BRAKING NEWS

স্পাইনাল কর্ডের আঘাত

সহায়তা করতে জানাচ্ছেন
ডঃ ভেঙ্কট রামকৃষ্ণ
কনসালট্যান্ট স্পাইন সার্জন
যশোদা হসপিটাল হায়দ্রাবাদ

স্পাইনাল কর্ডের আঘাত কি?

স্পাইনাল কর্ড অর্থাৎ সুষুম্না কাণ্ড হল বেলনাকৃতির দীর্ঘায়িত একগুচ্ছ স্নায়ুর সংযোগস্থল যা মস্তিষ্ক থেকে বের
হয়ে ঘাড় ও পিঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। এটি হল মস্তিষ্ক ও দেহের মধ্যে প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম।

অতি সুক্ষ সুষুম্না কাণ্ডে বা তার আশেপাশে কোনরকম আঘাত পেলে তাকে স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরি বলা হয়।
স্পাইনাল কর্ডে আঘাতের প্রভাব কতটা?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমান করে যে প্রায় 2-5 লাখ মানুষ প্রতি বছর স্পাইনাল কর্ডে আঘাত পান, প্রধানত
দুর্ঘটনা অথবা ট্রমার কারণে। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে স্পাইনাল কর্ডের আঘাত মৃত্যুর সম্ভাবনা 2-5 গুণ
বাড়িয়ে দেয়, অর্থাৎ এটি একটি গুরুতর অসুস্থতা। ভারতে স্পাইনাল কর্ডে আঘাতের আনুমানিক হিসাব প্রায়
15 লাখ, যার সাথে প্রতি বছর 20,000 টি ঘটনা যোগ হয়।
স্পাইনাল কর্ডে আঘাত কীভাবে লাগে?

স্পাইনাল কর্ড জখম হওয়ার প্রধান কারণ হল শারীরিক আঘাত লাগা, যার কারণ হতে পারে,

● গাড়ি বা রাস্তায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়া

● পড়ে যাওয়া
● মারামারি করা
● খেলতে গিয়ে আঘাত লাগা
শারীরিক আঘাত ছাড়াও স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরির অন্যান্য কারণগুলি হল:
● ক্যানসার
● বাত
● সংক্রমণ
● মেরুদণ্ড ক্ষয়ে যাওয়া
● জন্মগত অক্ষমতা
● জন্মের সময় আঘাত লাগা
স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগার লাগার ঝুঁকি কাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী?

আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকা প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রেই স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরির ঝুঁকি থাকবে।
● যাদের স্পাইনাল কর্ড স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট হয় তাদেরও স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগার সম্ভাবনা
বেশী হয়।
● উচ্চ ঝুঁকির কাজ করলে, খেলাধূলার সাথে জড়িত থাকলে এবং হাড়ের কোন সমস্যা থাকলে স্পাইনাল
কর্ডে আঘাত লাগার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরি কত প্রকারের হয়?

তীব্রতার উপর ভিত্তি করে

● সম্পূর্ণ: মারাত্মক আঘাত লাগার ফলে আঘাতস্থলের নীচের অংশে চেতনা ও নড়াচড়া করার ক্ষমতা
সম্পূর্ণরূপে লোপ পায়।
● অসম্পূর্ণ: আঘাতস্থলের নীচের অংশে চেতনা ও নড়াচড়া করার ক্ষমতা আংশিকভাবে লোপ পায়।

দেহের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের উপর ভিত্তি করে

● টেট্রাপ্লেজিয়া: অত্যন্ত মারাত্মক প্রকারের স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরি যেখানে মাথা, ঘাড়, হাত, বাহু,
কাঁধ, বুকের উপরের অংশ বা পায়ের চেতনা, কর্মক্ষমতা বা নড়াচড়া করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গিয়ে
দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যহত হয়।
● প্যারাপ্লেজিয়া: পা অথবা দেহের নীচের অংশের চেতনা, কর্মক্ষমতা বা নড়াচড়া করার ক্ষমতা চলে
যায়।
● ট্রাইপ্লেজিয়া: একটি হাত বা দুটি পায়ের চেতনা ও নড়াচড়ার ক্ষমতা চলে যায় এবং সাধারণত
অসম্পূর্ণ স্পাইনাল কর্ডের আঘাত থেকে ঘটে।
অ্যামেরিকান স্পাইনাল ইনজ্যুরি অ্যাসোসিয়েশন (এসিয়া) নিম্নলিখিত শ্রেনীতে স্পাইনাল কর্ডের আঘাতকে
বিভক্ত করেছে

● এসিয়া A: সম্পূর্ণ স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরি যেখানে নড়াচড়ার ক্ষমতা ও চেতনা সম্পূর্ণরূপে লোপ
পায়।
● এসিয়া B: সম্পূর্ণ স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরি যেখানে নড়াচড়ার ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে লোপ পায়।
● এসিয়া C: অসম্পূর্ণ স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরি যেখানে নড়াচড়া করার সীমিত ক্ষমতা থাকে, অর্ধেকের
কম পেশীই নির্দিষ্ট সীমার অতিরিক্ত কাজ করতে অক্ষম হয়।
● এসিয়া D: অসম্পূর্ণ স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরি যেখানে নড়াচড়া করার সীমিত ক্ষমতা থাকে, অর্ধেকের
বেশী পেশীই নির্দিষ্ট সীমার অতিরিক্ত কাজ করতে অক্ষম হয়।
● এসিয়া E: স্বাভাবিক চেতনা ও নড়াচড়ার ক্ষমতা থাকে
স্পাইনাল কনকাশন: স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগার ফলে সেটি সাময়িককালের জন্য বিকল হয়ে যেতে পারে।
এই বিকলতা সম্পূর্ণ বা অসম্পূর্ণ হতে পারে এবং 24 থেকে 48 ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে
পারে। ফুটবল খেলোয়াড়দের মাথায় ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা বেশী থাকে, ফলে ঘাড়ে আঘাত লাগতে পারে এবং
ফলস্বরূপ প্রায়ই স্পাইনাল কনকাশনের শিকার হতে হয়।
স্পাইনাল কর্ডে আঘাতের লক্ষণগুলি কি কি?

স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরির লক্ষণ নির্ভর করবে আঘাতের প্রকার, মাত্রা ও পরিমাণের উপরে এবং সেইজন্য
ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়। তবে, স্পাইনাল কর্ডের সাধারণ উপসর্গগুলির মধ্যে থাকে:
● নড়াচড়া করতে না পারা
● চেতনা লোপ পাওয়া বা শিরশিরানি, সাথে ঠাণ্ডা, গরম ও স্পর্শের অনুভূতি চলে যাওয়া
● প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা
● অত্যধিক পেশী সঞ্চালন বা খিঁচুনি
● যৌনক্রিয়া, যৌন সংবেদনশীলতা ও সন্তানধারণ ক্ষমতা নষ্ট যাওয়া
● যন্ত্রণা বা তীব্র সূচ ফোটানোর অনুভূতি
● শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, কাশি আসা
● ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা হওয়া
স্পাইনাল কর্ডের আঘাত কীভাবে ধরা পড়ে?

স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগার সঙ্গে সঙ্গেই তার উপসর্গগুলি দেখতে পাওয়া যাবে এমনটা নয়, এবং সেইজন্য
সমস্যা শনাক্ত করতে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসাগত পরিচর্যা শুরু করতে হবে।

সবার আগে শ্বাসগ্রহণ ও স্পন্দনের হার মূল্যায়ন করতে হবে যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে রোগীর অবস্থা
স্থিতিশীল আছে। সাধারণত, অতীত অসুস্থতার বিস্তারিত বিবরণ ও শারীরিক পরীক্ষার সাহায্যে নড়াচড়া ও
চেতনা লোপের জায়গা শনাক্ত করা যায়। স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরির স্থান সাধারণত কলারের মত চিকিৎসাগত
সরঞ্জামের সাহায্যে নিশ্চল করে দেওয়া হয়।
এছাড়াও, কয়েকটি পরীক্ষার সাহায্যে আঘাতস্থলের ছবি তুলে আঘাতের ধরণ নিশ্চিত করা হয়। এগুলির
সাহায্যে ফাটল, অস্বাভাবিকতা, রক্ত জমা ইত্যাদি শনাক্ত করা যায়।

রুটিন মূল্যায়নের মধ্যে থাকে:
● রক্ত পরীক্ষা
● এক্স-রে
● সিটি স্ক্যান

● এমআরআই স্ক্যান

আপদকালীন চিকিৎসার প্রয়োজন কখন হয়?

সামগ্রিকভাবে, স্পাইনাল কর্ডের আঘাত একটি গুরুতর আপদকালীন অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসা ঘটনাস্থলেই
শুরু করা হয়। মাথা ও ঘাড়ে কোন আঘাত লাগলে, তৎক্ষণাৎ স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লেগেছে কিনা পরীক্ষা
করতে হবে। নেক কলারের মাধ্যমে নিশ্চল করে দিয়ে আপদকালীন চিকিৎসা প্রদানকারীরা কাজ করেন।
স্পাইনাল কর্ডের আঘাত যত দ্রুত সম্ভব মূল্যায়ন করা উচিৎ কারণ:

● উপসর্গগুলি পরে দেখা দিয়ে আঘাতের অবস্থা আরও খারাপ করে দিতে পারে
● যত সময় কাটবে ক্ষতি আরও গুরুতর হয়ে যাবে, আঘাত আরও বেড়ে যাবে
● তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শুরু করলে জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং আরও দ্রুত সেরে
ওঠা যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হবে:
● শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎপিণ্ডের কাজ নিয়ন্ত্রিত ও স্থিতিশীল করা হবে
● শক প্রতিরোধ করা হবে
● নিশ্চল করা হবে
● শ্বাস নিতে না পারা ও হৃৎপিণ্ডের আঘাতের মত সমস্যা দূর করা হবে
স্পাইনাল কর্ডের আঘাত থেকে কীভাবে নিরাময় পাওয়া যায়?

সামগ্রিক চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ভর করবে:

● বয়স, সামগ্রিক স্বাস্থ্য, ও অতীত অসুস্থতা
● স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরির পরিমাণ
● স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরির প্রকার
● স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরির তীব্রতার উপর

স্পাইনাল কর্ডের আঘাতের চিকিৎসা পদ্ধতি হল আক্রমণাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী। এইক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় আইসিইউ,
সার্জারি, ব্লাডার ক্যাথিটার, ভেন্টিলেটর, ফিডিং টিউব ইত্যাদি ব্যবহার করে যেতে হবে।
চিকিৎসার প্রথম পদক্ষপে হল স্পাইনাল কর্ডের আরও আঘাত এড়াতে মেরুদণ্ডকে নিশ্চল করে দেওয়া।
প্যারামেডিকরা দুর্ঘটনাস্থলেই তা করে দেন। শ্বাসগ্রহণ ও হৃৎপিণ্ডের অবস্থা ইত্যাদি পরীক্ষা করে সামলানো
হয়।
অন্যান্য আঘাতের সম্ভাবনাও দেখে নেওয়া হয় এবং সাধারণত ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)
চিকিৎসা হয়। মেরুদণ্ড সোজা ও সঠিক জায়গায় রাখতে ট্র্যাকশন বা কলার ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য
আবশ্যকীয় বিষয়গুলি যেমন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুসের কাজ বজায় রাখা, সংক্রমণ রোধ
করা ইত্যাদি চিকিৎসা পরিকল্পনার মধ্যে থাকত পারে।
স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরির ক্ষেত্রে সার্জারি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা বিকল্প। এটি নির্ভর করবে আঘাতের
প্রকার, মাত্রা ও পরিমাণের উপর। আরোগ্যলাভের সময় সম্ভাব্য ফলাফলও এখান থেকেই জানা যাবে। অনেক
সময়, সার্জারি ক্ষতির পরিমাণ কমাতে পারে না, কিন্তু আঘাতের অবস্থা আরও জটিল হয়ে যাওয়া রোধ
করতে সক্ষম হয়।

উন্নতির পর্যবেক্ষণের জন্য এবং পরবর্তী জটিলতা আটকাতে চিকিৎসা পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ফলো-আপ
চালানো হয়। সম্পূর্ণ স্পাইনাল কর্ডের আঘাতের ক্ষেত্রে, অসম্পূর্ণ স্পাইনাল কর্ডের আঘাতের মত কাজের
ক্ষমতা পুরোপুরি ফিরে নাও আসতে পারে। তবে, জেনে রাখা উচিৎ যে স্পাইনাল কর্ডের আঘাতের ক্ষেত্রে
সম্পূর্ণরূপে নিরাময় লাভ করা অত্যন্ত বিরল ব্যাপার এবং সারা জীবনের মত শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি
থেকে যেতে পারে। এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে।
স্পাইনাল কর্ড ইনজ্যুরির জটিলতাগুলি কি কি?

স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগলে একাধিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। সুতরাং, ক্ষতি সারানোর পরেও দীর্ঘকাল
ধরে চিকিৎসা করে যেতে হবে। এর মধ্যে কয়েকটি হল:

● মূত্রনালীর সংক্রমণ

● প্রস্রাব চেপে থাকার অক্ষমতা
● পায়খানা চেপে থাকার অক্ষমতা
● দীর্ঘ সময় নড়াচড়া না করার জন্য চাপ থেকে ঘা তৈরি হওয়া
● নিউমোনিয়া
● দীর্ঘস্থায়ী ব্যাথা
● অবসাদ
● ত্বকের অনুভূতি লোপ পাওয়া
● রক্ত জমাট বাঁধা
● রক্তচাপ প্রাণঘাতী পর্যায়ে বেড়ে যাওয়া
● হাত-পা ফুলে যাওয়া
● পেশীর সমস্যা
● যৌন জীবনে প্রভাব
সম্পূর্ণ টেট্রাপ্লেজিয়া নিউমোনিয়া, চাপ থেকে তৈরি হওয়া ঘা ও হাত-পায়ে রক্ত জমে যাওয়ার বিপদ বাড়িয়ে
দেয়।
স্পাইনাল কর্ডের আঘাত সামলাতে রিহ্যাবিলিটেশনের ভূমিকা কি?

স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগার পরবর্তী নিরাময় প্রক্রিয়া হয় দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর। প্রথম থেকেই স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার
ব্যবস্থা শুরু করলে আরোগ্যলাভ দ্রুত হয় এবং শারীরিক ও মানসিক, উভয় স্বাস্থ্যই সহায়তা পায়। এই
প্রোগ্রামের মধ্যে সাধারণত অন্তর্ভুক্ত থাকে একটি পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীদের টিম এবং পরিবারের সদস্যরা, যারা
রোগীর ভালো থাকা নিশ্চিত করে।

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে রিহ্যাবিলিটেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:
● ঘটনাটি সামলে নিতে
● ব্যাথা-যন্ত্রনা কমাতে
● শারীরিক, মানসিক ও আবেগগত স্বাস্থ্য উন্নত করতে

পেশী শক্তি বাড়াতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে

● সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে জানতে

শরীরচর্চার মাধ্যমে কি স্পাইনাল কর্ডের আঘাত থেকে নিরাময় পাওয়া যায়?

শরীরচর্চা রিহাবিলিটেশন প্রক্রিয়ার অংশ এবং কিছু কিছু কর্মক্ষমতা ফিরে পেতে সাহায্য করে। তবে,
ব্যায়ামের প্রকার ও প্রাবল্য, ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
শরীরচর্চার সাহায্যে:

● পেশীর প্রসারণ সম্ভব হয়
● শ্বাস গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে
● পেশীর নিয়ন্ত্রণ ও শক্তি বাড়ে
● ভঙ্গিমা আরও ভালো হয়
● মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়
● ক্রনিক ব্যাথার সম্ভাবনা কমে
● দীর্ঘস্থায়ী রোগ দূরে থাকে
সাধারণত যে ব্যায়ামগুলির পরামর্শ দেওয়া হয়:

● যোগ ব্যায়াম
● ওয়াটার এরোবিক্স
● রোয়িং
● হাঁটা
● ভারোত্তোলন
● বসে করা এরোবিক্স

পিঠ বা ঘাড়ে আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকলে কি ধরণের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়?

সাধারণ নিয়ম হল স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগার সম্ভাবনা আছে এমন ব্যক্তিকে নড়াচড়া

করতে দেওয়া হয়
না। একটু নড়াচড়া করলেও বিপদ আরও বেড়ে যেতে পারে এমনকি প্রাণঘাতী সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

নড়াচড়া এড়াতে ঘাড়ে তোয়ালে বা বালিশের মাধ্যমে যেন ভালোভাবে অবলম্বন দেওয়া থাকে এবং তৎক্ষণাৎ
হসপিটালে কল করতে হবে।
স্পাইনাল কর্ডে আঘাতের ফলে প্যারালাইসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

প্রকার, মাত্রা, পরিমাণের উপর নির্ভর করে স্পাইনাল কর্ডের আঘাত প্যারালাইসিস ঘটাতে পারে।
স্পাইনাল কর্ডে মারাত্মক আঘাত লাগা আটকানো সম্ভব কি?

স্পাইনাল কর্ডের আঘাত এড়াতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক। কয়েকটি
উপায় হল:

● মদ খেয়ে বা খুব জোরে গাড়ি না চালানো
● ট্র্যাফিক নিয়ম ও আদবকায়দা মেনে চলা
● চার-চাকার গাড়ি চালানোর সময় সীট বেল্ট ও দু-চাকার গাড়ি চালানোর সময় হেলমেট

পরা
● ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ি চালাবেন না বা আচরণ করবেন না
● নিরাপদভাবে খেলাধুলার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন
স্পাইনাল কর্ডে আঘাত থাকা রোগীর বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজ করতে সাহায্য করার জন্য কি কি আধুনিক
প্রযুক্তি উপলব্ধ আছে?

স্পাইনাল কর্ডের আঘাত জীবনের উপর বড় প্রভাব ফেলে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে, এখন স্পাইনাল কর্ডে
আঘাত লাগা ব্যক্তিরাও স্বাধীনভাবে নিজেদের জীবনের মান উন্নত করতে পারবেন। এর মধ্যে আছে:
● আধুনিক হুইলচেয়ার: এগুলি হালকা আর আরামদায়ক এবং সহজে দিক পরিবর্তন করা যায়।
● কম্পিউটারের ব্যবহার: কণ্ঠস্বর শনাক্ত করতে পারে এবং সহজ কীগার্ড ব্যবহার করে এবং হাত
দিয়ে সমস্ত কাজ করতে অক্ষম ব্যক্তিদের সহায়তা করে।
● দৈনন্দিন জীবনে বৈদ্যুতিক সহায়তা: এই যন্ত্রগুলি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং রিমোট বা ভয়েস
কনট্রোলের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়।

● ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ডিভাইস: এগুলি হল অত্যাধুনিক সামগ্রী যা ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেটর ব্যবহার
করে হাত বা পায়ের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, রোগীকে হাঁটতে, হাতে জিনিষ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
● রোবোটিক গেইট ট্রেনিং: একটি রোবোটিক যন্ত্র হাঁটতে সাহায্য করে
কতদিনে আরোগ্যলাভ করা যাবে?

আঘাতের প্রকৃতি আরোগ্যলাভের সময় স্থির করার কাজ কঠিন করে দেয়। তবে, অবস্থার উপর নির্ভর করে,
আঘাত লাগার 1 সপ্তাহ থেকে শুরু করে 6 মাসের মধ্যে আরোগ্যলাভ করা সম্ভব। যদিও, প্রতিকূল
পরিস্থিতিতে এই সময়টা 2 বছরেও পৌঁছাতে পারে।

স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগার পরবর্তী সময়ে কি প্রত্যাশা করতে হবে এবং কীভাবে সামলাতে হবে?

স্পাইনাল কর্ডের আঘাত জীবন বদলে দিতে পারে। এর ফলে জীবনভর অক্ষমতা, একাধিক সার্জারি এবং
রিহাবিলিটেশন, ফলো-আপেই সীমাবদ্ধ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা মানসিকভাবে অত্যন্ত কষ্টকর মনে
হতে পারে। দৈনন্দিন কাজকর্ম, সম্পর্ক ও পেশার উপরেও এর গভীর প্রভাব পড়বে। আশা না হারানো ভীষণ
জরুরী এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য ও নতুন স্বাভাবিকতার সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য যতদূর
সম্ভব সাহায্য নিতে হবে।

রাগ, হতাশা, দুঃখের মত নেতিবাচক অনুভূতি রোগী ও তার প্রিয়জনদের মধ্যে থাকা খুবই সাধারণ
ব্যাপার। তবে, এটা মনে রাখা দরকার যে এই অনুভূতিগুলি এমন ভয়াবহ ঘটনার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
পরিস্থিতিকে গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য এই অনুভূতিগুলিকে বের হতে দেওয়া জরুরী।
স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগার পরে সামলে নেওয়ার কয়েকটি উপায়:

পরিস্থিতি সম্পর্কে বোঝা
● প্রিয়জনদের ও কেয়ার টিমের সাহায্য নেওয়া
● একটি সাপোর্ট গ্রুপ খুঁজে নেওয়া
● একজন মনোবিদের সাথে কথা বলা

●কাউকে দোষারোপ না করা
●অ্যালকোহল, ধূমপানের মত নেতিবাচক বিষয়ের মাধ্যমে দুঃখ ভোলার চেষ্টা না করা
●পারিপার্শ্বিক বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়া
●নিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করা
●সহায়তায় সক্ষম নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা
●পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ রেখে যাওয়া
●যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে চিকিৎসাগত পরামর্শ নেওয়া
●প্রাণভরে বাঁচার জন্য নিজেকে অনুপ্রাণিত করা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *