BRAKING NEWS

Arrested :বগটুই গণহত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার আরও এক, এখনও পলাতক মূল অভিযুক্ত

রামপুরহাট, ১০ এপ্রিল (হি. স.) : বগটুই গণহত্যাকাণ্ডে সিবিআইয়ের জালে ধরা পড়ল আরও একজন। ধৃতের নাম সমীর শেখ ৷ রবিবার তাকে গ্রেফতার করা হয় ৷ এই নিয়ে এই ঘটনায় মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা । যদিও বগটুইকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত লালন শেখ এখনও পলাতক ৷

কয়েকদিন আগেই বাপ্পা শেখ, সাবু শেখ, সিরাজুল ইসলাম ও তাজ মহম্মদ নামে চারজনকে মুম্বই থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৷ এই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতে এদিন সমীর শেখকে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ গ্রেফতারির পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি ৷ তাকে চিকিৎসা করার জন্য রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ ধৃত সমীর শেখ ভাদু শেখ ঘনিষ্ঠ লালন শেখের শ্বশুর । সোমবার ধৃতকে রামপুরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হবে । হিন্দুস্থান সমাচার / সোনালি

স্মৃতিরক্ষায় পশ্চিমবঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামে আরও পার্ক চিহ্ণিত করার দাবি
অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ১০ এপ্রিল (হি. স.) : কলকাতার নানা অংশে রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামে পার্ক। তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিল দিল্লি। সেই অভাবের অনেকটাই পূরণ করতে চলেছে দিল্লি সরকার। এবার দাবি উঠেছে, কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গেও শহিদ সংগ্রামীরদের স্মৃতিতে স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে বিভিন্ন পার্কের এ রকম উদ্যোগ নেওয়ার।

স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে জওহরলাল নেহরুর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু দিল্লির চানক্যপুরী ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভে প্রায় ৮৫ একর জায়গার ওপর সুদৃশ্য পার্কটি তাঁর নামেই চিহ্ণিত। শহরের অতি পরিচিত স্থান এটি। এবার ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু বীরের অবদানকে সম্মান জানাতে, তাঁদের নামে রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন পার্কের নামকরণ করা হবে। লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অনুমতি পাওয়ার পরে, দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দিল্লি সরকারের কাছে ১৬ টি উদ্যানের প্রথম তালিকা পাঠিয়েছে। রাজ্যের নামকরণ-বিষয়ক বিভাগ তার পরবর্তী বৈঠকে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করবে৷

একটি পৃথক কমিটি এই ১৬ জনের নাম বাছাই করেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন ভগত সিং এবং বটুকেশ্বর দত্তর আইনজীবী আসফ আলী। ১৯২৯-এর ৮ এপ্রিল কেন্দ্রীয় আইনসভায় বোমা নিক্ষেপের পর ওই দুই বিপ্লবীকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। তালিকায় আছেন ভাই বালমুকুন্দ। তিনি ১৯১২-র ২৩ ডিসেম্বর, চাঁদনি চকে ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর বোমা মেরেছিলেন; লাহোর বোমা মামলার আসামি মাস্টার আমির চাঁদ, গদর পার্টি তৈরির নেপথ্যনায়ক লালা হরদয়াল, কর্নেল গুরবক্স সিং ধিলোঁ, জেনারেল শাহ নওয়াজ খান, গোবিন্দ বিহারী লাল, সত্য বটি, কর্নেল প্রেম সহগাল, বসন্ত কুমার বিশ্বাস, ডাঃ সুশীলা নায়ার, হাকিম আজমল খান, ব্রিজ কৃষ্ণ চাঁদনিওয়ালা, স্বামী শ্রদ্ধানন্দ এবং দীনবন্ধু সিএফ অ্যান্ড্রুজের নামও পার্ক এবং ভবন থাকবে।

অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কিছু স্বাধীনতা সংগ্রামী নামে দিল্লির পার্ক এবং ছোট স্মৃতিস্তম্ভের নামকরণের সিদ্ধান্তটি গত ডিসেম্বরে নিয়েছিলেন লেফটেনান্ট জেনারেল অনিল বৈজাল। দিল্লি উন্নয়ন সংস্থা ডিডিএ এবং পুরনিগমগুলিকে এই জাতীয় পার্কগুলি চিহ্নিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের শিল্প ও সংস্কৃতি বিভাগকে বলা হয়েছিল স্মৃতিস্তম্ভগুলি চিহ্নিত করতে যাতে সেগুলি অজানা বীরদের নামে নামকরণ করা যেতে পারে।

দিল্লির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কলকাতার মৌলানা আজাদ মিউজিয়ামের পরামর্শদাতা ড. আবীর কুমার গড়াই। এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, “এই নামকরণের সিদ্ধান্তকে এক্ষেত্রে সাধুবাদ জানাতেই হয়। আমরা সকলেই জানি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন হল হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার ঐতিহাসিক লড়াই এবং আত্মত্যাগের কাহিনী। এখানে বহুল পরিচিত ও উজ্জ্বল অনেক নাম পাশাপাশি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে শুধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এমন অনেক অজ্ঞাত, অজানা নামও রয়েছে। সমগ্র ভারতবর্ষে তো বটেই, বাংলায় আমরা যদি একটু খুঁজে দেখি তাহলেও কয়েকশত স্বাধীনতা সংগ্রামীর কথা জানতে পারব যাঁরা পাঠ্য বইয়ে বা মানুষের মনে ঠাঁই পাননি। কালের নিয়মে অন্ধকারে ম্লান হয়ে গিয়েছে তাঁদের অসামান্য কীর্তি।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সমগ্র দেশ জুড়েই ’আজাদী কা অমৃত মহোৎসব’ উদযাপিত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ক্রমশ ম্লান হয়ে যাওয়া ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবন ও তাদের অবদান মানুষের সামনে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনিতে বহুদিন ধরে চলে আসা কোনও জায়গার নাম বদলে গেলে মানুষকে একটু অসুবিধেয় পড়তে হয় ঠিকই, কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু পার্কের নাম বদল তাই খুব একটা অসুবিধের সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে হয়না। পার্কে যেহেতু সব বয়সী মানুষের যাতায়াত হয় তাই অজ্ঞাত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জ্ঞাত করার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা যেতে পারে। বিশেষত, শিশুদের আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস ও সেই সঙ্গে দেশকে স্বাধীন করার জন্য মানুষের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের কাহিনী জানবার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে এটাও ঠিক, যে কোনও একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের কয়েকটি উদ্যানের নাম বদলে দিলেই চিত্র বদলে যাবে না।

আমরা যদি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দেখি সেখানে এরকম অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন যাঁদের অবদান সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ উদাসীন। তাই এই ধরনের চিন্তা ভাবনা এখানেও কার্যকর করার কথা ভাবা যেতে পারে। এখানে বেশ কিছু স্থান, ভবন, স্টেশনের নাম স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামে রয়েছে। আরও নামকরণের অবকাশ আছে।“ স্বাধীনতা সংগ্রামী কালীচরণ ঘেষের পুত্র, শিবশঙ্কর ঘোষ অবশ্য প্রতিক্রিয়ায় জানান, “আমরা আলিপুর জেলকে বিপ্লবীদের জন্য আটকে রাখতে পারলাম না, সেখানে একটি পার্ক বা দুটি মেট্রো স্টেশনের নাম বিপ্লবীদের নামে হলে, সেই কর্মযোগী আত্মত্যাগীদের অপমান করাই হবে।“

বরিষ্ঠ সাংবাদিক দিল্লিবাসী জয়ন্ত ঘোষাল জানান, এ ব্যাপারে আমার আইটিও-র কাছে শহিদ পার্কের নাম মনে পড়ছে। দিল্লিবাসী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডঃ প্রবীর দে এই প্রতিবেদককে জানান, “দিল্লিতে প্রচুর পার্ক আছে। কিন্তু নেহরু আর নেতাজী ছাড়া আর কোনও স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামে পার্কের কথা জানা নেই। এরকম স্মরণীয়দের নামে নতুন করে উদ্যানের নামকরণ অবশ্যই শুভ উদ্যোগ। পশ্চিমবঙ্গেও বড় শহরগুলোয় যদি এরকম উদ্যোগ নেওয়া যায় খুব ভাল হয়।“

বাংলার চার দামাল মেয়ে উজ্জলা মজুমদার, বীণা দাস, শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরীর স্মৃতিতে দক্ষিণ কলকাতার হাজরা অঞ্চলে একটি পার্কের উদ্বোধন হয়েছে কিছুকাল আগে। এ ব্যাপারে বেশ ক’বছর আগেই উদ্যোগী হয়েছিলেন সুনীতি চৌধুরীর কন্যা ডঃ ভারতী সেন। কিন্তু তাঁকে রীতিমত তদ্বির করতে হয়েছে। এই প্রতিবেদক ২০১৯-এর জুন মাসে বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন লেখেন ’পুরসভার ফাইলবন্দী বাংলার চার দামাল কন্যার স্মৃতিরক্ষার ভাবনা’ শিরোনামে। তাতেও কাজ না হওয়ায় এক অনুষ্ঠানে পুরসভার উদ্যান শাখার ভারপ্রাপ্ত দেবাশিস কুমারকে ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি বলি। ফোনে কথা বলিয়ে দিই ভারতী সেনের সঙ্গে। কিন্তু তার পরেও পুরসভার এই স্মৃতিরক্ষার কাজে খুঁত থেকে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

স্বাধীনতা সংগ্রামের লেখক-গবেষক, প্রাক্তন অধ্যাপক শুভেন্দু চৌধুরীর মতে, “এক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভা যে তুঘলকি নীতি নিয়ে চলে আমি তার সাথে একমত নই। বিভিন্ন পার্কে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্র ধরে নামকরণ হওয়াটা যুক্তিযুক্ত। যেমন ১৯২৮ সালে কংগ্রেসের অধিবেশন হয়েছিল পার্কসার্কাসে। নেতাজি ছিলেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ারস-এর জি ও সি ইন সি। আমার মনে হয়, পার্কসার্কাসের নাম হওয়া উচিৎ বি ভি পার্ক। এভাবে খুঁড়তে খুঁড়তে অনেক ইতিহাস বেরিয়ে আসবে।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *