BRAKING NEWS

নজরে নন্দীগ্রাম, টানটান উত্তেজনায় বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় রাজ্যের চার জেলায় ভোট

কলকাতা, ৩১ মার্চ (হি. স.) : রাত পোহালেই বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হবে। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় রাজ্যের চার জেলার মোট ৩০ আসনে ভোট থাকলেও গোটা দেশের নজর কার্যত নন্দীগ্রামেই। হাইভোল্টেজ এই আসন থেকে লড়ছেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। এছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় রয়েছে ৯টি বিধানসভা কেন্দ্র। বাঁকুড়ার ৮টি কেন্দ্রে কাল বিধানসভা ভোট। এরই পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুরের ৯টি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ পর্ব চলবে। এদিন জেলায়-জেলায় ভোট প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে। ইভিএম নিয়ে বুথে-বুথে পৌঁছে গেছেন ভোটকর্মীরা।সব মিলিয়ে ভোটের আগে সেজে উঠেছে নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলো।

বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম, তমলুক, পাঁশকুড়া পূর্ব, পাঁশকুড়া পশ্চিম, ময়না, নন্দকুমার, মহিষাদল, হলদিয়া, চণ্ডীপুরে হবে ভোটগ্রহণ। জেলায় দ্বিতীয় দফার ভোট প্রস্তুতি তুঙ্গে। বুধবার সকাল থেকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রগুলি থেকে ভোটকর্মীদের ইভিএম-সহ যাবতীয় সরঞ্জাম বিলির কাজ শুরু হয়েছে। ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে পৌঁছে যাচ্ছেন ভোটকর্মীরা। করোনার সংক্রমণ এড়াতে এদিন প্রতিটি বুথে স্যানিটাইজেশনের কাজ চলছে। এরই পাশাপাশি আগামীকাল বাঁকুড়ার আটটি কেন্দ্রে হবে ভোটগ্রহণ। বাঁকুড়ার তালডাংরা, বাঁকুড়া, বড়জোড়া, ওন্দা, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর, ইন্দাস, সোনামুখীতে নির্বাচনে ভোট গ্রহণ পর্ব হবে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে জেলার ১২টি কেন্দ্রেই এগিয়ে বিজেপি। বুধবার সকাল থেকেই ভোটের সামগ্রী বিতরণ কেন্দ্রগুলিতে পৌঁছে যান ভোটকর্মীরা। ইভিএম, ভিভিপ্যাট-সহ অন্যান্য ভোটের সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে ভোটকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন তাঁরা। সার্বিকভাবে নির্বাচনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট ভোটকর্মীদের একটি বড় অংশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের ন’টি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। আগামিকাল জেলার খড়গপুর সদর, নারায়ণগড়, সবং, পিংলা, ডেবরা, দাসপুর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, কেশপুরে ভোটগ্রহণ হবে। সেই জেলাতেও বুধবার সকাল থেকে একই পরিস্থিতি। ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে বুথমুখী ভোটকর্মীরা। একইদিনে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেও হবে ভোটগ্রহণ। এই জেলায় এবার তিন দফায় হবে নির্বাচন। আগামীকাল গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ, সাগর কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে।

দ্বিতীয় দফার ভোটেও কোনওরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তৎপর নির্বাচন কমিশন। বুথে-বুথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন রাখা হচ্ছে। হিংসা এড়িয়ে সুষ্ঠু ভোট পরিচালনায় এবার কার্যত ফ্রি-হ্যান্ড দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। সব থেকে বেশি নজরে রয়েছে নন্দীগ্রাম। গোটা নন্দীগ্রামে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। মোতায়েন হয়েছে ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। নন্দীগ্রামে চলছে নাকা চেকিং। বাইরের কেউ এখানে লুকিয়ে আছে কিনা তা তল্লাশি করছে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে বুধবার রাতের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করতে বলেছে কমিশন। শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত জারি থাকবে ১৪৪ ধারা। যার অর্থ, আজ রাত থেকে ভোটপর্ব মেটা না পর্যন্ত নন্দীগ্রামে কোনওরকম জমায়েত করা যাবে না। ৫ জনের বেশি একসঙ্গে থাকা যাবে না। দুটোর বেশি বাইক একসঙ্গে বেরোলে গ্রেফতার করা হবে। নন্দীগ্রামে মোট বুথের সংখ্যা ৩৫৫। সব বুথে থাকবেন ৮ জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। ৭৫ শতাংশ বুথে হবে ওয়েবকাস্টিং। ভোটগ্রহণের অনেক আগে থেকেই নন্দীগ্রাম জুড়ে টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। রয়েছে মহিলা সিআরপিএফ-এর দল। এই কেন্দ্রের ভোট যাতে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করতে মরিয়া নির্বাচন কমিশন।

অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরে ২১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী, বাঁকুড়ায় ১৭০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৯৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় থাকছে ৭২ কোম্পানি আধাসেনা থাকবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, নির্বাচন পরবর্তী হিংসা রুখতে পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামে ছয় কোম্পানি করে বাহিনী থাকবে। পাশাপাশি যাতে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তাই রাতের দিকে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে, ভোটের ঠিক আগের দিন ফের সুর চড়ালেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের ‘বহিরাগত’ ইস্যুতে সরব তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বহিরাগত গুন্ডারা ঢুকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ তৃণমূল নেত্রীর। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে এব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও নন্দীগ্রামে তৃণমূলের কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেই দাবি বিজেপি-র।। নন্দীগ্রামে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করতে কমিশনকে তৎপর হতে আবেদন জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামের ভোটের ফলাফলই ঠিক করে দিতে পারে আগামী দিনের বঙ্গ রাজনীতির গতিপ্রকৃতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *