আগরতলা, ২৯ এপ্রিল (হি. স.) : মহিলাদের অধিকার রক্ষায় শুধু মুখের কথায় বিশ্বাসী নয় বর্তমান সরকার। একে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে কার্যকর করে দেখিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। যে কারণে চাকরির ক্ষেত্রে ত্রিপুরার মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্য সফরে এসে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের ঘোষণা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১ নম্বর হলে ৫টি কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা ও বিভিন্নস্তরের কর্মচারিদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মতবিনিময় সভায় অংশ নেন বীরবিক্রম মেমোরিয়াল কলেজ, ত্রিপুরা সরকারি আইন কলেজ, এমবিবি কলেজ, রামঠাকুর কলেজ এবং উইমেন্স পলিটেকনিকের পড়ুয়ারা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীরই লক্ষ্য থাকে পড়াশুনার মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা। কারোর লক্ষ্য থাকে নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলার। যে কোনও বিষয়ে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে ব্যক্তিত্ব অত্যন্ত আবশ্যক। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে এখন প্রত্যেকেই প্রধানমন্ত্রীর টুইট দেখে থাকেন। যেটা আগে হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের সাধারণ মানুষের কৃতিত্বের কথা বিভিন্ন সময়ে তার মন কি বাত অনুষ্ঠানে তুলে ধরছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানুষের সাফল্যের দিকগুলির কথা মন কি বাতে তুলে ধরেছেন। সেই সাথে ইন্টারনেট ব্যবস্থা, ডিজিটালাইজেশন, সিএসসি-র মতো ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন তিনি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যান সেখানেই বিভিন্ন প্রসঙ্গে তিনি ত্রিপুরার নাম উত্থাপন করেন। যেটা আমাদের কাছে খুবই গর্বের। বর্তমান সময়ে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বের ভাবমূর্তি এবং গ্রহণযোগ্যতা পরিস্ফুট হয়েছে। এজন্য ভাবী প্রজন্মও রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে।
তাঁর দাবি, নারীদের অধিকার রক্ষায় ত্রিপুরা সরকার আন্তরিক। এরজন্য শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ না থেকে আইনিভাবে মহিলাদের অধিকার সুরক্ষিত করার প্রয়াস নিয়েছে বর্তমান সরকার। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মহিলাদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ সহ অন্যান্য অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে মহিলাদের। অধিকার বিষয়ে সচেতন না হলে এর সুফল পাওয়া যাবে না। পাশাপাশি মহিলাদের জন্য বাজেটেও আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। শুধু পুরুষরাই নয় মহিলারাও যাতে জমির মালিক হতে পারেন এজন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। এক্ষেত্রে স্টাম্প ডিউটিতে মহিলাদের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে স্বসহায়ক গ্রুপ গঠনের মাধ্যমেও মহিলারা রোজগারের রাস্তা খুঁজে পেয়েছেন। এখন রাজ্যে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার মহিলা স্বসহায়ক দলের মাধ্যমে উপার্জন করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র দপ্তরে মহিলাদের জন্য শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এজন্য ১০ টিএসআর-এর রাইফেলম্যান পদে ১০ শতাংশ মহিলা চাকরি পেয়েছেন। এমএ, এমফিল পাশ করা মেয়েও টিএসআর-এর রাইফেলম্যান পদে চাকরি নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু নেতিবাচক চিন্তাধারা নয় ইতিবাচক চিন্তাধারাকে সামনে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এখন কন্যা সন্তানকে উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখা হয় না। কারণ মহিলারাও পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে ত্রিপুরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। রাজধানী সংলগ্ন আনন্দনগরে গড়ে উঠছে আন্তর্জাতিক মানের ন্যাশনাল ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি। এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠলে দেশ বিদেশ থেকে ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়তে আসবে এবং পড়ার সুযোগ পাবে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ছাত্রছাত্রী পঠন পাঠনের সুযোগ পাবে। এটি গড়ে উঠলে ত্রিপুরাতে অনেক অপরাধ কমবে। এই প্রসঙ্গে সাইবার অপরাধের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ ফরেন্সিক ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে তখন খুব দ্রুতই তদন্তের কাজ করা সম্ভব হবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত শিক্ষক শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভালো শিক্ষক যিনি হন তিনি সারা জীবনে ভালো ছাত্র থাকেন। আর এভাবেই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এদিন মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর বক্তব্যও মন দিয়ে শোনেন। আগামীদিনে কোন কোন ছাত্রছাত্রীর রাজনীতিক এবং মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আকাঙ্খা রয়েছে সেটাও সভায় উপস্থিত পড়ুয়াদের কাছ থেকে জেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী। এবিষয়ে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীরাও সবিনয়ে তাদের মতামত উপস্থাপন করে। এর পাশাপাশি ব্যক্তি জীবনে কার কার ভালো গুণ রয়েছে সে বিষয়েও ছাত্রছাত্রীদের মতামত জানেন তিনি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত অতিথিদের সামনে সভায় আবৃত্তি, নাটক, যোগা করে দেখায় তিনজন ছাত্রছাত্রী। পরে তাদের প্রত্যেকের সাথে মুখ্যমন্ত্রী সেলফিও তোলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঞ্চালনায় গোটা মতবিনিময় সভাটি মনমুগ্ধকর হয়ে উঠে।