আগরতলা, ১৯ সেপ্টেম্বর : রাজ্যে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে মৎস্য দপ্তরের উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে একথা জানান মৎস্য দপ্তরের প্রধান সচিব বি এস মিশ্রা। তিনি রাজ্যে রূপায়িত ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, এই যোজনা রাজ্যে ৫ বছরের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এই যোজনা রূপায়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে 2206.১৪ লক্ষ টাকা অনুমোদন দিয়েছে। এই যোজনায় ইতিমধ্যে ১৭৫.৬৫ হেক্টরে নতুন জলাশয় খননের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। ২০১.৪৪ হেক্টর জলাশয়ে মৎস্যচাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। একটি চিংড়ি হ্যাচারি সহ ১৪টি হ্যাচারি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫টির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। ২৪টি রঙিন মাছ পালন কেন্দ্রের মধ্যে ৮টির নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান সচিব জানান, রাজ্যে ৪১টি বায়োফ্লক ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। ৬টি মৎস্য বিপনী চালু করা হয়েছে। ৩টি জিওল মাছ বিক্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ১টি চালু হয়েছে। আরও দুটি শিঘ্রই চালু হবে। ১৩টি ফিস ফিড মিল স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও এই প্রকল্পে তাপনিরোধী বাক্স সমেত বাইসাইকেল, মোটর সাইকেল এবং ত্রিচক্র যান কেনার জন্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এরমধ্যে ২১৬টি বাইসাইকেল, ৬৪টি মোটর সাইকেল এবং ৩৯টি ত্রিচক্র যান কেনা হয়েছে। প্রধানসচিব আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার অধীনে জাতীয় মৎস্য উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ২০২১-২২ সালে ৫টি হ্যাচারি নির্মাণ করা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে মৎস্য দপ্তরের প্রধানসচিব জানান, মৎস্য চাষ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য যেমন উৎপাদন, মৎস্য চাষের অন্তর্গত জলাশয়ের পরিমাণ, মৎস্যচাষীর সংখ্যা ইত্যাদি জানার জন্য প্রতিবছর ফিসারি রিসোর্স সার্ভে করা হয়। ২০২০-২১ অর্থ বর্ষে ফিসারি রিসোর্স সার্ভের তথ্য অনুসারে রাজ্যে মৎস্যচাষী রয়েছে ১,৯৫,৮০৮ জন। মাছ চাষের জন্য জলাশয় রয়েছে ২,১২,৪৪৫টি। জলাশয়ের পরিমাণ ২৯,৩৬৮.৯৯ হেক্টর। এছাড়াও তিনি মাছ চাষের ব্যবহৃত জলাশয়ের পরিমাণ সহ অন্যান্য তথ্যাদির পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি জানান, প্রতি বছর মাছ উৎপাদন প্রায় ২ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বর্ষার জন্য তা একটু বাধাপ্রাপ্ত হয়। প্রধানসচিব জানান, রাজ্যে মাছের পোনার চাহিদা। অনেক বেশি। মাছের পোনা উৎপাদন বাড়ানোর মধ্যদিয়ে মৎস্যচাষীদের আর্থিক বিকাশের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তারজন্য রাজ্যে মাছের খাদ্যের পরিমান ও গুণমান বৃদ্ধির উপরও মৎস্য দপ্তর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বলে তিনি জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানসচিব জানান, মৎস্য চাষ সম্পর্কিত বিভিন্ন জ্ঞান ও প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে মৎস্যচাষীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে রাজ্যে ৬টি মৎস্য জ্ঞানকেন্দ্র যথাক্রমে নলছড়, করবুক, কাকড়াবন, অমরপুর, শিলাছড়ি এবং সারুমের সাতচাদ এ নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিন ত্রিপুরা জেলার শান্তিরবাজার মহকুমার পতিছড়ি বাজারের মুড়াসিং পাড়ায় এবং খোয়াই জেলার পদ্মবিল ব্লকের বড়ময়দান এলাকায় মাছের বাজার নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলি শীঘ্রই চালু করা হবে বলে জানান প্রধানসচিব। মৎস্যচাষীদের সহায়তায় মৎস্য দপ্তর একটি কল সেন্টার চালু করা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে মৎস্য দপ্তরের অধিকর্তা দেবানন্দ রিয়াং এবং যুগ্ম অধিকর্তা অবনী দেববর্মা উপস্থিত ছিলেন।