আগরতলা, ৪ জুলাই : সাংবাদিকতা একটি অত্যন্ত মহৎ পেশা। সংবাদমাধ্যম হচ্ছে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তাই এই মহান পেশাকে আরও সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব সাংবাদিকদেরও নিতে হবে। বর্তমান সরকার মিডিয়া বান্ধব। সংবাদমাধ্যমের উন্নয়নেও বিশেষ নজর দিয়েছে সরকার। আজ আগরতলার অরুন্ধতীনগরের সিপার্ডে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে আয়োজিত দুদিনের কর্মশালার উদ্বোধন করে একথা বলেন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য বীমায় ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পরিষেবার সুযোগ থাকবে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের সংখ্যা বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে ও সিপার্ডের সহযোগিতায় প্রথম পর্যায়ে প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে দুদিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আগামী ১১ ও ১২ জুলাই বৈদ্যুতিন প্রচার মাধ্যমের সাংবাদিক এবং ১৪ ও ১৫ জুলাই ওয়েব মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মশালায় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আরও বলেন, ডিজিটাল বা ওয়েব মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত তথ্যগত কোনও ভুল নজরে এলে তা সংশোধন করার সুযোগ থাকে। কিন্তু এটা প্রিন্ট মিডিয়াতে সম্ভব নয়। কারণ প্রিন্ট মিডিয়াতে যা প্রকাশিত হয় তা একেবারে পার্মানেন্ট বা স্থায়ী নথি হয়ে থাকে। একবার প্রকাশিত হয়ে গেলে সেটা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। তাই সমস্ত দিক বিবেচনা করে এবং সত্যতা যাচাই করেই সংবাদ পরিবেশন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার সংবাদমাধ্যমের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট আন্তরিক। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সাংবাদিকদের খবর পরিবেশন করা দরকার। নেতিবাচক মানসিকতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে নৈতিক দায়িত্ববোধ মেনে সংবাদ করার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজ্য অতিথিশালায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সাংবাদিকদের পেশাগত ক্ষেত্রে আরও উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মশালা করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির কারণে যথাসময়ে এই কর্মসূচির আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সাংবাদিকতা করা কাম্য নয়। কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে খবর করলে সেই ব্যক্তির বক্তব্যও সংবাদে থাকা উচিত। তাই এধরণের সাংবাদিকতা কোনোমতেই কাম্য নয়। এসমস্ত প্রবণতা থেকে দূরে থাকতে হবে। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী এই কর্মশালার সাফল্য কামনা করে আগামীতে এধরণের আরও কর্মসূচির আয়োজন করার উপর গুরুত্ব তুলে ধরেন।
কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি রায়পুরের কুশাভাউ ঠাকরে ইউনির্ভার্সিটি অব জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর বলদেও ভাই শর্মা সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, এই পেশায় থেকে কিভাবে মানুষের জন্য আরও ভালো কাজ করা যায় সেটা ভাবতে হবে। সমাজের জাগরণের জন্য কাজ করতে হবে। ফেইক নিউজ বা বিভ্রান্তিকর খবর থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ মিথ্যে খবর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারায়। মনে রাখতে হবে সত্য এবং তথ্য এই দুই বিন্দুর মধ্যে থেকে সাংবাদিকদের কাজ করতে হয়। সাংবাদিকদের উপর জনগণের বিশ্বাস ও অনেক আশা ভরসা রয়েছে। তাই সমাজের সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। সংবাদ মাধ্যমের প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে অটুট রাখতে হবে। মানুষের সাথে যে অন্যায় অবিচার হয় সেটা জনসমক্ষে তুলে ধরাই সাংবাদিকদের অন্যতম কর্তব্য।
কর্মশালায় আলোচনা করতে গিয়ে ভোপালের মাখনলাল চতুর্বেদী ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের ভাইস চ্যান্সেলর কে জি সুরেশ বলেন, সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির অনেক উন্নতি ও পরিবর্তন হচ্ছে। ডিজিটাল মিডিয়াও বর্তমান সময়ে অনেকটা ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এটা সত্য প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতি মানুষের বিশ্বাস এখনও অটুট রয়েছে। কারণ প্রিন্ট মিডিয়ার লেখাগুলি সংরক্ষিত থাকে। তাই প্রিন্ট মিডিয়াতে যা লেখা হয় সেটা অনেক চিন্তাভাবনা করে লেখা হয়। শ্রী সুরেশ আরও বলেন, নিত্যদিনই নতুন নতুন ঘটনা এবং পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় সাংবাদিকদের। এই পেশায় সারাজীবনই শেখার রয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক মানস পাল বলেন, সংবাদপত্র বা মিডিয়ার ক্ষেত্র প্রতিদিনই পাল্টে যাচ্ছে। তাই সময়ের সাথে সাথে নিজেদেরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৈরি রাখতে হবে। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালার প্রশংসা করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ রাখেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস। তিনি বলেন, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর সংস্কৃতির প্রসারের পাশাপাশি উন্নয়নমূলক সংবাদ পরিবেশনের কাজ করে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করেছে দপ্তর। প্রেস ক্লাবে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। অনেকদিন ধরেই সাংবাদিকদের নিয়ে বৃহত্তরভাবে কর্মশালা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু কোভিডজনিত পরিস্থিতির কারণে সময়ে সেটা করা যায়নি। তাই এবার তিন পর্যায়ে সাংবাদিকদের নিয়ে কর্মশালার ব্যবস্থা করা হলো। প্রথমে প্রিন্ট মিডিয়া, দ্বিতীয় পর্যায়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং তৃতীয় পর্যায়ে ওয়েব মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে কর্মশালার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য সিপার্ড কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সহায়তা করেছেন।