কুরুং কুমে (অরুণাচল প্রদেশ), ২৫ জুলাই (হি.স.) : অরুণাচল প্রদেশের ভারত-চিন সীমান্তবর্তী কুরুং কুমে জেলায় নিখোঁজ ১৯ শ্রমিকের মধ্যে আরও দুজনকে জীবন্ত উদ্ধার করেছেন রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের জওয়ানরা। এনিয়ে মোট দশজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নিখোঁজদের মধ্যে মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে তিনজনের। এখনও নিখোঁজ ছয়জনকে উদ্ধার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
আজ সোমবার কুরুং কুমের জেলাশাসক বেঙ্গিয়া নিঙ্গে জানিয়েছেন, রবিবার বেলা প্রায় ১.৩০ মিনিট নাগাদ চিন সীমান্ত এলাকার হুরি ও তাপা এলাকার মধ্যবর্তী ঘন জঙ্গল থেকে আরও দুজনকে জীবন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার সাতজন এবং শনিবার সন্ধ্যায় একজনকে নিয়ে এ পর্যন্ত মোট দশজনকে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় জীবন্ত উদ্ধার করেছেন এসডিআরএফ-এর জওয়ানরা। তারা এতদিন অনাহারে এবং বিষাক্ত কীটপতঙ্গের দংশনে তাঁরা খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
গতকাল যাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে তাঁদের অসমের বাসিন্দা খলেবুদ্দিন শেখ (২৭) এবং শামিদুল শেখ (১৯) বলে পরিচয় পাওয়া গেছে। দুজনকে প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হুরিতে অবস্থিত এসবিআই সংলগ্ন মেডিক্যাল ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর দামিনে প্রাইমারি হেল্থ সেন্টারে পাঠানো হয়েছে, জানান জেলাশাসক। তিনি জানান, প্রয়োজনে তাদের উদ্ধার হওয়া দুজনের অবস্থা খুবই গুরুতর। তাই উভয়কে নাহরলগুন বা কলোরিয়াং জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলেও জানান তিনি।
জেলাশাসক বেঙ্গিয়া নিঙ্গে আরও জানান, বিষাক্ত সাপের ভয়ে গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় মনুষ সহ উদ্ধারকারী দল ফিরে এসেছে। তবে বাকি নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধারে আজ আবার উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল উদ্ধারকৃত দুই শ্রমিকের উদ্ধৃতি দিয়ে জেলাশাসক জানান, ঘন জঙ্গলে যখন তারা পথভ্রষ্ট হয়ে ঘুরছিল, তখন তাদের সঙ্গী অন্য চারজনকে পিছনে ফেলে এসেছে। কারণ তাঁদের শরীর খুবই সংকটাপন্ন হয়ে যাওয়ায় জঙ্গলে হাঁটতে পারছিল না। তাই উদ্ধারকৃত খলেবুদ্দিন শেখ এবং শামিদুল শেখদের ধারণা, তাঁরা আর বেঁচে নেই।
তিনি জানান, খারাপ আবহাওয়ার জন্য গতকাল বায়ুসেনার চপার উদ্ধার অভিযান চালাতে পারেনি। আজ আবহাওয়া অনুকূল থাকলে বায়ুসেনা চপারের সাহায্যে অপারেশন চালাবে। জেলাশাসক আরও জানান, তিনি নিজে এবং পুলিশ সুপার ও জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক কুরুংকুমে জেলা হাসপাতালে গিয়ে নিয়মিত উদ্ধারকৃতদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিচ্ছেন।
জেলাশাসক বেঙ্গিয়া নিঙ্গে গতকাল জানিয়েছিলেন, উদ্ধারকৃত পাঁচজনকে নাহরলগুনের টমো রিবা ইনস্টিটিউট অব হেল্থ অ্যান্ড মেডিক্যাল সায়েন্স (টিআরআইএইচএমএস)-এ নিয়ে ভরতি করা হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা চলছে কলোরিয়াঙের জেলা হাসপাতালে। এ পর্যন্ত যাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে তাঁদের হিকমত আলি (৩৮), ফরিজুল হক (১৮) এবং ওয়াজেদ আলি (১৯) বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া যাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে তাঁরা যথাক্ৰমে আবুল আলি, মজিদুল আলি, মনোয়ার হুসেন, জয়নার আলি, ইনামুল হুসেন, খাইরুল ইসলাম, হামিদুল হুসেন, ইব্ৰাহিম আলি, খলেবুদ্দিন শেখ এবং শামিদুল শেখ।
১৯ জন শ্রমিকের প্রায় সকলেই অসমের বঙাইগাঁও, কামরূপ, কোকরাঝাড় এবং গোয়ালপাড়া জেলার বাসিন্দা। তাঁরা সীমান্ত সড়ক সংস্থার অধীনে রাস্তা ও সেতু নির্মাণের কাজে নিযুক্ত ছিলেন, জানান জেলাশাসক বেঙ্গিয়া নিঙ্গে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, কুরুং কুমে জেলার দামিন সার্কলের হুরি এলাকায় বিআরও-এর তত্ত্বাবধানে চলমান সড়ক ও সেতু নির্মাণের কাজে গিয়ে গত ৫ জুলাই নিখোঁজ হয়েছিলেন ১৯ জন শ্রমিক। ওই দিন তাঁরা ইদ পালন করতে অসমে নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন। কিন্তু পথভ্রষ্ট হয়ে তাঁরা ঘন জঙ্গলে হারিয়ে যান। প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিল, কুমেই নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পরবর্তীতে স্পষ্ট হয়, শ্রমিকরা নদীর জলে নয়, ঘন জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছেন।