দূর থেকে নয়, সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আরএসএসকে বিশ্লেষণ করার আহ্বান সরসংঘচালকের
শিলং, ২৫ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : অনাদিকাল থেকে আমরা একটি প্রাচীন জাতি। কিন্তু আমাদের সভ্যতার নীতি ও মূল্যবোধ ভুলে গিয়েছি। ফলস্বরূপ আমরা আমাদের স্বাধীনতা হারিয়েছি। আমাদের একে অপরের মধ্যে শক্ত বন্ধন হল প্রাচীন মূল্যবোধের প্রতি অন্তর্নিহিত বিশ্বাস যা আধ্যাত্মিকতার মধ্যে রয়েছে। ভারতবর্ষের চিরন্তন সভ্যতার এই মূল্যবোধকে বহিৰ্দেশের মানুষজন হিন্দুত্ব বলে নাম দিয়েছেন। কথাগুলি বলছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত৷
মেঘালয়ের রাজধানী শিলঙের ইউ-সোসো থাম মিলনায়তনে আজ রবিবার আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে বৌদ্ধিক প্রদান করছিলেন আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবত। সমবেশটি ঐতিহ্যবাহী খাসি পরম্পরায় সংঘ-প্রধানকে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে শুরু হয়। সরসংঘচালককে ঐতিহ্যবাহী খাসি পোশাক পরিয়ে এবং পরম্পরাগত বাদ্যযন্ত্র উপহার দিয়ে উষ্ণ স্বাগত জানানো হয়েছে।
সমাবেশে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে ড. ভাগবত আরও বলেন, আমরা হিন্দু, কিন্তু হিন্দুর কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। হিন্দুত্ব আমাদের পরিচয়। ভারতীয় এবং হিন্দু, উভয় শব্দই সমার্থক শব্দ। এটি আসলে একটি ভূ-সাংস্কৃতিক পরিচয়, বলেন, সরসংঘচালক।
শ্রোতাদের সম্বোধন করতে গিয়ে ড. মোহন ভাগবত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ডা. কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক ঘটনার বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ডাক্তারজি একজন জন্মগত দেশপ্রেমিক ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে কারাগারে বন্দিও ছিলেন তিনি। ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের একটি মামলার শুনানিকালে বিচারকের এক মন্তব্যে ডা. হেডগেওয়ার যে জবাবি বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তাতে তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে মনে করে ডাক্তারজিকে জেলে পাঠানো হয়েছিল।
প্ৰাসঙ্গিক বক্তব্যে তিনি বলেন, সংঘ নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ করে দেশের জন্য আত্মত্যাগ করতে শেখায়। দৈনন্দিন এক ঘণ্টার সংঘ-শাখায় স্বয়ংসেবকরা এই কল্যাণমূলক মূল্যবোধ এবং মাতৃভূমির প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে শিখে, বলেন ডা. ভাগবত। তিনি বলেন, আরএসএস এই দেশের প্রাচীন ইতিহাস থেকে ত্যাগের ঐতিহ্যের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা বাইরের বিভিন্ন দেশে গিয়ে ভারতের মূল্যবোধ বিলি করেছেন। এই মূল্যবোধ জাপান, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং অন্যান্য অনেক দেশে আজও বিরাজমান। এ সম্পৰ্কিত বহু উদাহরণ টেনে ডা. ভাগবত কীভাবে কোভিড সংকটকালে ভারত বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন পাঠিয়ে মানবতার সেবা করেছে, তার বর্ণনা করেছেন। এছাড়া, অতি সম্প্রতি প্রচণ্ড অর্থনৈতিক সংকটকালে ভারত শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়েছিল, সেই প্রসঙ্গও তিনি আজকের সমাবেশে তুলে ধরেছেন।
কীভাবে সংঘ পাঁচ প্রজন্ম থেকে নিবেদিত স্বয়ংসেবকদের সহায়তায় ১৯২৫ সাল থেকে জাতীয় পুনর্গঠনের কাজ করছে, তার বর্ণনাও করেছেন সরসংঘচালক। তিনি আরও বলেন, সংঘ শুধুমাত্র সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে তা নয়। সংঘের আসল লক্ষ্য হল সমাজকে সংগঠিত করা যাতে ভারত তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশ লাভ করে। তা অর্জনের জন্য স্বয়ংসেবকরা দৈনন্দিন সংঘ-শাখা থেকে অনুশাসন, শৃঙ্খলা শিখেন। সংঘের লক্ষ্য, দৈনন্দিন শাখার মাধ্যমে একে নিজের অভ্যাসে গভীর করে তোলা। সংঘ রাষ্ট্রবাদ, প্রকৃত মানুষ নির্মাণ, স্বয়ংসেবকত্বের ওপর বেশি জোর দেয়, বলেন তিনি।
ডা. ভাগবতের বক্তৃতার গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ ছিল, একজন নাগরিকের ভাগ্যও দেশের ভাগ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। কয়েক বছর আগে উগান্ডা সংকটের সময় সেখানকার ভারতীয়দেরও তাঁদের কোনও দোষ না থাকা সত্ত্বেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল। তখন বৈশ্বিক অঙ্গনে ভারতের মর্যাদা দুর্বল ছিল। আমাদের আপত্তিগুলিও সে সময় কোনও প্রভাব ফেলেনি। কারণ আমাদের দেশ দুর্বল অবস্থানে ছিল। এরই মধ্যে আরএসএস প্রতিটি ভারতীয়কে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করতে আত্মনিয়োগ করে কাজ করছে। ডা. ভাগবত সমাবেশে বিভিন্ন স্তরের শ্রোতাদের আরএসএসকে দূর থেকে নয়, সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করতে আহ্বান জানান।
আজকের সমাবেশে শ্রোতাদের মধ্যে বহু শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক নেতৃবর্গের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা অংশ নেন। ডা. মোহন ভাগবতের এই সফর ছিল তৃতীয় এবং সরসংঘচালক হিসাবে প্রথম। তাঁর দু-দিনের মেঘালয় সফর আগামীকাল সোমবার সমাপ্ত হবে। এর মধ্যে সংঘের বিভিন্ন স্তরের অধিকারি, কার্যকর্তা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতৃত্বের সাথে তাঁর বৈঠক হবে।