আগরতলা, ১০ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : ত্রিপুরায় বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের চোখ দিয়ে এখন অনুতাপের অশ্রু ঝরছে। বিজেপির আসল চেহারা যখন তাদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে, তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ দল ছেড়েও চলে যাচ্ছেন। শনিবার আগরতলায় ওরিয়েন্ট চৌমুহনীতে সিপিএম বিধায়কদের গণঅবস্থান মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার এভাবেই বিজেপিকে বিঁধেছেন।
এদিন মানিক সরকার বলেন, বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সমস্ত বাম বিরোধী দলের নেতারা বিজেপির পতাকা তলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বামফ্রন্ট যে শাসনের মডেল বেছে নিয়েছিল তাকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস তাঁদের ছিল না। তাঁরা সকলেই ত্রিপুরার জন্য একটি আধুনিক উন্নয়ন মডেলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মন্ত্রী এবং বিধায়কও হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা বিজেপির পরিবেশে টিকতে পারেননি, কটাক্ষ করে বলেন বিরোধী দলনেতা।
মানিক সরকারের মতে, বিজেপি সরকারের হতাশাজনক নীতি এবং নির্বাচনের আগে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার কারণে সেই নেতাদের বিজেপি ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল। তাঁর দাবি, নির্বাচনের আগে বিজেপি ভোটারদের এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করতে কোন কসুর রাখেনি যার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। ক্ষমতায় আসার পর, নতুন সরকার বিজেপিতে বিশ্বাসী নেতাদের একেবারে উল্টো পথে কাজ শুরু করে। যখন তারা আওয়াজ তোলার চেষ্টা করেছিল তখন তাদের চুপ করে দেওয়া হয়েছিল এবং অনুতাপে তারা বিধায়ক পদ ছেড়েছিল, বিদ্রুপের সুরে বলেন মানিক সরকার।
স্পষ্টতই, মানিক বাবু এদিন সুদীপ রায় বর্মনের বিজেপি থেকে কংগ্রেসে চলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। সাথে নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য সরকারকেও কটূক্তি করেন বিরোধী দলনেতা। মানিকের কথায়, মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তন করে বিজেপি এমন ধারণা তৈরি করতে চেয়েছিল যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সরকারের সমস্ত ব্যর্থতার জন্য দায়ী। তাই প্রদেশ বিজেপি সভাপতিকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসানো হয়েছে। তবে, আমাদের বুঝতে হবে, নতুন মুখ্যমন্ত্রীও বিদ্যমান ব্যবস্থার অংশ।
মানিকের দাবি, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যখন দলের প্রধান ছিলেন, তখন বিরোধী দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সহিংসতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল। উপনির্বাচনে আমরা দেখেছি যে কীভাবে বিজেপি সাদা ব্যান্ড দলগুলিকে ভোটারদের হুমকি দেওয়া এবং বুথ জ্যাম করে ডা: সাহার ভোটে জয়ী করার জন্য নিযুক্ত করেছিল। এখন আমি লজ্জিত বোধ করছি, আমার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কারচুপি করে নির্বাচনে জিতেছেন, তীব্র কটাক্ষ করে বলেন মানিক সরকার।
ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রীর পরিবর্তনকে “তাজা মোড়কে নষ্ট হওয়া খাবার উপস্থাপন করা” বলে ব্যঙ্গ করে মানিক বলেন, খাবার ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি এটি একটি নতুন মোড়কে পরিবেশন করা হলেও, বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে থাকা দুর্গন্ধ রোধ করা যাবে না। তিনি বাম কর্মীদের এগিয়ে আসার এবং আসল সমস্যাগুলির জন্য লড়াই করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমাদের বিধায়করা ত্রিপুরাজুড়ে ঘুরেছেন এবং মানুষের অভিযোগ শুনেছেন। দুই ধাপে জনগণের বাস্তব সমস্যাগুলো কর্মকর্তাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে এবং এখন সময় এসেছে মতামত শোনার। আমরা যে সমস্ত দাবিগুলি সংক্ষিপ্ত করেছি তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং দৈনন্দিন জনজীবনের সাথে সম্পর্কিত, যোগ করেন তিনি।এদিন গণঅবস্থান মঞ্চে মানিক সরকার ছাড়াও অন্যান্য বাম বিধায়ক, সিপিআইএম, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি-এর সম্পাদকগণ সারা দিন ধরে চলা প্রতিবাদে বসে বক্তব্য রাখেন।