আগরতলা, ৬ জুলাই (হি. স.) : আগরতলায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ বিলোপ করায় বাংলাদেশের ২০ জন নাগরিক যৌথ বিবৃতি দিয়ে মনের ব্যথা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে স্মৃতিস্তম্ভটি যথাস্থানে স্বমহিমায় পুন:স্থাপনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, বাংলাদেশের লেখক ও ভাষা সংগ্রামী আব্দুল গাফফার চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক অনুপম সেন, নাট্য-ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযোদ্ধা, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ডা. সারওয়ার আলী, মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, সাংবাদিক আবেদ খান, মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেত্রী লায়লা হাসান, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক আবদুস সেলিম, মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল্লাহ খান বাদল, বীরপ্রতীক হাবীবুল আলম, লেখক, সাংবাদিক, সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি শাহরিয়ার কবির, মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম’৭১-র কার্যনির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হারুন হাবীব, ইতিহাসবিদ, বঙ্গবন্ধু চেয়ার, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, প্রাবন্ধিক ও ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মফিদুল হক, ইতিহাসবিদ, উপাচার্য, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, সংসদ সদস্য ও নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জাম নূর এবং সংসদ সদস্য ও নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জাম নূর।
তাঁদের বক্তব্য, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারত তথা ত্রিপুরার মানুষের বিশাল সমর্থন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার কেন্দ্রস্থল পোষ্ট অফিস চৌমুহনীর ৪০ ফুট উঁচু শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি ভারত ও বাংলাদেশের গণমানুষের অভিন্ন মুক্তির আকাঙ্খা ও সৌহার্দ্যরে অন্যতম প্রধান স্মৃতিচিহ্ন, যা দুই দেশের বীর শহীদদের সম্মিলিত রাখিবন্ধনের সাক্ষী। আগরতলার এই স্মৃতি-বিজড়িত স্থানটি ঘিরেই ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধরত গণমানুষকে ঐতিহাসিক ঋণবন্ধনে আবদ্ধ করেছিল। এই স্মৃতিস্তম্ভটি সম্প্রতি বিলোপ করা হয়েছে বলে তাঁরা গণমাধ্যমের খবরে জানতে পেরেছেন। তাঁরা বলেন, দুই দেশের রক্তরঞ্জিত সম্পর্কের ইতিহাস-জড়িত স্মৃতিস্তম্ভটি সরিয়ে ফেলায় আমরা ব্যথিত বোধ করছি। আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে স্মৃতিস্তম্ভটি যথাস্থানে স্বমহিমায় পুনঃস্থাপনের অনুরোধ জানাই এবং দুই দেশের মানুষের সম্পর্কের প্রতীকী স্মৃতিস্মারক সমূহ যথাযথ সংরক্ষণের প্রয়োজন বোধ করি।
প্রদেশ কংগ্রেসের বাংলাদেশ লিবারেশন কমিটির চেয়ারম্যান মানিক দেব ওই স্মৃতি স্তম্ভটি পুণরায় পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা সহ ভারতীয় সেনাসদস্যদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ স্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তীসময়ে এই জায়গাটি একটি রাজ্যের ইতিহাস হয়ে উঠে। তাঁর মতে, একটি মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠান করে এবং যথাযোগ্য সন্মান প্রদর্শন করেই এই শহীদ স্মৃতিটি সরানো উচিত ছিল। তার বদলে বর্তমান সরকার অত্যন্ত অমর্যাদার সাথে এই শহীদ স্মৃতিটিকে গুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং ভারতীয় সেনাদের প্রতি অসন্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। তাঁর কথায়, তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লালের বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিনত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভুমিকা ছিল। তাঁদের তৎপরতায় তৎকালীন সময়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছিল। তাই, তিনি পুণরায় ওই স্মৃতি স্তম্ভ পুণরায় পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।