কংগ্রেসের ডাকে ত্রিপুরায় ১২ ঘণ্টার বনধ, জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক

আগরতলা, ১৮ জানুয়ারি (হি.স.) : ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পীযূষকান্তি বিশ্বাসের উপর হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার রাজ্যে ১২ ঘণ্টার বনধ পালিত হচ্ছে। কিন্তু কর্মনাশা বনধকে সাধারণ মানুষ সমর্থন করেননি বলেই মনে হচ্ছে। বনধ-এ জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। ত্রিপুরা সড়ক পরিবহণ নিগমের গাড়ি সকাল থেকেই যাত্রী পরিষেবা দিচ্ছে। আগরতলা থেকে সাব্রুম এবং ধর্মনগর সহ বিভিন্ন রুটে গাড়ি চলাচল করছে স্বাভাবিক ছন্দে। শুধু বেসরকারি যানবাহন রাস্তায় কম চলাচল করছে। বনধকে ঘিরে সারা ত্রিপুরায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। সকালে কংগ্রেস সমর্থকরা আগরতলার পোস্ট অফিস চৌমুহনিতে পিকেটিং করেছেন। অন্যদিকে, বিজেপি-র বাইক বাহিনী বনধ-এ দোকানপাট খোলা রাখার জন্য সকলের মনে সাহস জুগিয়ে চলেছে।

রবিবার বিশালগড়ে দলীয় অফিসের সামনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পীযূষকান্তি বিশ্বাস দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক ছুটে গিয়ে আক্রান্ত পীযূষবাবুর চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবও টেলিফোনে পীযূষ বিশ্বাসের সাথে কথা বলে দুষ্কৃতীদের শিগগির গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু, দলীয় সভাপতির উপর আক্রমণের ঘটনায় প্রদেশ কংগ্রেস আজ সোমবার ১২ ঘণ্টার বনধ-এর ডাক দিয়েছে। শাসক দল বিজেপি ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে।

আজ সকাল থেকে ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্তে বনধ-এর মিশ্র প্রভাব দেখা গেছে। সকালে ত্রিপুরা সড়ক পরিবহণ নিগমের গাড়ি যথারীতি যাত্রী পরিষেবায় রাস্তায় নেমেছে। যাত্রী সংখ্যা আজ কিছুটা কম হতে পারে বলে অনুমান করা হলেও সরকারি সকল দফতরেই এদিন স্বাভাবিক কাজকর্ম হচ্ছে। অফিসে কর্মচারীদের উপস্থিতির হারও অন্যান্য দিনের সমতুল্য ছিল। মফসসলে জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক। কারণ, হঠাৎ করে বনধ ডাকার দরুন অনেকে এ-বিষয়ে অবগত ছিলেন না।

তবে, বনধকে ঘিরে এই খবর লেখা পর্যন্ত কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর মিলেনি। আগরতলার পোস্ট অফিস চৌমুহনিতে সকালে প্রদেশ যুব কংগ্রেস টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ দেখিয়েছে। এছাড়া সর্বত্রই শান্তিপূর্ণ রয়েছে পরিস্থিতি। পরিবহণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির উপর আক্রমণের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। সাথে হঠাৎ এই বনধ-এর বিরোধিতাও করেছেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, সরকার এবং শাসক দল উভয়েই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির উপর হামলার নিন্দা করেছে। তা সত্ত্বেও এই বনধ-এর কোনও যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। অবশ্য, জনগণ এই কর্মনাশা বনধকে প্রত্যাখ্যান করে বুঝিয়ে দিয়েছেন জনবিরোধী কাজকর্মের কোনও স্থান নেই ত্রিপুরায়। তিনি দাবি করেন, যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আগরতলায় দোকানপাট খুলেছে যথারীতি।

এদিন ত্রিপুরা সড়ক পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান দীপক মজুমদার বলেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির উপর হামলার খবর শুনে সাংসদের ছুটে যাওয়া এবং মুখ্যমন্ত্রীর ফোনে খোঁজ নেওয়া সত্ত্বেও বনধ দেউলিয়াপনার প্রমাণ। অস্তিত্ব সংকটে কংগ্রেসের রাজনীতিতে টিঁকে থাকার প্রশ্নে এই কর্মনাশা বনধ-এর ডাক দেওয়া হয়েছে। এদিকে, প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি পূজন বিশ্বাস দাবি করেন, বনধ সর্বাত্মক সফল হয়েছে। মানুষ বিজেপি-র ভয়ে মুখ খুলছেন না। তবে কংগ্রেসের ডাকে বনধকে সমর্থন করেছেন জনতা।

আজ সকালে পিকেটিং করার সময় কংগ্রেস এবং বিজেপি কর্মীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। হরিগঙ্গা বসাক রোডে দুই গোষ্ঠী মুখোমুখি হওয়ায় সাময়িক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *