BRAKING NEWS

ব্রু শরণার্থী পুনর্বাসনে জমির অনুমোদন মিলেনি এখনো, জেএমসি-র আন্দোলন নিয়ে উঠছে প্রশ্ণ

আগরতলা, ২৪ নভেম্বর (হি.স.)৷৷ ত্রিপুরায় ব্রু শরণার্থী পুনর্বাসনের ব্যাপারে চিহ্ণিত জমি বণ্টনে এখনও অনুমোদন মিলেনি৷ ফলে, এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে জেএমসি-র আন্দোলনের কোনও সারবত্তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ সরকারি তথ্য অনুসারে, পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় চিহ্ণিত জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রয়েছে৷ ফলে কেন্দ্রের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে৷ কিন্তু কাঞ্চনপুরে জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি এই ইস্যুতে টানা আট দিন বনধ পালন করেছে৷ শুধু তা-ই নয়, তাঁদের জাতীয় সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে সংঘটিত সংঘর্ষে দুজন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷


প্রসঙ্গত, কাঞ্চনপুর মহকুমায় ব্রু শরণার্থী অধিকাংশ পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে বলে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি৷ তাঁদের বক্তব্য, ৫০০ পরিবার কাঞ্চনপুরে পুনর্বাসন দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫,০০০ পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ত্রিপুরা সরকার৷ শুধু তা-ই নয়, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ গ্রিন ট্রাইবুনালে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল৷ সম্প্রতি, জেএমসি ব্রু শরণার্থী পুনর্বাসনে ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি খেলাপের অভিযোগ এনে কাঞ্চনপুরে অনির্দিষ্টকালের বনধ পালন করছিল৷ শুধু তা-ই নয়, তারা পানিসাগরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে৷ তাতে সংঘর্ষে দুজন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল, যার জন্য গত কয়েকদিন ধরে কাঞ্চনপুর এবং পানিসাগর মহকুমায় ধারা ১৪৪ জারি করা হয়েছিল৷


কিন্তু, আজ জেএমসি বনধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে৷ তাতে অবশ্য পাবিয়াছড়ার বিধায়ক ভগবান দাসের মধ্যস্থতায় সফলতা মিলেছে৷ আজ জেএমসি-র প্রতিনিধিরা আগরতলায় এসে রাজ্য সরকারের সাথে বৈঠক করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ কিন্তু প্রশ্ণ উঠেছে, এখনও পুনর্বাসনের জন্য জমি চূড়ান্ত হয়নি, তবে কেন এই আন্দোলন? আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ত্রিপুরায় ছয়টি জেলার নয়টি মহকুমায় ব্রু শরণার্থী পুনর্বাসনে জমি চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ কাঞ্চনপুর, পানিসাগর, লংতরাইভ্যালি, আমবাসা, খোয়াই, কৈলাসহর, ধর্মনগর এবং সোনামুড়া মহকুমায় ১৬টি স্থান চিহ্ণিত করেছে ত্রিপুরা সরকার৷ তবে, ওই সব স্থানে সমস্ত জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রয়েছে৷ তাই কেন্দ্রের অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে৷


আইন তথা শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে ত্রিপুরা সরকারের রাজস্ব দফতর শিলঙে অবস্থিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংরক্ষিত বনাঞ্চল আঞ্চলিক কার্যালয়ে ওই জমি অসংরক্ষিত করার অনুমোদন চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে৷ সেখান থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যাবে ত্রিপুরার ওই প্রস্তাব৷ তাতে মাস দুয়েক সময় লাগবে বলে তিনি মনে করছেন৷ তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রের অনুমোদন পাওয়ার পর শুরু হবে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া৷ তিনি জানান, ওই জমিতে প্রায় ৮ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়া যাবে৷ আপাতত ব্রু শরণার্থী পরিবার রয়েছে ৬,৯৬০৷ ফলে, ব্রু-দের পুনর্বাসন দিয়ে আরও প্রচুর জমি রয়ে যাবে৷ সেখানে অন্য ভূমিহীনদের পুনর্বাসন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করবে রাজ্য সরকার৷


সরকারি তথ্য এবং জেএমসি-র কর্মকাণ্ডে ধারণা করা হচ্ছে, পুনর্বাসন নিয়ে আন্দোলনের নেপথ্যে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে৷ কারণ, ত্রিপুরা সরকার কোথাও বলেনি কাঞ্চনপুরে সমস্ত ব্রু শরণার্থী পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে৷ এমন-কি, আজ সাংবাদিকদের প্রশ্ণের জবাবে সে-কথা স্পষ্ট করে জেএমসি-র প্রতিনিধিরাও বলেননি৷ স্বাভাবিকভাবে, এডিসি নির্বাচনের প্রাক্কালে উত্তর ত্রিপুরা জেলায় দেও নদীর তীরে পরিবেশকে অশান্ত করে তোলার পেছনে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি রয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷ এমনিতেই বিজেপি এবং আইপিএফটি পানিসাগরে অবরোধ কর্মসূচি চলাকালীন দুজন নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছে৷ ফলে জেএমসি-র লাগাতার আন্দোলন গভীর ষড়যন্ত্রের পরিণাম নয়তো, এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে বলেই মনে করা হচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *