BRAKING NEWS

Amar Ekushe : মাতৃভাষার হাত ধরেই মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে চলেছে : শিক্ষামন্ত্রী

আগরতলা, ২১ ফেব্রুয়ারি : মাতৃভাষার হাত ধরেই মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে চলেছে। শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞানের বিকাশ ও বিবর্তন মাতৃভাষা ব্যতীত হওয়া সম্ভব নয়। বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যের সকল জাতি জনজাতির মাতৃভাষার বিকাশে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে চলেছে। আজ ত্রিপুরা সরকার ও আগরতলাস্থিত বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২ উদযাপনের মূল অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত আলোচনাচক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ। অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের ত্রিভাষিক (বাংলা, ককবরক ও ইংরেজি) ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার ২০২১ প্রাপক শিক্ষক শিবশঙ্কর পালকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন এবং শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ রাজ্যের লুপ্তপ্রায় বঙচের ভাষাগোষ্ঠীর প্রতিনিধি কমল বঙচেরকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ভাষা আন্দলোনের ভিত্তি ভূমি হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের উপর জোর করে উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে গড়ে উঠেছিলো ভাষা আন্দোলন। ভাষার জন্য এতো বড় আন্দোলন এর পূর্বে পৃথিবীতে কখনও হয়নি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, জব্বররা। সেই থেকে প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছিলো ভাষা শহীদ দিবস। পরবর্তীতে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার স্বীকৃতি দেয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভারতবর্ষের নতুন শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষাকে ভিত্তি করে প্রদেয় শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি জানান, গত ৪ বছরে রাজ্যে ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ২২টি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ককবরক ভাষাকে বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় ককবরক শিক্ষাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পিজিটি শিক্ষক এবং বিভিন্ন মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, যে কোনও জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা রক্ষায় সকলকে দায়বদ্ধতার পরিচয় দিতে হবে। নাগরিকদের কাছে ভাষাগত সমস্যা দূর করতে সরকারি কর্মচারিদের ককবরক শিক্ষার জন্য গত ৩০ জানুয়ারি থেকে অনলাইন ককবরক কোর্স চালু করা হয়েছে। নুতন পদক্ষেপ হিসেবে ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু দপ্তরের মাধ্যমে ককবরক, কুকি, মিজো, হালাম, গারো, চাকমা, মণিপুরী (বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতি) ভাষার উপর মাইনর রিসার্চ করার সুযোগও রয়েছে। এজন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ১ লক্ষ টাকার অনুদান দেওয়া হয়। এই প্রথম শিক্ষকদের ককবরক শিক্ষার ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ককবরক ল্যাঙ্গুয়েজ টিচার্স হ্যান্ডবুক চালু করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গণে ভাষা আন্দোলনের স্মারকের আদলে তৈরি শহীদ বেদিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অনুষ্ঠান উপলক্ষে উপস্থিত সকল অতিথিগণ। অতিথিগণ চারা গাছে জল সিঞ্চনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। ইউনেস্কো কর্তৃক এবছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল ভাবনা হলো ‘বহুভাষায় শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে হোক প্রতিবন্ধকতার উত্তরণ’। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, সারা বিশ্বের বাঙালি ভাষাভাষীর মানুষের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি একটি গর্বের দিন। বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আন্দোলন ১৯৫২ সালে শুরু হয়েছিলো অধুনা বাংলাদেশে। কোনও জাতিগোষ্ঠীর ভাষাই ছোট বা বড় নয়। সব ভাষাকেই সমান সম্মান দিতে হবে। তাহলেই আমাদের মধ্যে বিবিধের মাঝে মিলনের মূল ভাবনা সার্থক হবে। আলোচনা করতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কোন ভাষা হারিয়ে গেলে ঐ জাতির সংস্কৃতিও হারিয়ে যায়। এজন্য ইউনেস্কো মাতৃভাষা দিবসের সূচনা করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনাকালে যে সকল জনহিতৈষী কাজগুলি করা সম্ভব হয়ে উঠেনি সেগুলিকে সম্পন্ন করার জন্য আগামী দিনগুলিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হবে। এই সরকার উন্নয়নের সরকার, কর্মচারি বান্ধব সরকার।

অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ বলেন, সারা পৃথিবীতে একমাত্র ত্রিপুরা রাজ্যেই ভারত এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটির আয়োজন করেছে। এক্ষেত্রে ত্রিপুরা পৃথিবীর বুকে এক ব্যতিক্রমী জায়গা এবং উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে এই দিবস পালনের অনুষ্ঠান এক অনন্য উচ্চতা লাভ করেছে। তিনি বলেন, অমর একুশ এখন সার্বজনীন। তাই সারা পৃথিবীতে এই দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে ভারত, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল রাখার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর অভাব থাকা সত্বেও অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে।

অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রাজ্য উচ্চশিক্ষা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. অরুণোদয় সাহা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা চাঁদনী চন্দ্রন। উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সংস্কৃত ও হিন্দি ভাষা সহ রাজ্যের বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর জাতি জনজাতিদের প্রতিনিধিগণ তাদের চিরাচরিত পোশাক পরিধান করে নিজস্ব ভাষায় উপস্থিত সকলকে অভিবাদন করেন এবং সকল ভাষার সম্মানে আমাদের ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা এই স্লোগান প্রদান করেন। শেষে ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে এদিনের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *