BRAKING NEWS

নিইশি ছাত্র ইউনিয়ন আহূত ১২ ঘণ্টার বনধে ব্যাপক হিংসা অরুণাচলের রাজধানী ইটানগরে

ইটানগর, ২৩ নভেম্বর (হি.স.) : অল নিইশি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আনসু) আহূত ১২ ঘণ্টার বনধ-এ ব্যাপক হিংসা ছড়িয়েছে অরুণাচলের রাজধানী ইটানগরে। বনধ আজ সকাল পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পাঁচটা পর্যন্ত চলেছে। বেলা প্রায় ১১ট নাগাদ বনধ-এর আহ্বায়করা আচমকা উত্তেজিত হয়ে রাজ্য সচিবালয়ের সামনে সরকারি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। তবে গোটা এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যায় আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

রাজ্যের শিক্ষা দফতরের কমিশনার আইএএস নীহারিকা রাইকে বদলি এবং আনসু সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করার দাবিতে রাজ্যের প্রথমসারির ছাত্র সংগঠন অল নিইশি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন আজ মঙ্গলবার ১২ ঘণ্টার ক্যাপিটাল রিজিওন বনধ আহ্বান করে। বনধ-এর সময় স্বাস্থ্য পরিষেবা যেমন অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসা, ফার্মাসি, জেলাশাসক, কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য, গণমাধ্যমের কর্মী, দুধের গাড়ি এবং ফায়ার সার্ভিসকে অব্যাহতি দিয়ে অন্য সব সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়, যানবাহন চলাচল, দোকানপাট, বাজার-হাট ইত্যাদি বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছিল ছাত্র ইউনিয়ন। সকাল পাঁচটা থেকে বনধ শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু ১১টা নাগাদ রাজ্যের মুখ্যসচিব নরেশ কুমার সচিবালয়ে প্রবেশ করলে আচমকা পরিস্থিতি বিগড়ে যায়। গোটা ক্যাপিটাল রিজিওন-এ সিআরপিসি-র ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলাশাসক তালো পতম আইএএস।

মুখ্যসচিব তাঁর দফতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বনধ-এর আহ্বায়ক তথা পিকেটাররা সচিবালয়ের সামনে তাণ্ডব শুরু করেন। শুরু হয় ব্যাপক ভাঙচুর। এ থেকে বাদ যায়নি সরকারি গাড়ি। ভাঙচুর করে দুটি সরকারি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি পুলিশের গাড়িও রয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে দাবির সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে অগ্নিনির্বাপক বাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় বনধ সমর্থকদের তাণ্ডব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।

প্রসঙ্গত, রাজ্যের শিক্ষা পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে গত কয়েকমাস ধরে রাজ্য সরকারকে চাপ দিচ্ছিল আনসু। কিন্তু আশানুরূপ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না দেখে শিক্ষা দফতরের খোলনলচে পাল্টানোর দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে নিইশি ছাত্র ইউনিয়ন।

মূলত, রাজ্যের শিক্ষা দফতরের কমিশনার আইএএস নীহারিকা রাইকে বদলি করা এবং আনসু সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা সহ ১৪ দফার দাবির ভিত্তিতে আজ বনধ ডেকেছিল ছাত্র সংগঠনটি। প্রথম দাবি সম্পর্কে ছাত্র ইউনিয়নের অভিযোগ, নীহারিকা রাই ছাত্রদের ন্যায়বিচার প্রদানে অদক্ষ এবং অরুণাচল প্রদেশে কোনও কার্যালয়ে বসার অধিকার তাঁর নেই। পার্বত্য রাজ্যে শিক্ষা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ১৪ দফা দাবির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে তিনি একটি উদাসীনতা ও অবহেলা মনোভাব পোষণ করছেন। বিগত কয়েক মাস ধরে এ সব দাবিতে চাপ দিলেও শিক্ষা দফতর থেকে কোনও সহযোগিতা পাননি বলে জানান ছাত্র সংগঠনের পদাধিকারীরা।

দ্বিতীয় দাবি সম্পর্কে ইউনিয়ন জানিয়েছে, তাঁদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্যরা গত সেপ্টেম্বরে উল্লিখিত ১৪ দফা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুর সাথে দেখা করেছিলেন। তবে রাজ্য সচিবালয়ে ঢোকার সময় কর্তব্যরত পুলিশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন সদস্যরা। পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বিষয়টির সমাধান হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন পর, ইউনিয়নের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছ থেকে ফোন কল পান তাঁরা।

ইউনিয়ন জানিয়েছে, তাঁদের সমস্যা সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসন আনসু নেতৃত্বকে বৈঠকে বসার জন্য ডেকেছিল। কিন্তু তাঁরা তা অস্বীকার করে বলেছেন, গত তিন মাস ধরে অপেক্ষা করেছেন। এখন শেষ মুহূর্তে সভা ডাকার কোনও মানে হয় না।

এদিকে রাজধানী ইটানগরের জেলাশাসক আইএএস তালো পতম ছাত্রনেতা ও আন্দোলনকারী যুবাদের শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। জেলাশাসক জানান, বড় কোনও সহিংসতা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি, শান্তিপূর্ণভাবেই বনধ কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে।

অরুণাচলের গৃমমন্ত্রী বামাং ফেলিক্স এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, আনসু-র ১৪টি দাবির মধ্যে অনেকগুলি পূরণ হয়েছে। তবে আইএএস অফিসার নীহারিকা রাইয়ের বদলির দাবি ভিত্তিহীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *