নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ ডিসেম্বর৷৷ সরকারের সুুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশের পাশাপাশি কৃষকদের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে৷ কৃষিক্ষেত্রে চিরাচরিত চাষাবাদের বদলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ও উদ্ভাবনী অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর উপর সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে৷ আজ আগরতলা টাউন হলে ত্রিপুরা রাজ্য কৃষি স্নাতক সমিতির ১০ম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ অনুষ্ঠানে সমিতির মরণিকার আবরণও উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ৷ সংগঠনের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৫১ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়৷ সমিতির ১০ম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত কৃষি আধিকারিকদের সাথেও রাজ্যে ক’ষিক্ষেত্রের সাফল্য, অগ্রগতি ও বিভিন্ন বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মতবিনিময় করেন৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষক কল্যাণে নিযুক্ত আধিকারিক ও অন্যান্য ব্যক্তিগণ রাজ্যের প্রাথমিক ক্ষেত্রের ভিতকে সুুদৃঢ় করার অন্যতম কারিগর৷ রাজ্যের কৃষি আধিকারিক ও কৃষি বিজ্ঞানীদের আত্মসন্তুষ্টির উর্ধে উঠে প্রাথমিক ক্ষেত্রের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে মনোনিবেশ করতে হবে৷ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গতানুগতিক চাষ পদ্ধতির বদলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগ বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিতে হবে৷ কৃষিক্ষেত্রের বিকাশে গবেষণা সহ সফল কৃষকদের সাথে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির নয়া কৌশল নিরূপণ করা দরকার৷ মুখ্যমন্ত্রী স্থির করা নির্ধারিত লক্ষ্যে কতটা সাফল্য আসছে তা নিরূপণ ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে ধানের প্রতি কেজি সহায়কমূল্য হতে চলেছে ১৯ টাকা ৪০ পয়সা৷ প্রতি মাসে কৃষকদের আয় ৬,৫৮০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১১,০৯৩ টাকা৷ ক’ষক কল্যাণে বর্তমানে গুচ্ছ প্রকল্পের সুুফল হিসেবে এখন আর জমি পতিত থাকছে না৷ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে স্বল্পমেয়াদি অর্থকরী ফসল চাষের ফলে লাভের মুখ দেখছেন অন্নদাতাগণ৷ আনারস, সুুগন্ধি লেবু, কাঁঠাল, পান, তেঁতুল সহ অন্যান্য কৃষিজ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আত্মনির্ভরতার পথ খুঁজে পেয়েছেন কৃষকগণ৷
রাজ্যে তৈরি হওয়া আনারস নির্ভর বাণিজ্যিক সুুযোগকে কাজে লাগিয়ে গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে নির্ধারিত জমিতে অধিক চারা রোপণ সহ অসময়েও আনারস উৎপাদনের মাধ্যমে বেড়েছে গড় ফলনের পরিমাণ৷ ক’ষকদের সাথে জমিতে গিয়ে তাদের সঙ্গে নিজেদের অভি’তা বিনিময়ের মাধ্যমে ও ড্রোন টেকনোলজি সহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে এক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি আনার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, কৃষক কল্যাণে নানা সুুযোগ সম্পসারণের পাশাপাশি কর্মচারীদের স্বার্থেও ডিএ, অ্যাডহক পদোন্নতি সহ একাধিক সদর্থক পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ ক’ষিক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীন বিকাশে সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন, সম্পতি অকাল বর্ষণে কৃষকদের ক্ষতির সম্মখীন হতে হয়েছে৷ এই বিষয়টির প্রতি আন্তরিক দৃষ্টি রয়েছে সরকারের৷ ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ কৃষকদের উপার্জন বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসলের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে রাজ্য সরকার৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা মাটি ও জলবায়ুর নিরিখে কৃষিক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার কথা না থাকলেও বিগত দিনে কৃষকদের কল্যাণে আন্তরিকতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে৷ বর্তমানে কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন খরচ হাস করার লক্ষ্যে কাজ করছে রাজ্য সরকার৷ কৃষি পরামর্শ পেতে এখন আর কৃষি আধিকারিকদের পেছনে বা কৃষি কার্যালয়ে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় না কৃষকদের৷ কৃষক সহায়করা নিজেরাই পৌঁছে যাচ্ছেন জমিতে বা কৃষকদের কাছে৷ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি তার যথার্থ বিপণনেরও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করেছে সরকার৷ সয়েল হেলথ কার্ড, কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, কিষাণ সম্মান নিধি সহ গুচ্ছ পরিকল্পনার সুুযোগ প্রদান করা হচ্ছে৷ অর্গানিক ফার্মিং-র উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে সরকার৷ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, ত্রিপুরা রাজ্য কৃষি স্নাতক সমিতির ১০ম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাজীব ঘোষ ও সুুজিত দাস প্রমুখ৷

