আগরতলা, ২৩ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : টক-ঝাল-মিষ্টি, ত্রয়ীর মিশেলে আজ শুক্রবার বিধানসভা অধিবেশনের প্রথমার্ধ রীতিমতো সরগরম ছিল। প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের বিধায়করা ওয়াকআউট করেই দমে যান। তারপর সরকারপক্ষকে একাধিক বিষয়ে চেপে ধরার কামান সামলান কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। বিজেপিতে থাকার সময়েও তিনি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। আজ মাত্রা আরও বাড়িয়ে কমপক্ষে তিনটি ইস্যুতে সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছেন তিনি। অবশ্য সিপিএমের বিধায়কদের দাবি নিয়েও তিনি তাল মিলিয়েছেন। কিন্তু সিপিএমের বিধায়কদের ময়দান ছেড়ে যাওয়ার অতি দ্রুত প্রবণতা রণে ভঙ্গ দিয়েছে। আজ ত্রিপুরায় সাজার হার, বিধানসভা অধিবেশনের সময় বৃদ্ধি এবং জেআরবিটি-র ফলাফল প্রকাশের বিষয়গুলি বিধানসভায় উত্থাপন করে কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ ট্রেজারী বেঞ্চকে রীতিমতো দাবিয়ে রাখার চেষ্টায় ত্রুটি রাখেননি। তাতে রসিকতা করে শিক্ষা মন্ত্রী রতন লাল নাথ সুদীপ বাবুর উদ্দেশ্য বলেছেন, আপনার প্রস্তাব আমরা নিশ্চয়ই গুরুত্ব দেব। আপনি আমার পুরনো বন্ধু।
আজ বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের তারকা চিহ্ন প্রশ্নের জবাবে আইন মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, ৩১ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত ত্রিপুরায় ভারতীয় ফৌজদারী দন্ডবিধি (আইপিসি) মামলায় সাজার হার গড়ে ৮.৪২ শতাংশ। অন্যান্য মামলায় সাজার হার ৩৯.৫৯ শতাংশ। এই জবাব সুদীপ বাবুর প্রশ্ন ত্রিপুরায় সাজার হার কমল কিভাবে। যেখানে জাতীয় গড় ৫০ শতাংশের অধিক।
তাঁর প্রশ্নের জবাবে আইন মন্ত্রীর বক্তব্য, সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার আদালতকে নির্দেশ দিতে পারেনা। তাঁর দাবি, ২০১৭ সালে ত্রিপুরায় আইপিসি মামলায় সাজার হার ছিল ৭.৩১ শতাংশ। আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৪২ শতাংশ। আইন মন্ত্রীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে না পেরে সুদীপের পাল্টা দাবি, তদন্তে এবং মামলা পরিচালনায় দুর্বলতার কারণেই ত্রিপুরায় সাজার হার কমছে।
তাঁর সাফ কথা, যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব না দেওয়ার কারণেই আদালতে মামলা পরিচালনায় দুর্বলতা ফুটে উঠছে। আসামি সাজা থেকে বেঁচে যাচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, পিপি এবং এপিপি নিয়োগে দলবাজি করা হচ্ছে। তিনি সাজার হার বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সুদীপের বক্তব্য খন্ডন করে আইনমন্ত্রীর সাফাই, দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সরকার এগিয়ে চলেছে। ২০১৭ সালে ৭৫০৪৬টি মামলা আদালতে বকেয়া ছিল। আজ তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯১৮৬টি মামলায়। সুদীপ বাবুকে আইন মন্ত্রীর পরামর্শ , তদন্ত প্রক্রিয়া কিভাবে হওয়া উচিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দিন। স্বচ্ছ প্রশাসন উপহার দেওয়ার আমাদের লক্ষ্য। আপনার প্রস্তাব আমরা নিশ্চয়ই গুরুত্ব দেব। কারণ, আপনি আমার পুরনো বন্ধু, রসিকতা করে বলেন আইনমন্ত্রী।
এদিকে, বিধানসভার সময় বৃদ্ধি এবং জেআরবিটি-র ফলাফল প্রকাশের বিষয় নিয়েও আজ বিধানসভায় সরব হন সুদীপ রায় বর্মণ। তাঁর কথায়, বাম আমলেও অধিবেশনের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য বহু আবেদন করতাম। সময় ও সরকারের পরিবর্তন হলেও পরিস্থিতিতে বদল হয়নি। বরং, অধিবেশনের সময়সীমা আরও সংকুচিত হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, সংসদের নির্দেশিকা রয়েছে, বছরে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ দিন বিধানসভার অধিবেশন বসতে হবে। অথচ দেখা যাচ্ছে, ত্রিপুরায় ১০ থেকে ১১ দিনের বেশি অধিবেশন হচ্ছে না। তাঁর দাবি, বিধানসভায় নতুন বিল পেশ হয়েছে। তাই, অন্তত এক দিন সময় বৃদ্ধি করা হোক। তাতে, অধ্যক্ষের সাফ কথা, বিজনেস এডভাইজারি কমিটির বৈঠকে সর্ব সম্মতি ক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন সময় বৃদ্ধি সম্ভব নয়।এদিন গ্রুপ-ডি এবং গ্রুপ-সি পদে নিয়োগের বিষয়টি নিয়েও আওয়াজ তুলেছেন সুদীপ রায় বর্মণ। তাঁর বক্তব্য, ২০২১ সালের আগস্টে জেআরবিটির পরীক্ষা হয়েছে। অথচ, এখনো ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। ত্রিপুরা হাই কোর্ট ফলাফল প্রকাশে স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছে। তবুও, বেকারদের স্বার্থে জেআরবিটি ফলাফল প্রকাশ করছে না। আদৌ ওই চাকুরী প্রদান করা হবে, প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জবাব চেয়েছেন তিনি। তাতে বিধানসভায় শ্রম দফতরের মন্ত্রী ভগবান দাসের জবাব, আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে এখন পর্যন্ত ফলাফল প্রকাশ করা যায়নি। তবে, যত দ্রুত সম্ভব এ-বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারণ, বর্তমান ত্রিপুরা সরকার চাকুরী প্রত্যাশীদের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক।