কলকাতা, ২২ ডিসেম্বর (হি স)। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাঙালির আবেগ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে নিয়ে বিশেষ ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে হবে নেতাজীর ওপর স্থায়ী গ্যালারি। আলো ও ধ্বণি অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও হবে ওখানে।
আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতাজীর জন্মের ১২৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে। বর্ষব্যাপী আয়োজনের পরিকল্পনার দাবি উঠছে নানা মহলে। ক’দিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজীর ব্যাপারে টিঠি দিয়েছিলেন মোদীকে। নেতাজীর ব্যাযারে মোদীর কাছে চিঠি গিয়েছে বামেদের তরফেও।
সোমবার নরেন্দ্র মোদী টুইটে লেখেন, নেতাজী সুভাষ বোসের সাহস সুবিদিত। একজন বিদগ্ধ পন্ডিত, সৈনিক ও শ্রেষ্ট এই জননেতার ১২৫তম জন্ম জয়ন্তী আমরা শীঘ্রই উদযাপন করতে চলেছি। এজন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি করা হয়েছে। আসুন, আমরা সকলে মিলে বিশেষ এই অনুষ্ঠানটিকে সাড়ম্বরে উদযাপিত করি।“
কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য একটি উচ্চস্তরীয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২১ সালের ২৩শে জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা এক বছর মেয়াদী উৎসব উদযাপনের বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু সম্পর্কে বলেছিলেন, “সাম্রাজ্যবাদ প্রতিরোধে তাঁর সাহসিকতা ও অতুলনীয় অবদানের জন্য ভারত চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে। তিনি ছিলেন, এমন এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, যিনি প্রত্যেক ভারতীয়র মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন সুনিশ্চিত করতে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করেছিলেন। সুভাষবাবু তাঁর পরাক্রমী বিচক্ষণতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য সুবিদিত হয়েছিলেন। আমরা তাঁর আদর্শ ও শক্তিশালী ভারত গঠনের স্বপ্ন পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ”।
উচ্চস্তরীয় এই কমিটিতে বিশেষজ্ঞ, ঐতিহাসিক, লেখক, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর পারিবারিক সদস্যরা ছাড়াও আজাদ হিন্দ ফৌজ/আইএনএ – এর সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা থাকবেন। এই কমিটি নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে স্মৃতি বিজড়িত দিল্লি ও কলকাতা সহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় উৎসব উদযাপনের বিষয়ে নীতি-নির্দেশিকা প্রণয়ন করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু অমূল্য পরম্পরা সংরক্ষণে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালের ২৩শে জানুয়ারি নতুন দিল্লিতে লালকেল্লায় নেতাজী নামাঙ্কিত একটি সংগ্রহালয় উদ্বোধন করেন। কলকাতায় ঐতিহাসিক সৌধ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে একটি স্থায়ী প্রদর্শনীর পাশাপাশি লাইট অ্যান্ড সাউন্ড অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছে। ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু সম্পর্কিত একাধিক ফাইল প্রকাশ করে। সেই বছরেরই ৪ঠা ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়ে ৩৩টি ফাইল প্রকাশ করা হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬’র ২৩শে জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী নেতাজী সম্পর্কিত আরও ১০০টি ফাইলের ডিজিটাল কপি প্রকাশ করেন। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু সম্পর্কিত গোপন এই ফাইলগুলি প্রকাশের জন্য সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে এসেছিলেন।
২০১৯ সালে আন্দামান সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী সুভাষ চন্দ্র বসুর গঠিত অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রশাসনিক ক্ষমতা ছিল অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকারের হাতে। সেই সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে রস দ্বীপের নামকরণ করেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বীপ, নীল দ্বীপের নামকরণ করেন শহীদ দ্বীপ এবং হ্যাভলক দ্বীপের নামকরণ করেন স্বরাজ দ্বীপ হিসাবে।
উঢ়্লেখ্য, ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে ‘জাতীয় ছুটি’র দিন ঘোষণার দাবি জানিয়ে গত ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে মোদীকে তিনি অনুরোধ করেন, নেতাজির জন্মদিনে যেন জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করা। তাঁর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর আগেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। মমতার অভিমত, নেতাজির জন্মদিন গোটা দেশেই মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। তাই ওই দিনটিকে এই ঘোষণা হওয়া উচিত। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী যাতে ওই বিষয়ে ‘ব্যক্তিগত ভাবে’ উদ্যোগী হন, সে অনুরোধও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এর এক সপ্তাহের মাথায়, ১৯ নভেম্বর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে জাতীয় ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। এরই পাশাপাশি নেতাজি সম্পর্কিত আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রকাশ ও তাঁর অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচনেরও দাবি জানান এই বাম নেতা।