন কায়দায় উপজাতিদের কথা বলে উপজাতিদেরই সর্বনাশ করেছে৷ আর এজন্যই এরাজ্যের উপজাতিদের একটা অংশ এখনও সেই অন্ধকারেই রয়ে গিয়েছেন৷
যারা উপজাতিদের দরদ দেখিয়ে ময়দানে আছেন তাঁরা কি একবারও ভেবেছেন উপজাতি মানুষের ভাষা এখনও অবহেলিত রয়েছে৷ এতকিছুর পরও এই ভাষার হরফ বিতর্কেরই অবসান হয়নি৷ সিপিআইএম ককবরকে বাংলাভাষার হরফের পক্ষে৷ ত্রিপুরার উপজাতিদের অবিসংবাদিত নেতা দশরথ দেবও তার প্রবন্ধে উপজাতিদের ককবরক ভাষায় বাংলা হরফের পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ কিন্তু, না৷ আইএনপিটি, আইপিএফটি, টিএনভি এইসব দলগুলি রোমান হরফের পক্ষপাতি৷ সিপিআইএম দল যখন এডিসিতে ক্ষমতায় ছিল তখন ককবরক ভাষায় লক্ষ লক্ষ টাকার বই ছাপা হয়েছিল৷ পরবর্তী সময়ে আইপিএফটি ক্ষমতায় বসে ককবরক ভাষায় রোমান হরফ চালুর পদক্ষেপ নেয়৷ এইভাবে হরফের টানাপোড়েনে ককবরক ভাষা কার্যত আতুঁড় ঘর থেকেই বেরুতে পারছে না৷ অথচ বাংলা ও ককবরক ভাষা রাজ্য সরকারের স্বীকৃত ভাষা৷ এই দুটি ভাষাতে রাজ্য সরকারের কাজকর্ম চলতে পারে৷ কিন্তু, না৷ বাংলা ভাষাই যেখানে অবহেলিত সেখানে ককবরক ভাষার কথা বলে তো লাভ নেই৷ উপজাতি নেতারা উপজাতিদের জন্য মায়াকান্না করেন৷ ভোট বৈতরণী পাড় হতে যতটা না সচেষ্ট বাস্তবে তারা উল্টো পথেই হাটেন৷ যদি তা না হত তাহলে ককবরক ভাষা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারত৷ ত্রিপুরায় সিংহভাগ মানুষ বাংলায় কথা বলেন৷ উপজাতিরা বাংলা ভাষা জানেন৷ বাঙালীদের সিংহভাগ মানুষ ককবরক ভাষা জানেন না৷ যেই জাতির ভাষাই দূর্বল সেই জাতির মৌলিক অগ্রগতি কিভাবে হবে? বাংলা ভাষার জন্য কত তরুণ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে৷ তার ইতিহাস আছে৷ কিন্তু, ককবরক ভাষার জন্য উপজাতি অংশের নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা উপজাতিদেরই পিছনে ঠেলেছে৷
রবিবার বিবেকানন্দ ময়দানে প্রধানমন্ত্রী যে বাস্তব কথা তুলে ধরেছেন এই বিষয়ে ভাববার তাগিদ আনবে৷ এতকাল বিভিন্ন ভাবে উপজাতিদের নিয়ে রাজনীতি হয়েছে৷ উপজাতিদের সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনীতির ফায়দা নেয়ায় রাজ্যের সর্বনাশকেই ত্বরান্বিত করে৷ এত রক্ত, এত গণহত্যা, এত লুটতরাজের পরও উপজাতি দরদীরা আর কত খেলা করবেন৷ এই প্রশ্ণ আজ গুরুত্বপূর্ণ৷ সরলমতি উপজাতিদের ভাবাবেগকে পূঁুজি করে এরাজ্যে যারা রাজনীতি করেছেন তাঁরা তো হারিয়ে গিয়েছেন৷ উপজাতিরা তাদের বর্জন করেছে৷ কিন্তু, খেলা এখনও শেষ হয়নি৷ উপজাতিদের ভাগ্য নিয়ে নতুন করে যারা খেলতে চাইছে তারা ইতিহাসের শিক্ষাকে ভুলে গেলে ত্রিপুরাকে চরম বিপদের মুখে ঠেলে দেবেন৷ এটা নিশ্চয় জাতি উপজাতি কোনও অংশের মানুষেরই কাম্য নয়৷ (চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *