BRAKING NEWS

জাতির উদ্দেশে ভাষণে করোনা মোকাবিলায় লকডাউন নয়, বিধি মেনে চলায় জোর দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নয়াদিল্লি, ২০ এপ্রিল (হি.স.): করোনা মোকাবিলায় লকডাউন নয়, মাইক্রো কনটেইনমেন্ট জোন ও করোনা বিধি মেনে চলার উপর জোর দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানালেন, লকডাউন এখন কোনও বিকল্প নয়। মানুষের জীবন ও জীবিকা দুটি বিষয়ের কথাই মাথায় রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, “আমরা সকলে যদি কোভিড প্রটোকল মেনে চলি, সহিষ্ণুতা ও সংযম বজায় রাখি, বিনা কারণে বাড়ি থেকে না বেরোই তা লকডাউনের প্রশ্নই নেই। আমি আমার তরুণ বন্ধুদের বলব তাঁরা যেন এই ব্যাপারটা সামাজিক মিশনের মত গ্রহণ করেন। পরিবারের সদস্যদের পরিজনদের তাঁরা যেন বোঝান যে বিনা কাজে, বিনা প্রয়োজনে কেউ যেন বাড়ির বাইরে না যায়।”

দেশে বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। গত কয়েকদিনে লাগাতার নয়া আক্রান্তের সংখ্যা দু’লাখের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। দিল্লিতে লকডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্রও সেই পথে হাঁটার কথা ভাবছে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণেপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে দেশ আজ বড় যুদ্ধ করছে। কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল। তারপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। আপনারা যে যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তা জানি। পরিবারের সদস্যদের মতো আপনাদের সঙ্গে আমি আছি। দেশবাসীকে সাহস জুগিয়ে তিনি বলেন, ভয় পাওয়ার কারণ নেই। অযথা যাতে ভয়ের পরিবেশ তৈরি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তবে হ্যাঁ, মানুষকে আরও সতর্ক আরও সচেতন হতে হবে। রাম নবমী আসছে, রমজান মাস চলছে। রাম নবমীতে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি মেনে সংযম রাখতে হবে। রমজানও সহিষ্ণুতা ও সংযমের কথাই বলে।

এদিন,  চিকিৎসক, পুলিশ, সাফাইকর্মীদের প্রশংসা করলেন। নিজের পরিবারের কথা না ভেবে যেভাবে সমাজের জন্য কাজ করছেন, তা প্রশংসনীয়।

এদিন তিনি আশা প্রকাশ করেন যে,  গত কয়েকদিনে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা দ্রুতগতিতে পরিস্থিতির উন্নতি করবে। এবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে। সেই বিষয়টি সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার এবং বেসরকারি ক্ষেত্র কাজ করছে।

এদিন তিনি জানান, এবার করোনার সংক্রমণ বাড়তে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির তুলনায় বাড়ানো হচ্ছে উৎপাদন। সেইসঙ্গে হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর কাজ চলছে। কয়েকটি জায়গায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেখানে বড় আকারে করোনা হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে।

এদিনের ভাষণে টিকা প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  গত বছর যখন দেশে কয়েকজন করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছিল, তখন থেকেই বিজ্ঞানীরা টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। এটা একটা দলগত প্রচেষ্টা। যে কারণে দুটি ভারতীয় প্রতিষেধক নিয়ে টিকাকরণ শুরু হয়েছে। টিকাকরণের  শুরু থেকেই সব শ্রেণির মানুষের কাছে প্রতিষেধক দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।  আগের মতোই সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে টিকা মিলবে। আমাদের সকলের চেষ্টা হল প্রাণ বাঁচানো। আর্থিক গতিবিধি এবং জীবিকার উপর যাতে ন্যূনতম প্রভাব পড়ে, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। সেজন্য দেশের কর্মশক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব টিকাকরণ করা হবে। এবিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে তাঁর অনুরোধ, যে শ্রমিকরা যেখানে আছেন, সেখানেই থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করুন। সেখানেই টিকা দেওয়া হবে। সেখানেই কাজ করা হবে।

এদিন তিনি সকলকে আশ্বস্থ করে বলেন,  গতবারের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি আলাদা। গত বছর গবেষণাগার ছিল না। পিপিই কিট অপ্রতুল ছিল। দেশের মানুষ ধৈর্য এবং সংযমের সঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এই কৃতিত্ব দেশবাসীর।

দেশবাসীর কাছে তাঁর আবেদন, সংকটের সময় এগিয়ে আসুন। যাঁদের প্রয়োজন, তাঁদের সাহায্য করুন। যুব প্রজন্মের কাছে অনুরোধ, নিজেদের এলাকায় ছোটো ছোটো কমিটি তৈরি করে করোনা সুরক্ষাবিধি মেনে চলার শিক্ষা দিন। তাহলে কনটেনমেন্ট জোন, কার্ফুর প্রয়োজন পড়বে না। লকডাউন তো দূরের কথা।  

পাশাপাশি বড়দের বাইরে যাওয়া আটকাতে ছোটোদের কাছে আবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী । তিনি বলেন, ছোটোদের কাছে অনুরোধ, বাড়িতে এমন নিয়ম চালু কর, যাতে তাঁরা একেবারে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে না বের হন। এই অবস্থায় দেশকে লকডাউন থেকে বাঁচাতে হবে। রাজ্যগুলির কাছে আমার অনুরোধ, করোনা রোখার শেষ উপায় হিসেবে যেন লকডাউনকে বিবেচনা করা হয়। পরিবর্তে ছোটো ছোটো কনটেনমেন্ট জোনের উপর জোর দিন।

প্রধানমন্ত্রীর এদিনের ভাষণে এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, করোনা মোকাবিলা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। কেবল কেন্দ্রের সরকারেরও নয়। এখানে রাজ্য সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সমাজের প্রতিটি মানুষের অংশীদারিত্ব রয়েছে। প্রত্যেকে তার নিজের ভাগের কাজটুকু দায়িত্বের সঙ্গে পালন করতে পারলে এই ঝড়ও কেটে যাবে।

প্রসঙ্গত, কোভিডের কারণে ইতিমধ্যেই ঘরোয়া অর্থনীতির কঠিন অবস্থা। বিশ্ব ব্যাঙ্কের বিশ্লেষণ অনুযায়ী অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারের শীর্ষ নেতারা বুঝতে পারছেন, ফের লকডাউন করলে অর্থনীতির মাজা আরও ভেঙে যাবে। তাই যেন তেন প্রকারে লকডাউন আটকানোই লক্ষ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *