BRAKING NEWS

মোদী সরকারের সফল বিদেশনীতির সুবাদেই সেভেন সিস্টার্সে বন্ধ জঙ্গি মদত, অভিমত বাংলাদেশের বিশিষ্টদের

কিশোর সরকার

ঢাকা, ১০ জুলাই (হি.স.): বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পরে ভারতে বহু রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসলেও স্থল সীমান্ত চুক্তির (ল্যান্ড বাউন্ডারী এগ্রিমেন্ট) মতো গুরুত্বপূর্ণ কোনও চুক্তি হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি বিশ্বের কাছে একটি অনন্য উদাহরণ। এছাড়াও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা নির্ধারণ হয়েছে। রেল, সড়ক ও নৌ যোগাযোগ-সহ দু’দেশের সম্পর্কের নতুন মাত্র যোগ হয়েছে। আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মোদী সরকারের সফল বিদেশ নীতির সুবাদেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জঙ্গি মদত বন্ধ হয়েছে ও বাংলাদেশে আশ্রিত ভারতীয় জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের ভারতে হস্তান্তর করা হয়েছে। জঙ্গিদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার।

যাবতীয় বিষয়ে বাংলাদেশ সঙ্গে ভারতের এই সুসম্পর্ককে মোদী সরকারের সফল বিদেশনীতির বিজয় হিসেবেই দেখছেন বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবিরা। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলমান সম্পর্কের সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ-সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবিদের সঙ্গে কথা বলেছেন বহুভাষী সংবাদ সংস্থা ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি কিশোর সরকার।

সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবিদের মতামত

বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের একটি আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে : ইকবাল সোবহান চৌধুরী

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা বাংলাদেশের দ্য ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “ভারতে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পারস্পরিক বিশ্বাসের একটা আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতেই দু’দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট ১৯৭৪ সালে মুুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন লোকসভায় তা পাস না হওয়ায় এটা সাংবিধানিক রূপ পায়নি। নরেদ্র মোদী ব্যক্তিগত উদ্যোগে নেওয়ায় লোকসভায় তা পাস করা সম্ভব হয়েছে। সব দল এই বিলকে সমর্থন করেছেন। সমুদ্র সীমাও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। যোগাযোগ ক্ষেত্রেও রেল, সড়ক ও নৌ ক্ষেত্রে একাধিক রুট চালুর প্রক্রিয়া রয়েছে। দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ-সব ক্ষেত্রে বড় সাফল্য এসেছে। যার সুফল হিসেবে সবচেয়ে ভারতের সেভেসিস্টার্সের নাগরিকরা দীর্ঘমেয়াদী উপকৃত হবেন।”

তিনি আরও বলেন, “সর্বশেষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ২০ লক্ষ টিকা দিয়েছেন। চলতি মাসে ২৯০ মেট্রিকটন জীবনদায়ী অক্সিজেন দিয়েছেন। এটাও মোদীর আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ। তবে চুক্তি হওয়া বাকি টিকা দ্রুত বাংলাদেশকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার।” ইকবাল সোবহান বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই করোনাকালীন মহামারির মধ্যে বাংলাদেশে আসাও নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত প্রয়াসের অংশ বলে সচেতন মানুষ মনে করেন। বিজেপি সরকার ১৫ আগস্ট তাদের স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার কুচকাওয়াজে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর একটি দল অংশ গ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছে। ভারতের ইতিহাসে বাইরের কোনও দেশের সেনাবাহিনী তাঁদের রাষ্ট্রীয় কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ এটাই প্রথম। এটি একটি বিরল ঘটনা। মোদী সরকার এর মাধ্যমে দু’দেশের কুটনৈতিক সম্পর্কে নতুন মাত্র দিয়েছেন। একই ভাবে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আশার পর থেকেই বাংলাদেশে ভারতের জঙ্গিদের যে ক্যাম্প ছিল তার মূল উৎপাটন করছেন। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে সেভেন সিস্টার্সে জঙ্গিবাদ পরিচালনা বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করেছেন। এমনকি বাংলাদেশের ৫০ তম স্বাধীনতা দিবস পালনকালে মোদীর বিরুদ্ধে যারা কুৎসা রটিয়েছে তাদের কঠোর ভাবে দমন করেছেন।

সেভেন সিস্টার্সের যোগাযোগ সহজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে করিডোর হিসেবে ব্যবহারে সুযোগ দেওয়াটা মোদীর বড় কুটনৈতিক সাফল্য : ড. আতিউর রহমান

যোগাযোগ ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তণ, ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের প্রধানের ভুমিকাকে কেমন ভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি, অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর প্রফেসর ড. আতিউর রহমান বলেন, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সের যোগাযোগ সহজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে করিডোর হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়াটা মোদী সরকারের একটি বড় কুটনৈতিক সাফল্য। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কথা স্বীকার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা কতটা, তা ত্রিপুরার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য যোগাযোগ সহজ করার লক্ষ্যে ফেনী নদীর উপরে ব্রিজ উদ্বোধন করার সময় প্রকাশ করেছেন।

আতিউর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে ভারতের সেভেন সিস্টার্সে বাংলাদেশের সিমেন্ট-সহ কৃষিপণ্যের রফতানি বহুলাংশে বেড়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসার ক্ষেত্রে মেদী সরকার অনেক সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছে। এছাড়া ভুটান ও নেপালের ট্রেড ফেসিলেশনের মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে। এ জন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল (বিবিআইএন) মোটরভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ও নরেদ্র মোদীর সময় সীমান্তে বর্ডার হাট করা হয়েছে। এতে দুই দেশের সীমান্তের মানুষের মধ্যে আরো আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের রফতানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ আরো বাড়াতে বাংলাদেশের বন্দরগুলো ব্যবহারের জন্য আধুনিক ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

যুদ্ধ ছাড়াও সীমান্ত চুক্তি সম্ভব বাংলাদেশ-ভারত ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমন্ট তারই উদাহরণ : লায়েকুজ্জামান

ল্যান্ড বাউন্ডারি এ্যাগ্রিমেন্ট নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে দৈনিক কালের কন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি লায়েকুজ্জামান বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধ ছাড়া সীমান্ত চুক্তি সম্ভব তা ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্টের মধ্য দিয়েই মনে হয় প্রথম প্রমানিত হয়েছে। তবে প্রচারণার অভাবে ভারতের অবদানের বিষয়, বাংলাদেশের নাগরিকরা জানতে পারে না বললেই চলে। ভারতের অবদানের বিষয়টা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সঠিক ভাবে তুলে ধরার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগও নেওয়া হয় না। আর ১৯৪৭ সালের পর থেকে এই দেশের মানুষকে ভারত বিদ্বেষী করার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে জাসদ এবং পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত তা আরও উস্কে দিয়ে ভারত বিরোধীতার রাজনীতি করছে।

নেতিবাচক প্রচার সব দেশের গণমাধ্যমের চরিত্র : সাজ্জাম আলম খান তপু

গণমাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশের ভালো দিকগুলি তুলে না ধরে নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরার বিষয় জানতে চাইলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক যমুনা টিভির বিজনেস এডিটর সাজ্জাম আলম খান তপু বলেন, নেতিবাচক প্রচার সব দেশের গণমাধ্যমের চরিত্র। আমরা চেষ্টা করছি যাতে দু’দেশের সম্পর্কের বিষয় নিয়ে সঠিক তথ্য গণমাধ্যমে আসে। তবে টিকা নিয়েও যারা অপপ্রচার করেছে তারা অনেকেই আবার ভরতের দেওয়া টিকা নিয়েছেন। এখন আবার না পাওয়ায় আফসোস করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *