গুয়াহাটি, ১২ জানুয়ারি (হি.স.) : অসম পুলিশের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট (ডিএসপি) পদে নিয়োজিত হয়েছেন টোকিও অলিম্পিক ব্রোঞ্জপদক জয়ী বক্সার লভলিনা বড়গোহাঁই। আজ বুধবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা দিশপুরে জনতা ভবনে বড়গোহাঁইয়ের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছেন। এর পর তাঁর উর্দিতে তিন তারার ব্যাজ সেঁটে দিয়েছেন রাজ্যের পুলিশ-প্রধান (ডিজিপি) ভাস্করজ্যোতি মহন্ত এবং মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী বিমল বরা, মুখ্যসচিব জিষ্ণু বরুয়া, রাজ্য পুলিশের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ও পদস্থ, সাধারণ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ও পদস্থ আধিকারিক, তাঁর বাবা ও মা সহ বহুজনের উপস্থিতিতে আজ লাভলিনাকে সম্মাননা হিসেবে ডিএসপি পদে নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, লাভলিনা আইপিএস স্তরে যেতে পারবেন, সেই যোগ্যতা তাঁর আছে। লাভলিনার নামে গুয়াহাটিতে একটি রাস্তার নামকরণ করা হবে, ঘোষণা করেছেন হিমন্তবিশ্ব।
মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, এ ধরনের গৌরবের ক্ষণ অসমবাসী খুব কম পেয়েছেন। রাজ্য পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে তিনি অসম পুলিশের পরিবারে তাঁকে সাদর স্বাগত জানাচ্ছেন। লাভলিনা ক্রীড়া ক্ষেত্রের মতোই অসম পুলিশকে আরও গতিশীল করতে সচেষ্ট হবেন বলে আশা ব্যক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজ্যের ক্ৰীড়া নীতির বলে লাভলিনাকে ২১ ব্যাচে অন্তৰ্ভুক্ত করা হয়েছে। ২১ ব্যাচে খুব কম সংখ্যার মানুষ নিযুক্তি পান। বলেন, লাভলিনার বয়স কম। তাই অসম পুলিশের উচ্চ পদে যেতে পারবেন তিনি। ডিগ্ৰি পাশ করার পর আইপিএস-এ যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে, সেই যোগ্যতা তাঁর আছে।
ড. শর্মা আরও বলেন, গত আট মাসে অসম পুলিশ জনতার সঙ্গে একত্রিত হয়ে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। অসম সরকারের শূন্য পদগুলিতে রাজ্য বা দেশের হয়ে প্ৰতিদ্বন্দ্বিতাকারী পদক লাভপ্রাপ্তদের নির্দিষ্ট নিয়মের বলে তাঁর সরকার নিয়োগ করবে বলেও আজ ষোঘণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি ক্ৰীড়াক্ষেত্রেও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। পড়াশোনার মতো খেলাধুলোর মাধ্যমে জীবনকে আমরা এগিয়ে নিতে পারি। আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে খেলাধুলোর প্ৰতি বিদ্যমান অবহেলার দৃষ্টিভঙ্গি নির্মূল করতে হবে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
তিনি বলেন, হতাশাগ্ৰস্ত মানসিকতা থেকে যুবপ্ৰজন্মকে বের করে আনার জন্য খেলাধুলোই হচ্ছে উত্তম মাধ্যম। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্ৰী বলে, অসমের প্ৰত্যেকটি জেলায় একটি করে স্টেডিয়াম নিৰ্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর সরকার। ইতমধ্যে আটটি জেলায় এর জন্য ৫০০ কোটি টাকার অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্ৰত্যেকটি থানায় একেকটি ফুটবল এবং ভলিবল দল গঠন করা হবে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি দুলিয়াজানে অনুষ্ঠিত পুলিশ সুপারদের নিয়ে বৈঠকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
কেবল তা-ই নয়, অসমের খেলোয়াড়দের প্ৰশিক্ষণ নিতে সবসময় যাতে পাতিয়ালায় যেতে না হয়, তার জন্য অসমে প্ৰশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে আন্তর্জাতিকস্তরের খ্যাতিসম্পন্ন প্ৰশিক্ষক আনার চেষ্টা সরকার করবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা।
উল্লেখ্য, লাভলিনা বড়গোহাঁই হচ্ছেন অলিম্পিকে পদকবিজয়ী অসমের প্ৰথম খেলোয়াড়। টকিও অলিম্পিকে বক্সার লাভলিনা ব্ৰঞ্জপদক জয় করে অসমের ক্ৰীড়া ইতিহাসে রচনা করেছেন নতুন অধ্যায়। লাভলিনার আগে ক্ৰীড়া ক্ষেত্ৰে অনবদ্য অবদানের জন্য ধিং-এক্সপ্ৰেস খ্যাত দৌরবিদ হিমা দাসকেও রাজ্য পুলিশের ডিএসপি পদত নিয়োগ করে সম্মান প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে, ডিএসপি পদে যোগদান করে লাভলিনা বলেন, অসমে ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নয়নে চেষ্টা করে যাবেন। খেলোয়াড়দের লক্ষ্যে উপনীত করার অদম্য চেষ্টা করার অঙ্গীকার করার পাশাপাশি অসম পুলিশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবেন।
অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্ত বলেন, লাভলিনার আগে দৌড়বিদ হিমা দাসকেও ডিএসপি পদে নিয়োগ করা হয়েছে। খেলাধুলোয় আগ্রহী অসম পুলিশের কর্মীদের খেলার প্ৰতি হিমা এবং লাভলিনা অনুপ্ৰাণিত করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেছেন ডিজিপি।
এছাড়া মুখ্যসচিব জিষ্ণু বরুয়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, লাভলিনা যেন আগামী দশ বছর কেবল খেলার প্ৰতি মনোনিবেশ করেন, সেই আশা করছেন তিনি। আগে খেলাধুলো, তার পর পুলিশের চাকরিতে মন দিতে লাভলিনাকে পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। বলেন, লাভলিনার বয়স কম, তাই অদূর ভবিষ্যতে তিনি আইজিপি পদেও উন্নীত হতে পারবেন বলে নিশ্চিত তিনি। অনুষ্ঠানে প্রাসঙ্গিত বক্তব্য পেশ করেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী বিমল বরাও।

