লন্ডন, ১৪ জুন (হি.স.) : ইউক্রেন সংকটের সময় ইউরোপে ঐক্য বজায় রাখার বাড়তি চাপ সত্ত্বেও ব্রিটেন এবার সরাসরি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউই)-এর সঙ্গে সংঘাতের পথে অগ্রসর হচ্ছে৷ ইইউ ত্যাগ করার সময় ২০১৯ সালের ব্রেক্সিট চুক্তি মেনে নিয়ে সেই বোঝাপড়াকে বিশাল সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেও এখন সেটি অমান্য করতে চাইছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার৷ উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রোটোকলের অংশবিশেষ পরিবর্তন করতে ব্রাসেলসের উপর চাপে কাজ না হওয়ায় ব্রিটেন একতরফাভাবে কিছু নিয়ম পরিবর্তন করতে সংসদের নিম্ন কক্ষে আইনি খসড়া পেশ করেছে৷ সেই সঙ্গে বিরোধ মেটাতে ইইউ আদালতের এখতিয়ারও চ্যালেঞ্জ করছে জনসন সরকার৷
বলা বাহুল্য, ইইউ ব্রিটেনের এমন একতরফা পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে৷ ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারশ শেফচোভিচ জানিয়েছেন, লন্ডনের এমন উদ্যোগের পর ব্রাসেলসের যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে৷ তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল নিয়ে নতুন করে আলোচনার সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, শর্ত ভঙ্গ করলে ইইউ ব্রিটেনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে৷ ব্রিটেন থেকে আমদানির উপর শাস্তিমূলক শুল্ক বসানো থেকে গোটা ব্রেক্সিট চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ব্রাসেলস৷
পূর্ণ মাত্রার বাণিজ্য যুদ্ধ সম্পর্কে শিল্প ও বাণিজ্য জগত দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছে৷ ইইউ ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে৷ উত্তর আয়ারল্যান্ডে নাজুক শান্তি প্রক্রিয়াকে কোনো রকম হুমকির মুখে দেখতে চায় না ওয়াশিংটন৷ জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ব্রিটেনের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, সে দেশ বিনা কারণে চুক্তি ভঙ্গ করার উদ্যোগ নিচ্ছে৷
ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেন, তিনি ইইউ-র সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চান৷ তবে ব্রাসেলসকেও উত্তর আয়ারল্যান্ডের কঠিন সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করার সদিচ্ছা দেখা হবে৷ জাতীয় স্তরে আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তার সরকার অত্যন্ত ‘সিরিয়াস’৷ কয়েক মাস পর সেই প্রক্রিয়া শেষ হলে খসড়াটি আইনে পরিণত হবে বলে লন্ডন আশা করছে৷
উল্লেখ্য, ইইউ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হবার পর থেকেই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী জনসন উত্তর আয়ারল্যান্ড সংক্রান্ত বোঝাপড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন৷ সেই প্রদেশে আঞ্চলিক নির্বাচনের পর ‘গুড ফ্রাইডে’ চুক্তি অনুযায়ী সব পক্ষকে নিয়ে সরকার গঠনে চলমান অচলাবস্থার পর জনসন বিষয়টি নিয়ে নতুন করে সরব হয়ে উঠেছেন৷ উত্তর আয়ারল্যান্ডে শান্তির স্বার্থেই আন্তর্জাতিক চুক্তির মধ্যে ‘সামান্য’ রদবদল করা প্রয়োজন বলে তিনি জোর দিচ্ছেন৷
ব্রেক্সিট চুক্তি অনুযায়ী উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে শুল্ক সীমা কার্যকর রয়েছে৷ উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ইইউ সদস্য আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সীমান্ত উন্মুক্ত রয়েছে৷ জনসন সরকারের বিতর্কিত আইন কার্যকর হলে সেই মৌলিক বোঝাপড়া ভেঙে পড়বে৷ ব্রিটেন থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে পণ্য চলাচল সহজ করতে ‘গ্রিন চ্যানেল’ সৃষ্টি, কর সংক্রান্ত নিয়মে পরিবর্তন এবং ইইউ আদালতের এক্তিয়ার শেষ করতে চায় জনসনের সরকার৷