ননৈ (মণিপুর), ৩০ জুন (হি.স.) : মণিপুরের ননৈ জেলার অন্তর্গত টুপুল রেললাইন নির্মাণ ক্যাম্পে বুধবার রাতে ব্যাপক ভূমিধসের কবলে পড়ে মৃত্যবরণ করেছেন সাতজন। এখনও নিখোঁজ ৮২ জন। তাঁদের উদ্ধারে ব্যাপক তালাশি অভিযান চালিয়েছেন ভারতীয় সেনা, আসাম রাইফেলস এবং এনডিআরএফ-এর জওয়ানরা। এখন পৰ্যন্ত তাঁরা ১৯ জনকে জীবন্ত উদ্ধার করেছেন। আহতদের ননৈ আর্মি মেডিক্যাল ইউনিটে নিয়ে ভরতি করা হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। গুরুতর আহত কর্মীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ইমফলের দ্য জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স পাঠানো হয়েছে। রাজ্য সরকারের প্ৰকাশিক তথ্যের ভিত্তিতে এনডিআরএফ-এর ১২ নম্বর ব্যাটালিয়ন কর্তৃপক্ষ এই খবর নিশ্চিত করেছে।
প্ৰাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, টেরিটরিয়াল আৰ্মির মোট ৪৩ জন জওয়ান ছিলেন। এঁদের মধ্যে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। এছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে মৃত সাতজনকে। এই খবর লেখা পর্যন্ত ২৩ জন জওয়ান ও কৰ্মচারীকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ভারত ইনফ্ৰাস্ট্রাকচার প্ৰাইভেট লিমিটেডের (বিআইপিএল) চারজন কৰ্মচারী নিখোঁজ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। রয়েছেন বিশাখাপত্তনম কনস্ট্রাকশন (ভিএসসি) কোম্পানির ২৩ জন কৰ্মচারী। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে অভিযানকারী দল। এছাড়া ১৮ জন এখনও সন্ধানহীন।
তথ্য বলছে, ধসের কবলে পড়ে এখনও নিখোঁজ তিনজন রেল কৰ্মচারী। এছাড়া রয়েছেন একজন রাঁধুনিও। নিখোঁজ অন্য তিন ব্যক্তি এবং পাঁচজন গ্রামের বাসিন্দা। রয়েছেন অসমের বেশ কয়েকজন শ্রমিকও। তবে তাঁদের কয়েকজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মাটির স্তূপে তাঁদের খোঁজে তালাশি অভিযান চলছে।
এদিকে ধস-কবলিতদের উদ্ধার অভিযানের জন্য সর্বক্ষণ যোগাযোগ রেখে চলেছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী নংথমবাম বীরেন সিং। ইতিমধ্যে আজ সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন, জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। টুপুল রেলওয়ে স্টেশনের কাছে ভূমিধসের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নাকি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানান বীরেন সিং।
পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আজ সকালে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং জরুরি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে টুপুলে ভূমিধসের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেনা ও আধাসেনা এবং এনডিআরএফ-এর সহায়তায় নিখোঁজদের উদ্ধার করতে তল্লাশি অভিযান জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করার জন্য ডাক্তারদের এক বড় দল সহ অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। নিখোঁজদের যাতে সুস্থ দেহে উদ্ধার করা যায়, তার জন্য ঈশ্বরের কাছে সর্বস্তরের জনগণকে প্রার্থনা করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং।
তিনি জানিয়েছেন, এনডিআরএফ-এর একটি দল উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছে। আরও দুটি দল ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্ৰী আরও জানান, ইমফল-জিরিবাম নির্মীয়মাণ রেললাইনের নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে টুপুল রেলস্টেশনের কাছে ভারতীয় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত তাঁদের ক্যাম্পের ওপরই ধস পড়ে।
এদিকে ননৈয়ের জেলাশাসক হাউলিয়ানলাল গুইতে ঘটনা সম্পর্কে জানান, টুপুল ইয়ার্ড রেলওয়ে নির্মাণ ক্যাম্পে গতকাল মধ্যরাতে ভূমিধসের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তামেংলং এবং ননৈ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইজেই নদীর গতিপথকে বাধাগ্রস্ত করেছে ধসের মাটি। নদীতে একটি বাঁধ তৈরি করে ফেলেছে ধসের মাটি। দুর্যোগ-পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জেলাশাসক সাধারণ জনগণকে, বিশেষ করে শিশুদের নদীর ধারে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন, জানান তিনি।
ননৈ-এর সদর মহকুমাশাসক সলোমন এল ফিমেট জানান, এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন বহুজন। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৮২ জন এখনও নিখোঁজ। মহকুমাশাসক জানান, ইতিমধ্যে জীবিতাবস্থায় ১৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের ননৈ আর্মি মেডিক্যাল ইউনিটে ভরতি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নিখোঁজদের উদ্ধারে নেমেছেন ভরতীয় সেনা, আসাম রাইফেলস এবং এনডিআরএফ-এর জওয়ানরা। হতাহত এবং নিখোঁজদের বেশিভাগ রেলওয়ে লাইন নির্মাণে নিয়োজিত আধিকারিক-শ্রমিক এবং সেনা জওয়ান রয়েছেন, নিশ্চিত করেছেন তিনি।
উত্তরপূর্ব রেলের সিপিআরও সব্যসাচী দে জানান, খারাপ আবহাওয়ার দরুন ভূমিধস কবলিত এলাকায় উদ্ধারকার্যকে ব্যাপক প্রভাবিত করছে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিপাতের জন্য ব্যাপক ভূমিধস হয়েছে। ফলে চলমান ইমফল-জিরিবাম নতুন লাইন প্রকল্পের টুপুল স্টেশন ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিধসে নবনিৰ্মিত ট্র্যাক এবং নির্মাণ শ্রমিকদের ক্যাম্পও সাফ হয়ে গেছে। উদ্ধার অভিযান চলছে, জানান এনএফ রেলওয়ের সিপিআরও।
সেনাবাহিনীর জনসংযোগ আধিকারিক জানান, ইমফল-জিরি ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে এ মুহূর্তে জনসাধারণকে চলাচল না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এখন পৰ্যন্ত তাঁরা ১৯ জনকে উদ্ধার করেছেন। আহতদের ননৈ আর্মি মেডিক্যাল ইউনিটে নিয়ে ভরতি করা হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। গুরুতর আহত কর্মীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ইমফলের দ্য জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স পাঠানো হয়েছে।