বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নত মানের পঠনপাঠনে তৈরি হল এসএবিসি-র বিশেষজ্ঞ কমিটিঅশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ৮ নভেম্বর (হি. স.) : নির্দিষ্ট কোনও গণ্ডীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নত মানের পঠনপাঠনকে আবদ্ধ না রেখে তার সুফল দ্রুত গোটা দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে ইউজিসি। দেশের কিছু রাজ্য অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। সেই লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গেও সম্ভাবনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তৈরি করা হল স্টেট একাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট (এসএবিসি) বিশেষজ্ঞ কমিটি।

বিশিষ্ট বিজ্ঞানী তথা রানি রাসমণি গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ডঃ আশুতোষ ঘোষ এই প্রতিবেদককে বলেন, “ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন শাখার পঠনপাঠনে এ রাজ্যেও এই পদ্ধতি আংশিক চালু হয়েছে। এতে পঠনপাঠনের উৎকর্ষতার মান অনেকটাই বাড়ে। সম্ভাবনাময়, মেধাবী পড়ুয়াদের উপকার হয়।” প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের উদ্যোগে তৈরি হয় ‘স্বয়ম এনপিটিইএল’ (ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অন টেকনোলজিক্যাল এনহান্সমেন্ট লার্নিং)। এর সদর দফতর আইআইটি চেন্নাইতে।

দেশের ২৩টি আইআইটি-র মধ্যে পুরনো সাতটি আইআইটি, ৩টি আইআইএসইআর এফং বাঙ্গালুরু আইআইএসসি— দেশের অত্যন্ত উৎকৃষ্ট কিছু বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে তৈরি হয়েছে একটা ব্যবস্থাপনা। এই প্রতিটি স্থানে তৈরি হয়েছে উন্নত মানের স্টুডিও। পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা হাতেকলমে এই প্রকল্প রূপায়ণ করছেন, তাঁদের অন্যতম অধ্যাপক ডঃ অমৃতকৃষ্ণ মিত্র।

আইআইটি-র প্রাক্তনী তথা সিঙ্গুর কলেজের অধ্যাপক অমৃতবাবু এই প্রতিবেদককে বলেন, “এই শিক্ষাপ্রকল্প ভাল পড়ুয়াদের কাছে স্বর্গোদ্বার খুলে দেওয়ার সামিল। এর মাধ্যমে কেবল বিএসসি, এমএসসি-স্তর ও অধ্যাপকরাই নন , ‘নেট’, ‘গেট’ প্রভৃতি সর্বভারতীয় পরীক্ষায় নিজেদের মানোন্নয়নের সুযোগ পাবেন পড়ুয়ারা। আছে ‘ডাউট ক্লিয়ারিং সেশন’। এত আধুনিক এবং ভাল মানের পাঠ্যক্রম এককথায় অকল্পনীয়। ক্লাশ, পরীক্ষা সব হবে অনলাইনে।“

অমৃতবাবু জানান, “আগ্রহীরা আগাম নাম নথিভূক্ত করে নিখরচায় ক্লাশ করতে পারবেন। ৮ এবং ১২ সপ্তাহের নির্দিষ্ট বিষয়ের পাঠ্যক্রম। পরীক্ষায় বসতে গেলে এক হাজার টাকা (ফ্যাকাল্টির ক্ষেত্রে ১,১০০/-) ফিজ লাগবে। ক্ষেত্র সমীক্ষা বাধ্যতামূলক। প্রশ্নপত্র মূলত হয় এমসিকিউ-তে। তবে গণিত, সংখ্যাতত্ব, অর্থনীতি পরীক্ষা হয় কাগজে কলমে। ৩ ঘন্টার এই পরীক্ষাকে বলে ‘প্রোক্টারড এক্সাম’। সবই অনলাইনে। এই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের একটা অংশ শিক্ষার্থীর মূল পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলে যুক্ত হবে। শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণায় বাড়তি সুবিধা পাবেন। সংশাপত্রে আইআইটি-র দুজন নামী অধ্যাপকের সই থাকবে। পশ্চিমবঙ্গে শিলিগুড়ি, বারাসাত, হুগলি, সল্ট লেকের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে ইতিমধ্যে এর রূপায়ণ শুরু হয়েছে।”

রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এর প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশদ নির্দেশিকা তৈরি হবে। এর জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার হয়েছে৷ সাত সদস্যের কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সুরঞ্জন দাসকে। সদস্য হিসাবে আছেন সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক (ড.) ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিষদ উচ্চশিক্ষা ভাইস চেয়ারম্যান (শিক্ষা) (ড.) কৌশিকী দাশগুপ্ত, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য উচ্চশিক্ষা পরিষদের যুগ্ম সচিব (শিক্ষা), ড. মৌমিতা ভট্টাচার্য, দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজ, কলকাতার অধ্যক্ষ ডঃ সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানা শহিদ ক্ষুদিরাম স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ডাঃ রূপা দাশগুপ্ত। কমিটির সদস্য আহ্বায়ক যুগ্ম ডিপিআই ডঃ পার্থ গঙ্গোপাধ্যায়। বিশেষজ্ঞ কমিটি বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে এক মাস অর্থাৎ ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে উচ্চশিক্ষা বিভাগে রাজ্য সরকারের কাছে এ বিষয়ে প্রস্তাবিত নির্দেশিকা জমা দেবে।

এই কমিটির সদস্য ধ্রুবজ্যোতিবাবু মঙ্গলবার এই প্রতিবেদককে বলেন, “বছর সাত আগে ইউজিসি এই ভাবনা রূপায়ণের সুপারিশ করে। দিল্লি, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্র অনেকটাই রূপায়ণ করেছে। কেরলেও কাজ এগিয়েছে। আমাদের সদ্যসৃষ্ট কমিটি এরাজ্যে পরিকাঠামো এবং আনুষঙ্গিক বিষয়সমূহ খতিয়ে তাদের প্রস্তাব দেবে।“ এর মাধ্যমে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব যার মাধ্যমে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা উন্নত মানের শিক্ষার সুযোগ পেতে পারেন।