কিশোর সরকার
ঢাকা, ১১ নভেম্বর (হি.স): ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ছায়া যুদ্ধ পরিচালনার নতুন ছক কষছে পাকিস্তান। এই লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জনপ্রতিনিধিদের ব্যবহারের জন্য ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে আরবী ভাষায় লেখা ক্যালিওগ্রাফি করা বই পাঠানো হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জনপ্রতিনিধিদের কাছে। তবে পাকিস্তানের এই তৎপরতাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না স্বাধীনতার পক্ষের বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীরা। পাকিস্তানের এই কর্মকান্ডকে ধর্মকে ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সীমান্তের জনপ্রতিনিধিদের ব্যবহারের নয়া কৌশল হিসেবে মনে করছেন তাঁরা। তাদের মতে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে ভারতে জাল নোট পাচার, জঙ্গিদের মদত দেওয়া-সহ নানা কুটকৌশল চালাচ্ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কড়া নজরদারি থাকায় তা অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে। তাই সরকারের নজরদারী এড়িয়ে পাকিস্তান তাঁদের চক্রান্ত বাস্তবায়নের জন্য ধর্মীয় ভাবে আবেগতাড়িত করে সীমান্তের জনপ্রতিনিধিদেরকে ভারতের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা করছে।
বাংলাদেশের পেট্রাপোল সীমান্তের বেনাপোল পৌরসভার মেয়র মো. আরশাফুল আলম লিটন ও বাংলাদেশের ৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়র কবির পাকিস্তানের এই কর্মকান্ডের বিষয়ে বহুভাষী সংবাদ সংস্থা ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-এর সঙ্গে খোলামেলা বার্তালাপ করেছেন। মেয়র আরশাফুল আলম লিটন বলেন, সীমান্তে প্রায় সব বিষয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় হয়ে থাবে। ভারতীয় জাল টাকা পাচারকারীদের সঙ্গেও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে, তবে এরা অনেকেই বর্তমানে আওয়ামী লীগে নাম লেখালেও আগে বিএনপি-জামাতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে দেশের প্রায় সব সীমান্তেই পাকিস্তানপন্থীরাই এই সব অবৈধ কারবারের সঙ্গে যুক্ত। তবে, ধর্মীয়ভাবে আবেগতাড়িত করে ভারতের বিরুদ্ধে ছায়া যুদ্ধ চালানোর লক্ষ্যেই মনে হয় আরবী লেখা বই বিতরণ করা নয়া কৌশল হিসেবে নিয়েছে পাকিস্তান। তিনি বলেন, গত ৩০ অক্টোবর তার কাছে ‘আল্লামা-বিল-কালাম’ নামে আরবীতে লেখা ক্যালিওগ্রাফি করা একটি বই পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে পাঠানো হয়। বইটি এমন ভাবে করা হয়েছে যে-কোন ধর্মপ্রাণ মুসলিম দেখলেই যেন শ্রদ্ধাভরে মাথানত করে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেন। আর ভারতের বাংলাদেশ সীমান্তের জনপ্রতিনিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ভারতের জাল টাকা পাচার জঙ্গি মদত দেওয়া-সহ, সবই করা হবে। পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে দেওয়া বইয়ের সঙ্গে মোবাইল নম্বর-সহ হাইকমিশনারের ভিজিটিং কার্ডও দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বেনাপোলে ভারতের জাল একহাজার টাকা চোরাকারবারীরা বাংলাদেশের চারশ টাকায় বিক্রি করেন। আর সীমান্তের জনপ্রতিনিধিদের হাতে নিতে পারলে স্থানীয় চোরাচালানীদের ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে সব ধরণের অপরাধ করানো সম্ভব হবে। যাতে মুসলমান-মুসলমান ভাইভাই এই আওয়াজ তুলে সীমান্তের মানুষকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান সীমান্তের ন্যায় বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ভারতের বিরুদ্ধে ছায়া যুদ্ধ পরিচালনা করা যায়। উভয় দেশের সরকার পাকিস্তানের এই গোপন মিশনের বিষয়ে সজাগ না হলে ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে নিয়ে আসবে। মনে রাখতে হবে এই পাকিস্তানীরা ইসলামের কথা বলে ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করেছিল, দু’লাখ মা-বোনের সম্মানহানি করেছিল, অসংখ্য ঘরবাড়ি-দোকানপাট পুড়িছে, লুটপাট করেছে।
লেখক সাংবাদিক শাহরিয়র কবির বলেন, ভারত বাংলাদেশের আমাদের চাহিদা মতো বই বিতরণ করে। সৌদি আরব, ইরান কুরানশরিফ বিতরণ করে। তবে মনে রাখতে হবে অন্য দেশের কোনও ধর্মীয় বই বিতরণ করা আর পাকিস্তানের বই বিতরণ করা এক নয়। কোনও কু-কৌশল বা খারাপ কোনও উদ্দেশ্য ছাড়া বই বিতরণ করেনি পাকিস্তান। তিনি বলেন, পাকিস্তানের আইএসআই বিভিন্ন বিন্যাসে কাজ করছে। ভারতীয় জালনোটে পাচারের সঙ্গে পাকিস্তান তথা আইএসআই সরাসরি জড়িত। তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনের কর্মকর্তার জঙ্গি অর্থায়ন ও ভারতীয় জাল রুপির কারবারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। তিনি বলেন, আইএসআই শুধু ভারতীয় জালনোট নয়, রোহিঙ্গাদের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। যা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য আরও ভয়াবহ হুমকি ডেকে নিয়ে আসবে। তাই সকলকে সজাগ থাকতে হবে।