Encounter : এনকাউন্টারে মৃত্যু প্রায় ৪৩টি মামলায় অভিযুক্ত কয়লা মাফিয়া, জীবিতাবস্থায় নিজের মৃত্যুর প্রমাণপত্রধারী করিমগঞ্জের আব্দুল আহাদের

করিমগঞ্জ / হাইলাকান্দি, ১ মে (হি.স.) : হাইলাকান্দিতে পুলিশের এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে একাধারে ৪৩টি মামলায় অভিযুক্ত কয়লা মাফিয়া, জীবিতাবস্থায় নিজের মৃত্যুর প্রমাণপত্রধারী করিমগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুল আহাদ চৌধুরীর। গতকাল শনিবার রাত প্রায় ১:৩০টা নাগাদ হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী লক্ষ্মীনগর এলাকায় সংঘটিত এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে তার। পরে আহাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে হাইলাকান্দির সন্তোষকুমার রায় অসামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখানে কর্তব্যরত ডাক্তার আহাদকে মৃত বলে ঘোষণা করলে মৃতদেহের ময়না তদন্ত করতে হাসপাতালে মৰ্গে রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্ৰিল হাইলাকান্দি জেলার অন্তর্গত লালা থানাধীন গাগলাছড়ায় ভুয়ো নথির সঙ্গে একটি কয়লা বোঝাই ট্ৰাক বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। ওই ঘটনার সূত্র ধরে গত শুক্রবার রাতে করিমগঞ্জের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সুতারকান্দিতে তার নিজের বাড়ি থেকে লালা থানার ওসি আলংবার বসুমতারির নেতৃত্বে পুলিশের এক দল আব্দুল আহাদ চৌধুরীকে আটক করেছিল। আটক করে তাকে নিয়ে আসা হয় লালা থানায়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য লকআপ থেকে বের করে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে লালা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। তখন কয়লা সিন্ডিকেটের মূল চাঁই আহাদ কৌশলে হ্যান্ডকাপ সহ পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে গা ঢাকা দেয়।

ফেরার আহাদকে পাকড়াও করতে এর পর থেকে কালোঘাম ছুটিয়েছে হাইলাকান্দি জেলা পুলিশের দল। ইত্যবসরে সতর্ক করে দেওয়া হয়ে হাইলাকান্দি সহ পার্শ্ববর্তী করিমগঞ্জ জেলা এবং মিজোরাম পুলিশকে। অবশেষে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে গতকাল রাতে হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ জেলা সীমান্তবর্তী লক্ষ্মীনগর এলাকায় পুলিশের বিশাল দল অভিযান চালায়। পুলিশ দেখে ফের পালানোর চেষ্টা করে আব্দুল আহাদ। তখন তাকে রুখতে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে সে ধরাশায়ী হয়।

আব্দুল আহাদ মেঘালয়, মিজোরাম সহ দক্ষিণ অসমের বরাক উপত্যকার কয়লা-ডন বলে পরিচিত ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪২০/৪৭১/৪৮৬/৩২৩/৫০৬ ধারায় করিমগঞ্জ সদর থানায় ৬৪৭/২০১৮ নম্বরে, বদরপুর, হাইলাকান্দির লালা থানায় একটি করে, কাটিগড়া থানায় তিনটি মামলা থাকার পাশাপাশি করিমগঞ্জের মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে আছে আরও তিনটি মামলা। কেবলমাত্র করিমগঞ্জ থানায় রয়েছে ২৯-এর বেশি মামলা। এছাড়া মিজোরামের কানমুন থানায়ও ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪৮৯ (বি) / ৪৮৯ (সি) ধারায় ২১/২০০১ নম্বর সহ তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ২০১৮ সালের ৬ তারিখ এক মামলার জামিন নিতে এসে করিমগঞ্জ আদালত চত্বরে সর্বপ্রথম পুলিশের জালে পড়েছিল কয়লা মাফিয়া আব্দুল আহাদ চৌধুরী। বেশ কয়েক বছর ধরে অবৈধ কয়লা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জেলা করিমগঞ্জের পাশাপাশি বরাক উপত্যকা-সহ গোটা রাজ্যে। বহু মামলায় অভিযুক্ত কয়লা মাফিয়া আব্দুল আহাদ চৌধুরীকে পরবর্তীতে শিলচরের কেন্দ্রীয় জেলে পাঠানো হয়। ওই বছরই ১২ জুলাই করিমগঞ্জের সুতারকান্দিতে আব্দুল আহাদের বাড়িতে দিনভর তল্লাশি চালিয়ে বহু চাঞ্চল্যকর নথিপত্র ও তথ্য উদ্ধার করেছিল করিমগঞ্জের তদানীন্তন পুলিশ সুপার গৌরব উপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বাহিনী (আইপিএস গৌরব উপাধ্যায় এখন হাইলাকান্দির পুলিশ সুপার)।

ওই সব চাঞ্চল্যকর নথিপত্র হাতে পেয়ে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছিল স্বয়ং পুলিশ কর্তাদের। কারণ আহাদের দৈনন্দিন খরচের হিসাব-খাতায় নাম রয়েছে বেশ কয়েকজন বড়-বড় নেতা, বিধায়ক, পুলিশ আধিকারিক-সহ বিএসএফ ও পদস্থ সরকারি আধিকারি-সহ ১৯ জনের। এঁদের সঙ্গে দহরম-মহরম ছিল আব্দুল আহাদ চৌধুরীর। এই তালিকায় নাম রয়েছে তিন বিধায়ক, করিমগঞ্জের জেলাশাসক (তদানীন্তন), ডিআইজি (তদানীন্তন), কাছাড়-করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির পুলিশ সুপার (তদানীন্তন), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (তদানীন্তন), মেঘালয়ের এক পুলিশ সুপার (তদানীন্তন) থেকে আরম্ভ করে শাসক-বিরোধী বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এবং মেঘালয়ের ডিরেক্টর অব মাইন অ্যান্ড মিনারেল কর্তৃপক্ষ-সহ ১৯ জনের।

আহাদের বাড়ি থেকে উদ্বারকৃত তথ্যে কোন কোন তারিখে কে বা কারা তার কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন সব হিসাব রয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়, কয়লা মাফিয়া আব্দুল আহাদ চৌধুরী জীবিতাবস্থায় নিজের মৃত্যুর প্রমাণপত্র বের করে নিয়েছিল। সে জানত, যে কোনও সময় তার উপর দুর্নীতি-বিরোধী খাঁড়ার ঘা পড়তে পারে। ওইদিন তার বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল কম্পিউটার, সিপিইউ ইত্যাদি সামগ্রীও। আহাদের মৃত্যুতে বরাকে অবৈধ কয়লা বাণিজ্য কিছু হলেও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *