আগরতলা, ১৮ মে (হি.স.) : করোনা অতিমারি সমগ্র ত্রিপুরায় ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নেওয়ার কারণে আগামী ১৯ মে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৫টা প্রতিদিন ২৬ মে পর্যন্ত নৈশকালীন কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। শুধু তা-ই নয়, আগামী ২০ মে থেকে জরুরি পরিষেবা ব্যতীত আন্তঃরাজ্য পরিবহণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ২৬ মে পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ। এক্ষেত্রে পুর নিগম এলাকায় সম্পূর্ণ দিন কারফিউর সিদ্ধান্ত যথারীতি বলবৎ থাকবে, দাবি তাঁর। এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি আগামীকাল জারি হবে, বলেন তিনি। তিনি সকলকে সতর্ক করে বলেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ত্রিপুরা সরকার কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, গরীব মানুষের স্বার্থে ত্রিপুরা সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বর্তমানে ত্রিপুরায় করোনা-র প্রকোপ মোকাবিলায় আগরতলা পুর নিগম এলাকায় সারা দিন কারফিউ জারি রয়েছে। এছাড়া, পানিসাগর নগর পঞ্চায়েত, কৈলাসহর পুর পরিষদ, উদয়পুর পুর পরিষদ, বিশালগড় পুর পরিষদ, অমরপুর নগর পঞ্চায়েত, নাগিছরা, বিএসএফ পাড়া, রানিরবাজার নগর পঞ্চায়েত এবং মেলাঘর ও সোনামুড়া কিছু এলাকায় কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ শিক্ষা মন্ত্রী এক তথ্য তুলে ধরে বলেন, আগরতলা পুর নিগম এলাকায় গত ৭ দিনে ৩,৪৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬২৬ জনের দেহে করোনা-র সংক্রমণ মিলেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পুর নিগম এলাকায় করোনা আক্রান্তের হার ১৮ শতাংশ। তেমনি, সারা ত্রিপুরায় বর্তমানে করোনা আক্রান্তের হার ৬.৯২ শতাংশ। এদিন তিনি জেলা ভিত্তিক করোনা আক্রান্তের তথ্য তুলে ধরে বলেন, পশ্চিম জেলায় সর্বোচ্চ ১১.২২ শতাংশ, সিপাহিজলা জেলায় ৪.৯৭ শতাংশ, খোয়াই জেলায় ৫.৫৯ শতাংশ, গোমতি জেলায় ৪.৭৫ শতাংশ, দক্ষিণ জেলায় ৪.১২ শতাংশ, ধলাই জেলায় ৪.৪৭ শতাংশ, উনকোটি জেলায় ৭.৯২ শতাংশ এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ৩.৫৬ শতাংশ গড়ে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।
তাঁর দাবি, মে মাসে ৯৪,৬৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬,৫৫৫ জনের দেহে করোনা-র সংক্রমণ মিলেছে। বর্তমানে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫,৩৬৭ জন। তিনি বলেন, করোনা-র দ্বিতীয় ঢেউয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০১ জন। বাকি ৪,৬৬৬ জন বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। এদিন তিনি বলেন, ত্রিপুরায় করোনাকালে গতকাল রেকর্ড সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। গতকাল একদিনে সর্বোচ্চ ৯,৭৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭৪৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। আক্রান্তের হার ৭.৬২ শতাংশ।
এদিকে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংক্রান্ত এক তথ্য তুলে ধরে নাথ বলেন, ত্রিপুরায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ১৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া, ২০২০ সালের জুলাইয়ে ৯১ জন, অক্টোবরে ৬৩ জন এবং ২০২১ সালের মে মাসে এখন পর্যন্ত ৪৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তিনি জানান, সারা ত্রিপুরায় করোনা লাগামহীন ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই, সারা ত্রিপুরায় নৈশকালীন কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা।