BRAKING NEWS

বুদ্ধবাবুকে তথাগত রায়ের চিঠি, মুখর নেট-নাগরিকরা

কলকাতা, ৩১ মার্চ (হি. স.) : ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর বিবৃতি পেয়ে তাঁকেই রাজ্যের বেহাল অবস্থার জন্য দুষলেন ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের প্রাক্তন পাল তথাগত রায়। বিষয়টি নিয়ে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে নেট-নাগরিকদের মধ্যে। 

তথাগতবাবুর এই চিঠি ফেসবুকে পোস্ট করার চার ঘন্টা বাদে, বুধবার বেলা দুটায় প্রায় এক হাজার লাইক, ২৫০টি, ৩৭০টি শেয়ার। ব্রজকিশোর সাহা লিখেছেন, “মানুষ হিসাবে বুদ্ধবাবু যথেষ্ট ভদ্রলোক। কিন্তু বামপন্থীদের কিছু খারাপ চিন্তাধারায় বুদ্ধ বাবু শকেও আজ সব শুনতে হচ্ছে।তথাগত বাবুর কথাগুলোকে সমর্থন করি এবং আশা করি নতুন প্রজন্ম যেন এইসব খারাপ রাজনীতির শিকার না হয়।“

সঞ্জয় রায় লিখেছেন, “আপনার বক্তব্যের সঙ্গে অনেকাংশে সহমত। তবে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ধ্বংসের জন্য বুদ্ধবাবু অতটা দায়ী নন যতটা জ্যোতিবাবু ও মমতা। বুদ্ধবাবু শিল্পায়নের চেষ্টা করেছিলেন যদিও তাতে পরিকল্পনার অভাব ছিল বলে আমার মনে হয়।  

তপন গাঙ্গুলি লিখেছেন, “সব তো বুঝলাম তথাগত বাবু, তবে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো। সিঙ্গুর অনশন মঞ্চে সেদিন আমাদের দিদিমনির সাথে রাজনাথ সিংকে দেখা গিয়েছিল কেনো? তার মানে আপনারা সিঙ্গুর আন্দোলনে আপনার এখনকার সর্বোচ্চ মেকি রাজনৈতিক শত্রুর সাথ এ আপোষ করেছিলেন? তখন এতো বাংলার ভবিষ্যতের কথা কোথায় ছিল? আপনারা বাঙালির চিরশত্রু। আপনাদের জায়গা হবে না এই বাংলায় মিলিয়ে নেবেন।”

শ্যামল কুমার মজুমদার লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গকে শ্মশান বানিয়েছেন আপনাদের‌ই এক সময়ের পিরীতের মমতা সরকার আর দেশটাকে পেয়ারের বেনিয়াদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আগামী ৫০ বছর অনাহারে রাখার ব্যবস্থা করছেন, লজ্জা করেনা আপনাদের বামপন্থীদের দোষারোপ করতে? হায়া যাদের নেই কি বা আশা করব।“

শ্যামলবাবুর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাম মজুমদার লিখেছেন, “বামপন্থীরা আগেই শ্মশান বানিয়েছে। মমতা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা দিয়েছে। সরকারের সংস্থাগুলোর যা অবস্থা কে দেবে ভরতুকি? আমি আশ্চর্য হচ্ছি তুমি এখনও সিপিএম-কে সমর্থন কর দেখে। সিপিএম ও জোতি বসু বাঙালীর যা খতি করেছে আগামী ৫০০ বছরে ও অত খতি কেউ করতে পারবে না।“

শমিত সেনগুপ্ত লিখেছেন, “এই বিগত ৪/৫  বছরগুলোয় উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এর ডাবল ইঞ্জিন সরকার কয়টা শিল্প এনেছে? কোনও তথ্য আছে কি আপনার কাছে?

শমিতবাবুকে পার্থ সেন লিখেছেন, “কারোর সমালোচনা করার আগে ভেবে দেখুন আপনাদের পশ্চিমবঙ্গ কোন জায়গায় আছে , কতদিন এমন অবস্থায় পড়ে আছে, কেনো এমন আছে ? ইত্যাদি।

প্রথমেই বলতে চাই যে হ্যাঁ, ডবল ইঞ্জিন থাকা  গুলি অনেক অনেক বেশি উন্নত আপনাদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে। এখন সেখানে আরও অনেক উন্নতি হচ্ছে, নতুন নতুন শিল্প আসছে বাস্তবে, বাংলার মত মিথ্যা কাগজে কলমে নয়।

আপনি উত্তর প্রদেশের উন্নয়নের কথা বলছেন, হ্যাঁ , উত্তর প্রদেশ অনেক উন্নতি করে চলেছে শিল্প ক্ষেত্রে, পরিবহন পরিকাঠামো ক্ষেত্রে। উত্তর প্রদেশের পরিকাঠামো উন্নয়ন ক্ষেত্রে প্রথমেই বলি দিল্লী – মিরাট অতিদ্রুত গতির রেপিড ট্রানজিট সিস্টেম , যাতে মাত্র একঘন্টায় দিল্লী থেকে মিরাট পৌঁছনো যাবে। 

দ্বিতীয় আসি উত্তর প্রদেশে দাদরির কাছে নির্মীয়মান জেবার বিমানবন্দর সম্পর্কে, যেটি দিল্লীর ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরের সহায়ক বিমানবন্দর হিসাবে গড়ে উঠছে, আকারে ও আয়তনে এই বিমানবন্দর ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরের চাইতে অনেকটাই বিশাল, এবং অত্যাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন হিসেবেই নির্মাণ করা হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশের নয়ডা, আগ্রা, প্রয়াগরাজ, বেনারস, লক্ষ্ণৌ ইত্যাদি জায়গায় গড়ে উঠছে নানা ধরনের শিল্প কারখানা, আজ স্যামসাং, মাইক্রোম্যাক্স সহ বহু মোবাইল ফোন উৎপাদন কারখানা নয়ডা ও তার আসেপাশের অঞ্চলগুলিতে, আজ জাপানিজ হোন্ডা গাড়ি তৈরি হচ্ছে সুলতানপুরে। উন্নয়নে উত্তরপ্রদেশ এখন উল্লেখযোগ্য স্থানে।

এরপর মধ্যপ্রদেশ , গুজরাট, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা , সহ সমস্ত রাজ্যেই কিছু না কিছু শিল্প আসছে , সবটা এখানে স্থানাভাবের জন্য বর্ণনা করা সম্ভব নয়।

পরিশেষে একটা ছোট্ট কথা বলি, যে কোনও রাজ্যে ডবল ইঞ্জিন সরকার হলে যে সেই  লাভবান হয়, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ তো আমাদের হাতের কাছেই , আমাদের পশ্চিমবঙ্গে। এই রাজ্যে ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়ের আমলে তাঁর নেতৃত্বে “ডবল ইঞ্জিন সরকার”  ছিল। কেন্দ্রে নেহরুর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ছিল। তখন কি এই রাজ্য উপকৃত হয়নি? তখন কি অনেক শিল্প এই রাজ্যে গড়ে ওঠেনি? তখন কি চিত্তরঞ্জন রেল কারখানা গড়ে উঠেনি? তখন কি রাজ্যের উদ্যোগে গঠিত দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে কেন্দ্রের উদ্যোগে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা, মিশ্র ইস্পাত কারখানা, এমএএমসি-সহ বহু সরকারি বেসরকারি কারখানা গড়ে উঠেনি ? তাই পশ্চিমবঙ্গের একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নাগরিক হিসাবে ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার’ সম্পর্কে সন্দেহ করা বা প্রশ্ন তোলাটা মূর্খামি।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *