আগরতলা, ১৫ আগস্ট : জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই রাজ্যের উন্নয়নের সার্বিক সফলতা সম্ভব। রাজ্যের জনগণ আজ উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে অংশীদার। সকলের সুচিন্তিত পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়েই সরকার আগামীদিনে এগিয়ে চলার দিশায় কাজ করছে। মাতা ত্রিপুরাসুন্দরীর আশীর্বাদ নিয়ে সরকার রাজ্যকে দেশের সামনে উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। আজ আসাম রাইফেলস ময়দানে ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর মুখ্যমন্ত্রী সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। আসাম রাইফেলস ময়দানে স্বাধীনতা দিবসের মূল অনুষ্ঠানে কারামন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন এবং আরক্ষা ও রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের মানুষের আর্থসামাজিক বিকাশ, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রতিভার অন্বেষণ, স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণের মধ্য দিয়ে রাজ্যের অগ্রগতি ঘটছে। নীতি আয়োগ প্রকাশিত সর্বশেষ ইনডেক্স অনুসারে উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের নিরিখে ত্রিপুরা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে আজ সামনের সারিতে রয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের যথাযথ রূপায়ণের মধ্য দিয়ে রাজ্যকে মডেল রাজ্যে পরিণত করতে সরকার দায়বদ্ধ।
আসাম রাইফেলস ময়দানে ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কৃষি নির্ভর এই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনায় এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ৪১ হাজার ৭ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী উপকৃত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় উপকৃত হয়েছেন ৮ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬৯৭ জন। এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৯০৯ মেট্রিকটন আনারস দুবাই ও কাতার সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে রপ্তানি হয়েছে। কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলির বিকাশে অগ্রাধিকার দেওয়ায় রাজ্যের কৃষকগণ উপকৃত হয়েছেন ও বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছেন। রাজ্যের মোট ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৪১ হেক্টর চাষযোগ্য জমির মধ্যে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৬ হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় আনা হয়েছে। কৃষির বিকাশে রাজ্য সরকার খুব শীঘ্রই নতুন সেচ নীতি প্রণয়ন করবে। রাজ্য সরকার কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে খারিফ মরশুম থেকে ন্যূনতম সহায়কমূল্যে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করে। এখন পর্যন্ত রাজ্যে কৃষকদের কাছ থেকে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৫২১ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হয়েছে।
এরফলে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৩৯.৭২ কোটি টাকা সরাসরি প্রদান করা হয়েছে। মৎস্যচাষের মাধ্যমেও মৎস্যচাষীদের আয় যেমন বৃদ্ধি হচ্ছে তেমনি 2020-21 অর্থবছরে রাজ্যে মাছের উৎপাদনও বেড়ে হয়েছে ৭৮ হাজার ৫৭৪ মেট্রিকটন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে দুধ, মাংস, ডিমের উৎপাদন বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গোধন প্রকল্প চালুর ফলে স্ত্রী বাছুরের জন্ম বৃদ্ধি পেয়েছে। ত্রিপুরা আগর পলিসি অনুমোদন করার ফলে রাজ্যের আর্থিক প্রগতি ত্বরান্বিত হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জল জীবন মিশনে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে ৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ৪০৮টি বাড়িতে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে গ্রামীণ এলাকার ৫২.৭৪ শতাংশ ও শহর এলাকায় ৪৬.৪৬ শতাংশ বাড়ি পানীয়জল সরবরাহের আওতায় এসেছে। জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গুণগত শিক্ষার প্রসারে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ১৬টি একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি কিল্লায় একলব্য মডেল ডে বোর্ডিং স্কুলের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। জনজাতি এলাকায় যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে ও রাজ্যে গুণগত রাবার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে ২০২1-22 সালে রাজ্য সরকার চিফ মিনিস্টার রাবার মিশন প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পে আগামী ৫ বছরে রাজ্যের ৩০ হাজার হেক্টর এলাকা রাবার চাষের আওতায় আসবে। মিজোরাম থেকে আসা ৩৭ হাজার ১৩৬ জন ব্লু (রিয়াং) শরণার্থীদের রাজ্যে পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ চলছে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৬০০ কোটি টাকার প্যাকেজ প্রদান করেছে। ব্লু শরণার্থীদের পুনর্বাসন এলাকায় ২০টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর পরম্পরাগতভাবে রাজ্যের বনবাসীদের বনের উপর অধিকার নিশ্চিত করতে পাট্টা জমির সীমানা নির্ধারণের জন্য রাজ্যে বনাধিকার অ্যাক্ট চালু হয়েছে। এতে রাজ্যের বনবাসীদের বিভিন্ন সরকারি সুবিধা প্রদান করা যাবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শিল্পের বিকাশ ও বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগের ভারতীয় অংশের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে। আশা করা হচ্ছে ভারতীয় অংশের রেল সংযোগ ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে। রাজ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থাপনের প্রক্রিয়া সহজতর করার লক্ষ্যে ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিজ ফেলিসিটেশন অ্যাক্ট ২০১৮ রাজ্য সরকার চালু করেছে। এরফলে ব্যবসা ও বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সহজতর হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সারুমে স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপন এক নতুন উদ্যোগের সূচনা করেছে। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে কাজে লাগিয়ে শিল্প ও বাণিজ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি ক্ষেত্রকে আকৃষ্ট করবে। রাজ্যে রেশম চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পশ্চিম জেলার খামারবাড়িতে একটি রেশম চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের আর্থিক বিকাশ ত্বরান্বিত করতে পর্যটন শিল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বদেশ দর্শন প্রকল্পে রাজ্যের উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের উন্নয়নের কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবিলা করতে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোগত সুবিধা প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামীদিনেও রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ হাতে নেওয়া হচ্ছে। বড় ধরনের জটিল অস্ত্রোপচার এখন রাজ্যেই সম্পন্ন হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রাজ্যে একটি নতুন ডেন্টাল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে নতুন স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন করা হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নতুন ক্যাডার সৃষ্টি করা হবে। উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারে উন্নীত করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে মহিলা ক্ষমতায়ন ও দিব্যাঙ্গজনদের কল্যাণে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। মহিলা ক্ষমতায়নে ত্রিপুরা স্টেট পলিসি ফর এমপাওয়ারমেন্ট অব উইমেন-২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। রাজ্যে মহিলাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সম্প্রতি রাখী পূর্ণিমার দিনে নতুন হেল্প লাইন নম্বর চালু করা এবং রাজ্যের সমস্ত সরকারি ডিগ্রি কলেজগুলিতে ছাত্রীদের বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা-জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন প্রকল্পে ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার ২৬ জন মহিলাকে ৩৭ হাজার ২৪টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে, ১ হাজার ৬০৫টি মহিলা স্বসহায়ক গোষ্ঠীর ভিলেজ ফেডারশনে এবং ৪১টি স্বসহায়ক গোষ্ঠীকে ক্লাস্টার ফেডারেশনে সংগঠিত করা হয়েছে। দিব্যাঙ্গজন ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাগত সমৃদ্ধির জন্য সক্ষম ত্রিপুরা প্রকল্প চালু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দিব্যাঙ্গজনদের কল্যাণেও সরকার নীতি ঘোষণা করবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের প্রধান প্রধান দপ্তরগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। শীঘ্রই প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই শূন্য পদগুলি পুরণ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন রূপায়ণে ত্রিপুরা বিশেষ ক্যাটাগরি রাজ্যগুলি ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে প্রথম স্থানে এবং সার্বিকভাবে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ সহ সব রকমের উন্নতির উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাজ্যের বর্তমান ১০০টি বিদ্যালয়কে স্টেট অব আর্ট সুবিধাযুক্ত আধুনিক বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে মিশন ১০০ বিদ্যাজ্যোতি স্কুল চালু করা হয়েছে। আগামী ৩ বছর মিশন ১০০ বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এই বিদ্যালয়গুলিতে চুক্তির ভিত্তিতে কলা, নৃত্য, সংগীত, থিয়েটার প্রশিক্ষক নিয়োগের জন্য বিদ্যালয়গুলির প্রধান শিক্ষক / অধ্যক্ষদের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। চিফ মিনিস্টার্স বিএড অনুপ্রেরণা যোজনায় ইতিমধ্যেই ৭৭০ জন আবেদনকারীকে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয়েছে। আগরতলার বুদ্ধমন্দির সংলগ্ন ন্যাশনাল ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস সেন্টার ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জল সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে আজাদি কা অমৃত মহোৎসব উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশে মিশন অমৃত সরোবর প্রকল্প চালু করেছেন। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের প্রতিটি জেলার ১ একর আয়তন বিশিষ্ট ৭৫টি জলাশয়ের উন্নয়ন ও পুনর্জীবিকরণ। ৮৫৮টি অমৃত সরোবরের স্থান চিহ্নিত করা সহ ৯৫১
একর পুকুর এলাকা অমৃত সরোবর পোর্টালে আপলোড করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সহজ বিজলী হর ঘর যোজনা (সৌভাগ্য) প্রকল্পে রাজ্যে মোট ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ২৩২টি বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৩,৬০১টি সৌর বিদ্যুৎ সংযোগ আর্থিকভাবে দুর্বল অংশের লোকেদের জন্য বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ৬টি জাতীয় সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৮৮৮.৮১ কিলোমিটার। ২২৯.২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪টি জাতীয় সড়কের নীতিগত ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত প্রায় ২৪৭ কিলোমিটার সড়ক পেইভ শোল্ডার সহ ডাবল লেনে রূপান্তর করা হয়েছে। রাজ্যে জাতীয় সড়কের উন্নয়নে ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর ৯টি জাতীয় সড়ক প্রকল্পের ভার্চুয়ালী শিলান্যাস করেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়করি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে রাজ্যে হাই স্পীড ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার সারা রাজ্যে পরিকাঠামো তৈরী করছে। গ্রাম পঞ্চায়েত, ভিলেজ কমিটিস্তরে হাই স্পীড ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে ৭২৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটিকে ভারত নেট-এর অধীনে যুক্ত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলার উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং এর ফলে সাফল্যও এসেছে। যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর সারা রাজ্যে ২০৬টি কোচিং সেন্টার চালু করেছে এবং সেখানে ৬১১ জন ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টরদের যুক্ত করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমার নতুন প্রকল্প চালু করা হবে। সাংবাদিক, সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমের সহায়তার লক্ষ্যে ২০০৯ সালের এডভারটাইজমেন্ট পলিসির জায়গায় ‘ত্রিপুরা এডভারটাইজমেন্ট পলিসি ২০২১’ আনা হয়েছে এবংসেটি ২০ মে 2021 প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের পেনশনের সুবিধা পূর্বের স্কীমের জায়গায় “দি ত্রিপুরা জার্নালিস্ট পেনশন স্কীম ২০২১’ চালু করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অসংগঠিত শ্রমিক, বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা শ্রমিকদের একটি সুসংহত জাতীয় ডাটা বেস তৈরী করতে এবং বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করার লক্ষ্যে ৮:৩৩ লক্ষেরও বেশী অসংগঠিত শ্রমিকের নাম ই-শ্রম পোর্টালে নথীভূক্ত করা হয়েছে। অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী মানধন যোজনা চালু করেছে। এই প্রকল্পে শ্রমিকগণ ৬০ বছর পূর্ণ করার পর মাসে ৩,০০০ টাকা করে পেনশন পাচ্ছেন। এ পর্যন্ত রাজ্যে ৩১ হাজার ১০৯ জনের নাম এই প্রকল্পে নথিভূক্ত করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাধারণ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে এবং তা নিয়ন্ত্রনের মধ্যে। সমাজের সব অংশ বিশেষ করে দুর্গম এলাকার মানুষের সহযোগিতায় পুলিশ ২০২১ সালে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। ডাকাতি, রাহাজানি, লুট, হত্যা, মারপিট এবং মহিলাদের উপর অত্যাচারের মত অপরাধমূলক ঘটনা নিয়ন্ত্রনে রাখা হয়েছে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার সার্বিক নজরদারি বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পর্যায়ক্রমে ৪০০টি সি.সি.টিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে।
৭৬তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিভিন্ন মিশন ও প্রকল্পের ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে আরক্ষা প্রশাসনে বিভিন্ন নিয়মিত পদে নিয়োগ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি আরক্ষা প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অতি সত্বর স্পেশাল এক্সিকিউটিভ পদে নিয়োগ করা হবে। নিপুণ ত্রিপুরা নামে একটি নতুন ওয়েবসাইট এবং বিদ্যাসেতু প্রকল্প চালু করা হবে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সঙ্গে বিদ্যালয়ের উপযুক্ত সংযোগ স্থাপনের জন্য মিশন মুকল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী অক্টোবর মাস থেকে সামাজিক ভাতার পরিমাণ ২০০০ টাকা করা হবে। আই-টি ভিত্তিক টেলি-এডুকেশনের জন্য জনজাতি সম্প্রদায়ের ছাত্রীনিবাসে ১০০০ জন নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীদের প্রত্যেককে একটি করে ট্যাব দেওয়া হবে। সিনিয়র সিটিজেনদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরার জন্য একটি ডেডিকেটেড হেল্প লাইন খোলা হবে। মানসিক রোগ থেকে সুস্থ হওয়া মহিলাদের জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাফ-ওয়ে হোম স্থাপন করা হবে। তাছাড়াও আগরবাতি সেক্টরে মিনি মিশন স্থাপন করা হবে। রাবার টেপিং ও প্রসেসিংয়ে মিনি মিশন স্থাপন করা হবে। ত্রিপুরা লজিস্টিক পলিসি চূড়ান্তকরণের পর তা চালু করা হবে। দক্ষ কর্মীদের জন্য ‘কর্মক্ষেত্র’ পোর্টালের সূচনা করা হবে। উত্তর ও ধলাই জেলায় বেবি কর্ন চাষের জন্য বিশেষ মিশন নেওয়া হবে। কুমারঘাট ও ঊনকোটি জেলায় যে সমস্ত জায়গায় আনারস চাষ করা হয় সেখানে ফল প্রক্রিয়াকরণ ও গুদামজাত করার বিশেষ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। সরকারি খামারগুলিতে পশুখাদ্যের চাষ সহ সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য লিজ দেওয়ার নীতি গ্রহণ করা হবে। নগর বন যোজনায় ধর্মনগর, কুমারঘাট ও তেলিয়ামুড়ায় ৩টি নগর বন স্থাপন করা হবে। ড্রোন প্রযুক্তিতে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নরসিং গড়স্থিত ত্রিপুরা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে একটি ড্রোন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সীমান্ত এলাকায় গ্রামীণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৭৫টি সীমান্ত গ্রামকে ক্রান্তি বীরদের নামে করা হবে।
আসাম রাইফেলস মাঠে আয়োজিত ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ১৪টি প্ল্যাটুন অংশগ্রহণ করে। এগুলি হচ্ছে আসাম রাইফেলস, সিআরপিএফ, টিএসআর প্রথম ও দ্বিতীয় বাহিনী, পুলিশের পশ্চিম জেলার পুরুষ ও মহিলা বাহিনী, ট্রাফিক পুলিশ, ফরেস্ট গার্ড, হোম গার্ড (পুরুষ), এনসিসি সিনিয়র ডিভিশন বয়েজ অ্যান্ড গার্লস, বয়েজ স্কাউট, গার্লস গাইড ও এনএসএস।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা 2020 ও 2021 সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে এবং ২০২০ সালের স্বাধীনতা দিবসে কর্মজীবনে যে সমস্ত পুলিশ অফিসার ও হোমগার্ড কর্মীগণ পারদর্শিতা, উৎকর্ষতা ও সেবার পরিচয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখার জন্য রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রীর পদকে ভূষিত হয়েছেন তাদের হাতে পদক তুলে দেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আইজিপি লালমিঙ্গা দার্লং, কমানডেন্ট অরুণলাল দাস, ডিএসপি সীমা বিশ্বাস, নায়েব সুবেদার জ্ঞান প্রকাশ টোপ্পো, হেড কনস্টেবল প্রদীপ কুমার আদিত্য, হাবিলদার গণেশ চন্দ্র মজুমদার, ডিএসপি কেশব হরি জমাতিয়া, ইন্সপেক্টর সিদ্ধার্থ শংকর কর, সাব ইন্সপেক্টর গণেশ চন্দ্র দেব, অ্যাসিস্টেন্ট সাব ইন্সপেক্টর পরিমল দাস, অ্যাসিস্টেন্ট সাব ইন্সপেক্টর হরিপদ ভৌমিক, অ্যাসিস্টেন্ট সাব ইন্সপেক্টর কৃপাময় চাকমা, হোমগার্ড অখিল দেববর্মা, ইন্সপেক্টর ধ্রুবজ্যোতি দেববর্মা ও সাব ইন্সপেক্টর রীতা দেবনাথের হাতে পদক তুলে দেন।
তাছাড়াও কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বন দপ্তরের সুপ্রিয় দেবনাথকে বন রত্ন, প্রিয়লাল সেনকে ফরেস্টার অব দ্য ইয়ার, নবেন্দু ভট্টাচার্যকে শ্রেষ্ঠ অংশীদারী বনায়ন পরিচালকের পুরস্কার দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ২০২২ সালে নয়াদিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের ক্যাম্প ও প্যারেডে বিশেষ স্বীকৃতির জন্য ত্রিপুরার ১৩তম এনসিসি বাহিনীর সিনিয়র আন্ডার অফিসার পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য ও ৭১তম ত্রিপুরা এনসিসি বাহিনীর সিনিয়র আন্ডার অফিসার মালসাউ তুলাঙ্গিকে পুরস্কৃত করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী তাদের হাতে পদক ও শংসাপত্র তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে পরিবেশিত হয় দেশাত্মবোধক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।