BRAKING NEWS

Tanya Ayushi:লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সাফল্য ধরা দেবেই, করিমগঞ্জে বলেছেন সদ্য-ইউপিএসসি উত্তীর্ণ বরাক-তনয়া আয়ূষী

করিমগঞ্জ (অসম), ১২ জুন (হি.স.) : যে কোনও বিষয়ে সাফল্য পেতে হলে একাগ্রতা, দৃঢ় সংকল্প এবং কঠোর অধ্যাবসায় অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কর্ম সম্পাদন করলে সাফল্য আসতে বাধ্য। করিমগঞ্জ শহরে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেন ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি)-এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বরাক-তনয়া আয়ূষী কালোয়ার। সিটিজেন অ্যাকশন ফোরাম এবং রবীন্দ্র সদন গার্লস কলেজের যৌথ ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আয়ূষীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

শনিবার রবীন্দ্র সদন মহিলা কলেজে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আগামী দিনে তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে গণতন্ত্রের মূল্যবোধ জাগ্রত হবে এবং বরাকবাসীর মুখ আরও উজ্জ্বল হবে বলে উপস্থিত সকলেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। জেলার নির্বাচন আধিকারিক তথা আয়ূষীর বড় বোন জাগৃতি কালোয়ার‌ও এদিনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সর্বভারতীয় প্রশাসনিক এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধা বিপত্তির মোকাবিলা করতে হয়েছে।

এ সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করতে গিয়ে আয়ূষী জানান, লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সাফল্য একদিন ধরা দেবেই। তবে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায় এবং ধৈর্যই হল সফলতা অর্জনের মূল চাবিকাঠি। একবার বিফল হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে চলবে না, আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সভায় আয়ূষী স্পষ্ট জানান, ২০০০ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি। এতে তাঁর মধ্যে জেদ আরও চেপে বসে। বেঙ্গালুরুতে তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে ঘরে বসে আরও বেশি করে পড়াশোনা ও পরিশ্রম করতে শুরু করেন। কোচিঙের জন্য কোথাও যাননি। একমাত্র কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং মোবাইলকে সঙ্গী করে বাড়িতে বসেই শুরু করেন প্রস্তুতিপর্ব।

তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ইউপিএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়া। অনেকে বলেছিলেন, ইউপিএসসিতে গুয়াহাটি পরীক্ষা কেন্দ্রের কোনও পরীক্ষার্থীকে সাফল্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কিন্তু তিনি কারও কথায় কান না দিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রস্তুতি শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত একাগ্রতা, ধৈর্য ও সাধনার জন্য‌ই সর্বভারতীয় এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হন।

রাজ্যের দুজন ইউপিএসসিতে রেঙ্ক পেয়েছেন। এর মধ্যে বরাকের আয়ূষী কালোয়ার একজন। আগামী দিনে বরাক থেকে ন্যূনতম দশজন তরুণ-তরুণীকে ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফলতার জন্য এখন থেকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান আয়ূষী।

সিটিজেন অ্যাকশন ফোরামের সভাপতি হবিবুর রহমান চৌধুরীর পৌরোহিত্য অনুষ্ঠিত এদিনের সংবর্ধনা সভায় প্রবীণ সাংবাদিক তথা সমাজসেবী সতু রায় বলেন, পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনামলে যে সকল প্রশাসনিক আধিকারিকরা জনগণের উপর অত্যাচার ও নিপীড়ন বেশি করতেন, তাঁদেরকে পদোন্নতির মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হত। সে সময় সাদা চামড়ার প্রশাসনিক আধিকারিকরা নিচুতলার লোকদের উপর জুলুমবাজি করার মানসিকতা নিয়েই চেয়ারে বসতেন। বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতবর্ষে ইউপিএসসি পরীক্ষা নিয়ে আইএএস কিংবা আইপিএস আধিকারিকদের জন্ম দেওয়া হলেও এখানে গণতন্ত্রের মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া হয় না। যার ফলে আজ চতুর্দিকে মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে। বিগত দিনে এই জেলায় বহু আইএএস এবং আইপিএস আধিকারিকরা এসেছেন, যাঁরা অনেকেই অগণিত মানুষের চোখের জল নিয়ে ফিরে গেছেন, আবার অনেকে মানুষের চোখের বালি হয়ে অন্যত্র বদলি হয়ে গিয়েছেন। আয়ূষী প্রকৃতার্থে একজন সফল আইএএস আধিকারিক হয়ে মানুষের জন্য কাজ করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন প্রবীণ সাংবাদিক তথা সমাজসেবী সতু রায়।

করিমগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক মোস্তফা আহমেদ বলেন, বিশ্বে জনসংখ্যা দ্রুতহারে বাড়লেও, প্রকৃত মানুষের সংখ্যা সেই তুলনায় বাড়ছে না। বর্তমান বিশ্বে প্রকৃত মনুষ্যত্বের এক চরম অবক্ষয় চলছে। বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, বরাক উপত্যকার নবপ্রজন্মের সামনে আয়ূষী এক রোলমডেল হয়ে থাকবেন। কঠোর অধ্যাবসায় ও একাগ্রতাই যে জীবনে সাফল্যের একমাত্র চাবিকাঠি, বর্তমান প্রজন্মের কাছে আয়ূষী কালোয়ার এক জ্বলন্ত উদাহরণ বলে এদিনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন বিধায়ক কমলাক্ষ।

পুলিশ সুপার পদ্মনাভ বরুয়া বলেন, ইউপিএসসি পরীক্ষা সম্পর্কে কোনও এক সময় তরুণ মেধাবীদের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক তাড়া করত। এমন-কি অসমের বহু এলাকায় এই পরীক্ষার নামই শোনা যেত না। গত দশ বছর থেকে ধীরে ধীরে এই পরীক্ষায় বসার কিছুটা আগ্রহী জন্মেছে রাজ্যের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। সমগ্র ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দেখা যায় উত্তরপ্রদেশ কিংবা মণিপুর থেকে এ রাজ্যের আইএএস কিংবা আইপিএস ক্যাডারের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আয়ূষীর মতো আরও তরুণ-তরুণী বরাক তথা করিমগঞ্জ থেকে ইউপিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান পুলিশ সুপার।

সংবর্ধনা সভায় আয়ূষীর উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য পেশ করেন বদরপুরের বিধায়ক আব্দুল আজিজ, প্রবীণ আইনজীবী রশিদ আহমদ, রবীন্দ্র সদন গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ ড. অশোককুমার দাস, আইপিএস আধিকারিক শীতল কুমার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন বিশিষ্ট সমাজসেবী মহশ্বেতা চক্রবর্তী। স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে আয়ূষীকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন কবি শিবানী গুপ্ত। উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন প্রিয়াঙ্কা দাসচৌধুরী। সংবর্ধনা সভার শেষ পর্বে জেলার বিভিন্ন স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা আয়ূষীর কাছে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে বহু বিষয়ে প্রশ্ন করেন। আয়ূষীও যথাসম্ভব উৎসাহী পড়ুয়াদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন।

উল্লেখ্য সদ্য প্রকাশিত ইউপিএসসিতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বরাকের এই কৃতী ও মেধাবী তরুণী কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর এই অসাধারণ সাফল্যে সমস্ত বরাকবাসী অত্যন্ত গর্বিত, আনন্দিত এবং আপ্লুত। কারণ এই উপত্যকা থেকে এর আগে গুরুসদয় দত্ত এবং অরুণোদয় ভট্টাচার্য সর্বভারতীয় এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি সর্বোচ্চ পদ অলংকৃত করলেও এ যাবৎ কোনও মহিলা ইউপিএসসি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। তাই আয়ূষীকে নিয়ে বরাকের বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে একটু বেশি উৎসাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *