সিপিএম দিকভ্রষ্ট, নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে ব্যর্থ চেষ্টা করছে তৃণমূল : রিঙ্কু নস্কর

অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ৭ এপ্রিল (হি স)। একাধিক সম্ভাব্য দাবিদারকে হতাশ করে এবার ভোটে যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে রিঙ্কু নস্করকে। গোড়ায় দলের কর্মীদের একাংশে এ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও এখন প্রার্থীকে জেতানোর ব্যাপারে এককাট্টা। স্থানীয় কাউন্সিলার হওয়ায় এলাকায় পরিচিত মুখ। তাই প্রচারেও সুবিধা হচ্ছে। তবে লড়াই শক্ত। কারণ, তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন যাদবপুরেরই আর এক প্রভাবশালী পুরপিতা তথা মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার। আর সিপিএমের প্রার্থী গতবারের এই কেন্থ্রের বিধায়ক তথা বিধানসভার বাম প্রধান সুজন চক্রবর্তী। 

ভোটের মুখে বিজেপিতে যোগ দিয়ে প্রার্থী হন কলকাতা পুরসভার ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর রিঙ্কু নস্কর। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নিয়ে সিপিএমের অনেক কর্মী-সমর্থক খুশি নন। দলের সঙ্গে বাড়ে দূরত্বও। রিঙ্কুও তাঁদের এক জন। এ বিষয়ে সিপিএমের এক নেতা বলেন, “রিঙ্কুর স্বামী মানস মুখোপাধ্যায় প্রোমোটিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। অনেক দিন হল বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বেশ কিছু দিন ধরেই রিঙ্কুর দলবদলের খবর আসছিল আমাদের কাছে। ওঁকে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে।” তা সত্বেও রিঙ্কুকে দলে রাখতে সিপিএম নেতারা আসরে নামেন। নেতারা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু রিঙ্কু অনড়ই ছিলেন। সিপিএম থেকে একে বারে সরাসরি বিজেপিতে যোগ দিলেন কেন? ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে রিঙ্কু বলেন, “সিপিএম এখন পথভ্রষ্ট, আদর্শচ্যুত হয়েছে। 

ছেলেবেলা কেটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগণায় গৌড়দহ স্টেশনের কাছে নারায়ণপুরে। স্থানীয় অক্ষয় বিদ্যামন্দির থেকে মাধ্যমিক, ক্যানিংয়ের একটি ষ্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক। এর পর প্রেসিডেন্সি থেকে বাংলায় স্নাতক, রবীন্দ্র ভারতী থেকে স্নাতকোত্তর এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতার পাঠ্যক্রম। জানালেন, পরিবারের কেউ রাজনীতি করতেন না। আমি ২০০৮ সাল নাগাদ ডিওয়াইএফ করতে শুরু করি। ২০১০-এ পুরসভার ভোটে আমাকে সিপিএম প্রার্থী করে। কাউন্সিলার হই।” এর আগে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে রিঙ্কু দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর কেন্দ্র থেকে সিপিএমের প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে তিনি জিততে পারেননি। এলাকায় লড়াকু নেত্রী হিসাবেই পরিচিত ছিলেন রিঙ্কু। গত পুর নির্বাচনেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ে যাদবপুর এলাকার ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে তিনি জয়ী হন। 

১৯৬৭ সালে যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র তৈরি হওয়ার পর থেকে এখানে সিপিএমের স্ট্রাইচিং রেট অনেক বেশি। ১৯৮৭, ’৯১, ’৯৬, ২০০১, ২০০৬— উযর্যুপরি পাঁচ বার জেতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকেও ২০১১-র ভোটে হেরে যান। তাঁর ঝুলিতে পড়ে ৪৪.৭৬ শতাংশ ভোট। একদা তাঁর অধীনে কাজ করা আমলা মণীশ গুপ্ত পান ৫৩.৩১ শতাংশ। ২০১৬-তে ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে হারানো জমি উদ্ধার করেন সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী। মণীশ গুপ্ত পান ৪১.১৫ শতাংশ। বিজেপি-র ডঃ মোহিত রায় পান ৬.৮২ শতাংশ। তবে বিজেপি-র ভোট বেড়ে ২,৪৭৯ থেকে বেড়ে হয় ১৩,৯২২। রিঙ্কু বলেন, “এবারের ভোটে জাদু সংখ্যায় দাঁড়াবে এটা।” প্রচার করতে গিয়ে মাঝে মাঝেই বাধার মুখে পড়ছেন রিঙ্কু। এ ব্যাপারে থানা-পুলিশ করেও লাভ হচ্ছেনা বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, “তৃণমূল পায়ের নিচের জমি হারিয়ে ফেলেছে। নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে এভাবে ব্যর্থ চেষ্টা করছে।” যাদবপুরে ভোট চতুর্থ পর্যায়ে, ১০ এপ্রিল।