বাঁকা পথেই চাকুরীর দাবিতে আবারও পথে নামলেন চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা

আগরতলা, ৩১ মার্চ (হি. স.)৷৷ বাঁকা পথেই চাকুরীর দাবিতে আবারও পথে নামলেন চাকুরিচ্যুত শিক্ষক-রা৷ ত্রিপুরায় ভুল নিয়োগ নীতির ফলে আদালতের রায়ে ১০৩২৩ শিক্ষকদের চাকুরিচ্যুতি-র এক বছর পূর্ণ হওয়ায় আজ তাদের মধ্যে একটা অংশ সুবিশাল মিছিল সংগঠিত করেছে৷ ত্রিপুরা সরকার গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগ-র ব্যবস্থা করেছে৷ তাতে, চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য বয়সসীমা-য় ছাড় দিয়েছে৷ কিন্ত, ওই অশিক্ষক পদে চাকুরীর জন্য আবেদন জানানোর বদলে তারা পরীক্ষা ছাড়াই স্থায়ী চাকুরীর দাবিতে পথে নেমেছেন৷ জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি (জেএমসি)-র ব্যানারে ত্রিপুরা সরকারের কাছে তাদের দাবি, অন্যায়ভাবে চাকুরী থেকে ছাটাই করা হয়েছে, তাই পরীক্ষা ছাড়াই স্থায়ী চাকুরী প্রদান করা হোক৷ কমিটির সদস্য বিজয় কৃষ্ণ সাহা-র বক্তব্য, সরকারিভাবে চাকুরিচ্যুতি-র কোন চিঠি পাইনি৷ অথচ, এক বছর ধরে আমাদের বেতন বন্ধ করে রেখেছে ত্রিপুরা সরকার৷


প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ত্রিপুরা হাই কোর্ট ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিল করেছিল৷ ভুল নিয়োগ নীতি-র কারণে আদালত পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করায় ত্রিপুরা-য় তীব্র আলোড়ন হয়৷ বামফ্রন্ট আমলে অস্নাতক, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষক পদে বিভিন্ন পর্যায়ে ২০১০ সাল পর্যন্ত নিয়োগ করা হয়েছিল৷ ওই নিয়োগ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ত্রিপুরা হাই কোর্টে মামলা হয়েছিল৷ তন্ময় নাথ এবং অন্যান্য-দের দায়ের মামলায় আদালত নিয়োগ নীতি-তে ত্রুটি খুঁজে পায় এবং চাকুরী বাতিল করে দেয়৷ ওই রায়-কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তদানিন্তন ত্রিপুরা সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল৷ কিন্ত, সুপ্রিম কোর্ট ত্রিপুরা সরকার-র আবেদন খারিজ করে দেয় এবং ত্রিপুরা হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে৷


এরপর থেকে একাধিকবার তাদের চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জানানো হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে৷ ত্রিপুরা সরকারের আবেদন মেনে এডহক ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট ৩১ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত চূড়ান্ত সময়সীমা বেধে দিয়ে মেয়াদ বৃদ্ধি করেছিল৷ সে মোতাবেক ২০২০ সালের ৩১ মার্চ ওই শিক্ষকদের চাকুরী বাতিল হয়ে গেছে৷ এরপর থেকেই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন৷ করোনা-র প্রকোপের মাঝে ত্রিপুরা সরকার মানবিকতার খাতিরে তাদের এক মাসের বেতন দিয়ে সহায়তা করেছে৷ শুধু তাই নয়, তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে৷ অবশ্যই নিয়মের গন্ডি-র মধ্যে থেকেই তাদের জন্য বন্দোবস্ত হয়েছে৷ ত্রিপুরা সরকার বিভিন্ন দফতরে শূন্য পদ খুঁজে বের করেছে৷ ওই শূন্য পদ পূরণে প্রক্রিয়া-ও শুরু করেছে৷


ত্রিপুরা সরকার গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগে প্রক্রিয়ায় পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছে৷ তাতেই, তীব্র আপত্তি চাকুরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকা-দের৷ আজ, জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি-র সদস্য বিজয় কৃষ্ণ সাহা বলেন, আজ চাকুরিচ্যুতি-র এক বছর পূর্ণ হয়েছে৷ অথচ, এখন চাকুরিচ্যুতি-র কোন চিঠি ত্রিপুরা সরকারের তরফে আমরা পাইনি৷ তাছাড়া, আদালতের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা করে আমাদের চাকুরী বাতিল করা হয়েছে, কোন পরীক্ষা ছাড়াই স্থায়ীভাবে আমাদের চাকুরীর ব্যবস্থা করতে হবে, সাফ জানালেন তিনি৷ অথচ, বিধানসভায় দেওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রী-র দেওয়া তথ্যে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ চাকুরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকারা অশিক্ষক পদে চাকুরীর জন্য আবেদন জানিয়েছেন এবং তারা পরীক্ষা দেবেন৷


বিধানসভায় দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১০৩২৩ চাকুরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে বর্তমানে রয়েছেন ৯১০০ জন৷ তাদের মধ্যে ৮৬২৬ জন অশিক্ষক পদে নিয়োগে আবেদন জানিয়েছেন৷ তাতে স্পষ্ট, একটা ছোট্ট অংশ চাকুরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকা ত্রিপুরা সরকারের ব্যবস্থাপনায় অসন্তষ্ট এবং তাঁরা সম্ভবত আবারও বাঁকা পথেই চাকুরী হোক চাইছেন৷ ত্রিপুরা সরকার সাফ জানিয়েছে, চাকুরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল হয়েও নিয়ম বহির্ভূত কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *