BRAKING NEWS

আমার মামার বাড়ির সদস্যদের মধ্যে বইছে স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্ত : অসিত মিত্র

অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ৬ এপ্রিল (হি.স.): ১৯৬৭ থেকে ২০০৬— এই সময়কালে আমতায় ১১ বার বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ১০ বারই জিতেছে সিপিএম। ’৭৭ থেকে ’৯১— চার বার বারীন্দ্রনাথ কোলে এবং তার পর তিন বার প্রত্যুষ মুখার্জি। সিপিএমের এই জয়ের ধারাবাহিকতা ২০১১-তে ভেঙে দিলেন অসিত মিত্র। এবার বিধানসভা ভোটে আমতায় জোট-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মিত্র। জিতে হ্যাটট্রিক করতে পারেন কি না, সেটাই দেখার। আমতার কথায় প্রবাদপ্রতিম আলামোহন দাশের একটা উল্লেখ থাকা দরকার। বাংলার উদ্যোগপতিদের এই পথিকৃত স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। এবং পরবর্তী জীবনে সমাজসেবা ও রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।ছোট ব্যবসা করলেও পরে তিনি বৃহৎ শিল্পের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি নিজের পদবিতেই শিল্পশহর দাশনগর গড়ে তোলেন। ৭০ বছর আগে ১৯৫১ সালের প্রথম নির্বাচনে আমতা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রাথী হিসাবে জয়ী হন।
কংগ্রেসের মধ্যেও কিছু দিক থেকে ব্যতিক্রমী অসিত মিত্র। মূলত তাঁর সরল, অনারম্বর জীবনের জন্য। ক্ষোভ-দুঃখকে গুরুত্ব না দিয়ে থেকে গিয়েছেন আজীবন কংগ্রেসি। ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে বললেন, “আসলে আমার মামার বাড়ির সদস্যদের মধ্যে বইছে স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্ত।” জন্ম বাগনান থানা এলাকার দেউল গ্রামে। স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন বাবা মারা যান। সাময়িক পড়াশোনা ছেড়ে কারখানায় শ্রমিকের কাজ নিতে হয়। চার বছর বাদে ফের কলেজে ভর্তি হয়ে বি কম পাশ করেন। পরে শিক্ষকতায় যান। ছয়ের দশকের মাঝপর্ব থেকে প্রথমে ছাত্র পরিষদের সদস্য, এর পর ধাপে ধাপে জেলা সহ সভাপতি, সভাপতি। সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে উত্তাল দিনগুলোয় দিল্লি থেকে বাড়তি দায়িত্ব পেলেন নবগঠিত ন্যশমাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার রাজ্য যুগ্ম সম্পাদকের।
নির্বাচনের প্রথম অধ্যায়টা কিন্তু অসিতবাবুর মোটেই সুখকর হয়নি। আগে এই নির্বাচনী কেন্দ্রের নাম ছিল কল্যাণপুর।  ১৯৭৭, ’৮২, ’৮৭-র বিধানসভার ভোটে হারের হ্যাটট্রিকের পর প্রথম জিতলেন ’৯৬-এ। ২০০১-এ আবার জয়, ’০৬-এ পরাজয়। এবার কেন্দ্রের মানচিত্র বদল হয়ে নাম হল আমতা। ২০১১ ও ’১৬-র ভোটে জয় পেলেন। ২০০১-এ ছিলেন বিধানসভায় কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক। এখন কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সম্পাদক। পুরুলিয়া জেলায় কংগ্রেসের কোনও পর্যবেক্ষক ছিলেন না। কয়েক মাস আগে তাঁকে ওই জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেয় প্রদেশ কংগ্রেস। অধীর চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে। ২০২০-র ১৮ মার্চ বিধানসভায় তাঁর আনা ছবি ও মালা দিয়ে শততম জন্মদিনে বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানকে শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা ভবনের ‌বারান্দায় মাল্যদানের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী ডেকে নেন অসিতবাবুকে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারনায় মুখ্যমন্ত্রীর পর তিনি বক্তব্য রাখেন।
২০১১-র জনগণনায় আমতার ৮২ শতাংশ লোক গ্রামীণ এলাকার। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে তৃণমূল যেখানে উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের অধীন আমতায় পেয়েছিল প্রদত্ত ভোটের ৪৪.৬৭ শতাংশ, সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী অসিতবাবু পান ৪৭.০৫ শতাংশ, অনেক ব্যবধানে বিজেপি ৫.৮৩ শতাংশ। এবারে পরিস্থিতি সহজ নয়, তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। ৭৪ বছরেও অক্লান্ত প্রচার চালাচ্ছেন। ভোটের আগের দিন সকালে বললেন, “এই তো দেখুন ২০ জন বসে আছে। প্রায় প্রতিদিনই এরকম অনেকে আসেন। এঁদের অনেকেই সংখ্যালঘু।  আজন্ম এলাকাটাকে দেখে এসেছি। আমরা পরস্পরকে চাইলেই পাই। ভোটে তার প্রতিফলন হবে না?” এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে ‘হিন্দু সংহতি’-র সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য। দেবতনুবাবুর দাবি, এলাকায় তাঁর সংগঠনের যথেষ্ঠ প্রভাব রয়েছে। তৃণমূল প্রার্থী করেছে সুকান্ত পালকে। তিন প্রার্থীই রয়েছেন জেতার আশায়। আমতায় ভোট ৬ এপ্রিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *