১ জুলাই থেকে শুরু খার্চি উৎসব, প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে

আগরতলা, ২৮ জুন : প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হচ্ছে ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী খার্চি উৎসব ও মেলা। উ‍ৎসবস্থল আগরতলার চতুর্দশ দেবতা মন্দিরে এখন প্রস্তুতির কার্যক্রম চলছে। ১ থেকে ৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে এই উৎসব। ১ থেকে ৭ জুলাই পুরানো হাভেলিতেশুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী খার্চি উৎসব ও মেলা। মেলা কে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর করে তোলার জন্য চলছে শেষ প্রস্তুতির কাজ। মন্দির প্রাঙ্গনের সমস্ত মন্দির নতুন সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। শেষ তুলির টানে মন্দির প্রাঙ্গণ দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠছে।

গত দু’বছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত কারণে মেলা ও উৎসবে তেমন সমাগম হয় নি। স্বাভাবিক কারণেই এ বছর মেলা ও উৎসব আনন্দ মুখর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রস্তুতি কমিটি ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মেলা ও উৎসব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন রাজ চন্তাই।রাজন্য আমলে শুরু হওয়া এই মেলা উত্তরপূর্ব ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন মেলা। প্রতি বছরই মেলায় লোক সমাগম বাড়ছে।

ত্রিপুরার পাশাপাশি আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেলায় জড়ো হয় মানুষ।এ বছর এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আগরতলা শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরের এই পুরাতন আগরতলা এক সময় এখানকার রাজধানী ছিল, যার অপর নাম পুরাতন হাভেলী। সেখানে স্থাপন করা হয়েছিল তাদের ১৪ জন কুল দেবতাকে। তাই এর নাম চতুর্দশ দেবতা বাড়ি।  পরবর্তী রাজারা রাজধানী স্থানান্তর করে বর্তমান আগরতলায় নিয়ে এলেও তাদের কুলদেবতারা সেখানে রয়ে যায়।

এই ১৪ জন দেবতার মধ্যে সারাবছর মাত্র তিনজন দেবতার পূজা হয়। বাকিদের মন্দিরে সিন্ধুকের ভেতরে রাখা হয়। শুধুমাত্র খার্চি উৎসবের সাতদিন মোট ১৪ জন দেবতার পূজা হয় ও পূণ্যার্থীদের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে এই মন্দিরের পূজা থেকে শুরু করে উৎসবের যাবতীয় খরচ আসে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে।এর পেছনেও একটি সুন্দর ইতিহাস রয়েছে। ভারতের স্বাধীনতার সময় ত্রিপুরা ছিল রাজন্য শাসিত স্বাধীন দেশীয় রাজ্য। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ত্রিপুরা ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে যোগ দেয়।

রাজতন্ত্রের অবসান ও গণতন্ত্রের সূচনায় রাজ্যের মানুষের দায়িত্ব চলে যায় ভারত সরকারের ওপর। তখন একটি প্রশ্ন সামনে আসে জনগণের দায়িত্ব তো নিয়ে নিলো দেশের সরকার কিন্তু রাজকোষ থেকে যে সব মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে তার দায়িত্ব কে নেবে? তখন সিদ্ধান্ত হয় যে রাজকোষ থেকে পরিচালিত সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেবে ত্রিপুরা সরকার। সেই থেকে এখনও এই রীতি চলে আসছে। মন্দিরের নিত্য পূজা থেকে উৎসবের যাবতীয় খরচ বহন করে রাজ্য সরকার।সপ্তাহব্যাপী খার্চি পূজা ও উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। মন্দির প্রাঙ্গণের সমস্ত মন্দিরগুলি নতুন সাজে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে।