BRAKING NEWS

Bangladesh:বাংলাদেশের নড়াইলে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে বহু হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙা হল একাধিক মন্দির

ঢাকা, ১৬ জুলাই (হি.স.): বাংলাদেশে ফের শুরু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা। নড়াইলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ফের লোহাগড়ায় হিন্দু বাড়িতে হামলা ও আগুন লাগিয়ে দিল জনতা। ফেসবুকে ভুয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে নড়াইলের লোহাগড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের একাধিক বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। হিন্দুদের দোকানে লুটপাটও চালান হয়। হামলাকারীদের রোষের মুখে পরে একাধিক মন্দির ও মন্দিরের বিগ্রহ । শুক্রবার সন্ধ্যায় লোহাগড়ার দিঘলিয়া গ্রামের সাহা পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এক হিন্দু শিক্ষার্থীর বাবাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষার্থী গত ১৪ জুলাই ফেসবুকে একটি ধর্মীয় পোস্টের নিচে মন্তব্য করেন। পরের দিন বিকেলে এলাকার লোকজন তার বাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এক সময়ে তারা দিঘুলিয়াতে ৯টি বাড়ি ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। ৮টি নাট মন্দিরে হামলা হামলা চালায়। দিঘলিয়া মুল মন্দিরে হামলার ঘটায় প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। সাহা পাড়ায় ১২টি বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ১০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি লুটের অভিযোগ এসেছে। দিঘলিয়া বাজারে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩৭টি দোকান লুট ও ভাংচুর করে হামলাকারীরা। এসময় স্থানীয় স্বপন সাহার মিষ্টির দোকানেও লুটপাট চালায় তারা। আগের দিন রাত ২ টায় একটা ভূয়া ফেসবুক ব্যবহার করে এই ঘটনা ঘটানো হল বলেই অভিযোগ । খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী সেখানে পৌঁছয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে ‘গুলি ছুঁড়ে’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছে।

লোহাগড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হারান চন্দ্র জানান, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসকে ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক তরুণের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগের পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার পরে পরেই পুলিশ সেখানে পৌঁছয়। আক্রান্তের বয়ানের ভিত্তিতে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আপাতত তাদের পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এখন সবকিছু স্বাভাবিক।

নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী কাজ করছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিক্ষুদ্ধ জনতা কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। মন্দিরে ইট ছুঁড়ে। “তারা একটি বাড়িতে আগুন দেয়। আমরা গিয়ে নিভিয়ে ফেলি এবং ফাঁকা গুলি করে ছত্রভঙ্গ করি।”

স্থানীয়রা জানান, আকাশ সাহা নামে এক কলেজ ছাত্রের ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দিঘলিয়ায় শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তার গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। বিকালে উত্তেজনা আরও বাড়ে এবং সন্ধ্যায় তারা সাহাপাড়ার কয়েকটি বাড়িঘর ভাংচুর করে। পরে টিনের একটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র্যা়ব মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে, নড়াইলে লোহাগড়ায় দিঘলিয়া গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন। শনিবার দেওয়া বিবৃতিতে সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নিরাপত্তা এবং আহতদেরও চিকিৎসার দাবি জানান। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওই ঘটনার পর পুলিশ এখনও জড়িতের গ্রেফতার করতে পারেনি। উল্টো হিংসতার শিকার এক ব্যক্তি গ্রেফতার হয়ে পুলিশি হেফাজতে আছে।

বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে বলেন, রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলা, যশোরের মালোপাড়া হিন্দুদের উপর হামলা সহ বাংলাদেশ ইসলাম ধর্ম অবমাননার নামে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা নারী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের আজ পর্যন্ত কারো বিচার হয়নি। ফেসবুকে গুজব ছড়ানো অপরাধীরা সকালেই ইসলাম ধর্মের লোক ছিল। তেমনি বাংলাদেশের নড়াইলেও গতকাল শুক্রবার রাত থেকে ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা করা হচ্ছে। মূলত হিন্দুদের দেশ থেকে বিতারিত করার জন্যই এই হামলা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশে আজকের সংখ্যালঘুর বসবাস করা অনিরাপদ হয়ে উঠছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ সংখ্যালঘু হিন্দুদের সংখ্যা এসে এক শতাংশে নেমে আসবে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আরেক বিবৃতিতে বলেছে, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নতুন কিছু নয়। এর পূর্বেও আমরা এ ধরনের হামলা দেখেছি, যা অনভিপ্রেত এবং অগ্রহণযোগ্য। ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া একইধরনের অপরাধের দৃশ্যত কোনও বিচার দ্রুততম সময়ে না হওয়ায় অপরাধীরা এ ধরনের অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে।

“তাই দ্রুততার সাথে এ হামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যকীয়। আসক সেইসঙ্গে উক্ত শিক্ষার্থী, তার পরিবার ও এলাকার অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবার ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *