BRAKING NEWS

ত্রিপুরার দিদি প্রতিমা ভৌমিক হলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী

আগরতলা, ৭ জুলাই : ছোট্ট পার্বতী রাজ্য ত্রিপুরা। মাত্র ৩৭ লক্ষ জনগনের বসবাস। এই রাজ্য থেকে সাংসদ হয়েছেন অনেকেই। কিন্ত, কেউই স্বপ্নেও ভাবেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পাবে ত্রিপুরা। ঘোর কাটিয়ে স্বপ্নকে সত্যি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ত্রিপুরায় প্রথমবারের সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক হচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই, আজকের দিনটি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তুখোড় রাজনীতিবিদ এবং প্রচন্ড পরিশ্রমের বিনিময়েই আজ প্রতিমা দেবীর সাফল্য, তা অকপটে স্বীকার করলেন তাঁর জন্মদাত্রী মা কানন ভৌমিক। সমাজসেবা এবং রাজনীতি নিয়েই জীবন, সংক্ষিপ্ত আলোচনায় জানালেন তিনি।


একেই হয়তো বলে বিধিলিপি। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন প্রতিমা ভৌমিক। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ২০ বছরের মুখ্যমন্ত্রী তথা পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ মানিক সরকার। নির্বাচনে প্রতিমা ভৌমিকের পরাজয় হয়তো সেদিন স্থির হয়েছিল তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হবেন। কারণ, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম ত্রিপুরা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হন তিনি। বিপুল ভোটে তিনি জয়ী হয়েছেন। এরপর থেকেই রাজনীতির অলিন্দে শুধুই গুঞ্জন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হচ্ছেন তিনি। অবশেষে, মোদী-২ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা বিস্তারে প্রধানমন্ত্রী তাঁর অন্যতম সৈনিক হিসেবে বেঁছে নিলেন প্রতিমা ভৌমিককে।


১৯৬৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর অধুনা পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় বড়নারায়নপুরে জন্মগ্রহণ করেন প্রতিমা ভৌমিক। তাঁর বাবা প্রয়াত দেবেন্দ্র কুমার ভৌমিক পেশায় কৃষক ছিলেন। তাঁর মা কানন ভৌমিক গৃহ কর্ম সামলাতেন। অত্যন্ত গরীব পরিবারে জন্মালেও পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন তিনি। ১৯৯১ সালে আগরতলা মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে তিনি বায়ো-সাইন্সে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি বিজেপি-তে যোগ দেন। তারপর থেকে দলের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সাথেও নানাভাবে যুক্ত ছিলেন। সংঘের পৃষ্টপোষক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।


দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি যুব মোর্চার দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি মহিলা মোর্চার প্রদেশ সভানেত্রীর গুরু দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেছেন। ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারী তিনি প্রদেশ বিজেপির সাধারণ সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে ২০১৮ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৫ বছরের দীর্ঘ বাম শাসন উত্খাতের পেছনে তাঁর অন্যতম বড় ভূমিকা ছিল। তবে, বিধানসভা নির্বাচনে তিনি জয়ী হতে পারেননি। কিন্ত, হাল ছেড়ে দেননি তিনি। দলেরও তাঁর প্রতি অগাধ আস্থা ছিল। ফলে, লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে বাছাই করে দল। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। প্রতিমা ভৌমিক ৫৭৩৫৩২ ভোট পেয়েছিলেন। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সংসদ অধিবেশনে ত্রিপুরার উন্নয়নে একাধিক দাবি তুলে ধরেন। তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতা দেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে লোকসভার সচেতক হিসেবে বাছাই করেন। এছাড়াও তিনি লোকসভায় দুইটি কমিটির সদস্য হয়েছেন।


জনদরদী হিসেবেও প্রতিমা ভৌমিক সর্বজনবিদিত। অসম বন্যায় তিনি সাহায্য স্বরূপ তাঁর প্রথম মাসের বেতন দান করেছেন। ত্রিপুরায় করোনাকালে কঠোর পরিশ্রমের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন তিনি। রোগীদের খোজ খবর নেওয়ার জন্য স্বয়ং পিপিই কিট পরিধান করে কোভিড ওয়ার্ডে গিয়েছেন। করোনা আক্রান্তদের মনোবল বাড়িয়েছেন। এছাড়াও, রাজ্যে দলমত নির্বিশেষে সকলের মানুষের বিপদে ছুটে গেছেন তিনি। তাই, ত্রিপুরায় তিনি সকলের ‘দিদি’ হিসেবে পরিচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *