হাফলং (অসম), ১৩ জুন (হি.স.) : লামডিং-বদরপুর পাহাড়লাইনে ট্রেন চলাচল কবে শুরু হবে, রয়েছে অনিশ্চয়তা। কবে নাগাদ এই রেলপথ সচল হয়ে উঠবে তা এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ।
আগামী ১৫ জুন থেকে শিলচর-নিউহাফলং স্টেশনের মধ্যে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৫ জুন থেকে শিলচর-নিউহাফলঙের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের কোনও সম্ভাবনা নেই বলে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। কেননা, নিউ জাটিঙ্গা লামপুর ও নিউ হাফলঙের মধ্যে ১০৮ কিলোমিটার অংশের ধস এখনও সরানো সম্ভব হয়নি। ওই ১০৮ কিলোমিটার অংশে রেল লাইনের ঠিক উপরে রয়েছে ৫৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। রেললাইনের পাশাপাশি জাতীয় সড়কের ওই অংশ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।
জাতীয় সড়কের ওই অংশটি সিকিং জোন। তাই ওই অংশে রাস্তা ক্রমশ বসে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় রাস্তার ওপরে বিদ্যমান পাহাড় কেটে রাস্তা সচল করার যতই চেষ্টা করা হচ্ছে ততই রাস্তাটি বসে মাটি-পাথর এসে পড়ছে রেল লাইনের উপর। যার দরুন নিউ জাটিঙ্গা লামপুরের ১০৮ কিলোমিটার অংশ ধসমুক্ত করতে সক্ষম হয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।
নিউ জাটিঙ্গা লামপুরের ১০৮ কিলোমিটার অংশ ধসমুক্ত করতে কম করে আরও চার-পাঁচ দিন সময় লাগতে পারে, যদি আবহওয়া অনুকূলে থাকে। এই অবস্থায় আগামী ১৫ জুন থেকে শিলচর-নিউ হাফলঙের আংশিক অংশে আপাতত ট্রেন চলার কোনও সম্ভাবনাই নেই বলে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের সূত্রটি জানিয়েছে।
তাছাড়া লামডিং-বদরপুরের মধ্যে আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে ট্রেন চলাচল নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ কাজের যা গতি তাতে এই ধারণাই হচ্ছে। দাওটুহাজা-ফাইডিং ও মাহুরের মধ্যে চারটি জায়গার অবস্থা খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এই চারটি জায়গা আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে মেরামতি করে ঠিক করে তোলা প্রায় অসম্ভব। তাড়াহুড়ো করে জোড়াতালি দিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেন চালানোর চেষ্টা করলে আবারও বৃষ্টি হলে এর চেয়ে বেশি বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
লামডিং-বদরপুর পাহাড়লাইনে রেলপথ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে এবং কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি সুদর্শন নায়েকের সুপারিশ না মেনে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক চাপে রেলের আইন ১৯৮৯ ২২/(১) ধারা না মেনে এই রেলপথে ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর ট্রেন চলাচল শুরু করে যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে এনিয়ে অবিসা-র মুখ্য আহ্বায়ক বাহারুল ইসলাম বড়ভুইয়াঁ গৌহাটি হাইকোর্টে দায়ের করেছিলেন এক পিআইএল। এই পিআইএল নিয়ে হাইকোর্ট রেল মন্ত্রকের সচিব রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান ও উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের নির্মাণ শাখার জেনারেল ম্যানেজারকে নোটিশ জারি করেছে এবং আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে গৌহাটি হাইকোর্ট।
তাই এবার জোড়াতালি দিয়ে কোনও রকমে ট্রেন চালানোর চেষ্টা করলে এতে বিপদ বাড়তে পারে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষের। কারণ এই ব্রডগেজ নির্মাণকালে বিশেষজ্ঞদের কোনও পরামর্শ উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের নির্মান শাখা মেনে চলেনি। তাছাড়া সে সময় প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর অব অডিট তাঁর রিপোর্টে মাহুর থেকে ডিটেকছড়া ডাইভার্শন অংশে জিও টেকনিক্যাল পরীক্ষা করা হয়নি বলে উল্লেখ করার পরও রেলেওযের নির্মাণ শাখা এ সব উপেক্ষা করেই রেলপথ নির্মাণ করেছে। যার দরুন লামডিং-বদরপুর ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হওয়ার সাত বছরের মধ্যেই রেলপথটি সম্পূর্ণ রূপে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে।
আর এর জন্য মূলত উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের নির্মাণ শাখাকে দায়ী করে বিস্তর অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের নির্মাণ শাখার চূড়ান্ত গাফিলাতির দরুন গত একমাস থেকে ডিমা হাসাও জেলা সহ বরাক উপত্যকার তিন জেলা ও পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরা, মণিপুর (একাংশ) মিজোরামের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।