BRAKING NEWS

না ফেরার দেশে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা, ১৫ নভেম্বর ( হি স): মৃত্যুর কাছে পরাজিত অপরাজিত অপু। হাজারো ভক্তকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিলেন বাঙালির ফেলুদা। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রবিবার বেলা ১২ টা ১৫ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন অভিনেতা সৌমিত্র। রক্তমাংসের সৌমিত্র আজ হয়তো নেই বাঙালির মধ্যে তবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পদযাত্রা বলে দিয়েছে চির অমর বাঙালির ফেলুদা।


 করোনাই যেন অনুঘটকের মতো অভিনেতাকে এগিয়ে নিয়ে গেল না-ফেরার দেশে। অভিনেতাকে যখন ৬ অক্টোবার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল চিকিৎসার জন্য তখন তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন ঠিকই কিন্তু পরবর্তীকালে করোনামুক্ত হয়ে যান অভিনেতা। কিন্তু চিকিৎসকদের সূত্রে জানা যায়, রবিবার মাল্টিঅর্গান ফেলিওর, ব্রেনডেথ হয়ে মৃত্যু হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। শনিবার বিকেলের পর থেকেই চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যান বর্ষীয়ান অভিনেতা। রবিবার বেলভিউ হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, মৃত্যু হয়েছে সৌমিত্রের। ৪০ দিন ধরে বেলভিউতে ভর্তি ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাই করোনামুক্ত শরীর একটু-একটু করে হারাতে বসেছিল রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা। ফলে তাঁকে দীর্ঘদিন লাইফ সাপোর্টে রাখতেও হয়েছিল। শেষমেষ রবিবার ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মৃত্যু মানতে পারেনি কলাকুশলীরা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে টলিপাড়ার সকলে তাদের গুরু হিসেবে মানেন। কিন্তু সেই গুরু আর নেই।সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীর শোকাহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনেতার মৃত্যুর খবর পেয়ে বেলভিউ হাসপাতালে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় শুধু মহানায়ক নয় তিনি মহা প্রতিভাবান।

তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ ছিল। পরিবারের সঙ্গে সৌমিত্রবাবুর সঙ্গেও ফোনে কথা হয়েছিল। তিনি কিন্তু করোনা মুক্ত হয়েছিলেন। তিনি করোনা র কাছে হার মানেননি।আমাদের ইতিহাস হারালাম আমরা।আজ বিশ্ব বাংলার দুঃখের দিন’। এরপর সেখান থেকে অভিনেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গল্ফ গ্রীনের বাড়িতে। সেখান থেকে টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ান স্টুডিও সেখান থেকে রবীন্দ্রসদন। সেখান থেকে পদযাত্রা করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ নিয়ে আসা হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে রাজ্যের তরফে গান স্যালুটে অন্তিম বিদায় জানানো হয় বর্ষিয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলাকুশলী শিল্পীরা। কান্নায় ভেঙে পরেন সৌমিত্র কন্যা। রবীন্দ্র সদন থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশান পর্যন্ত পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পদযাত্রার ছেয়ে গিয়েছিল অগণিত ভক্তদের ঢল। মোমবাতি হাতে নিয়ে প্রাণের অভিনেতাকে শেষ বিদায় জানায় অনুরাগীরা। আলোর উৎসব এর মাঝেই যেন মুহূর্তের মধ্যে ঘনিয়ে আসে অন্ধকার। রক্তমাংসের অপু হয়তো আজ ভক্তদের কাছে মৃত। কিন্তু তিনি ভক্তদের মনের মণিকোঠায় আজীবন থাকবেন অমর। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পদযাত্রায় যেন রাজনৈতিক মহল সিনেমা মহল সব মিলেমিশে এক হয়ে যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পদযাত্রায় যেমন দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাঁটতে তেমনি দেখা যায় বামপন্থী দল নেতা সুজন চক্রবর্তী বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু,সূর্যকান্ত মিশ্র গতি তেমনই আবার দেখা যায় পরিচালক রাজ চক্রবর্তী অভিনেত্রীর জুন মালিয়া থেকে একাধিক অভিনেতা অভিনেত্রীরা। বাঙালি ফেলুদাকে শেষবারের জন্য দেখতে ভিড় জমায় কাতারে কাতারে মানুষ।
১৯৫৬ সালে সত্যজিৎ রায় যখন ‘অপরাজিত’র জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন। তখনই তাঁর সঙ্গে ২০ বছরের সৌমিত্রর দেখা হয়। বয়স বেশি হওয়ার কারণে সেই সময় তাঁকে নেননি পরিচালক সত্যজিৎ। কিন্তু বেশি বয়সের অপুর জন্য ২০ বছরের যুবককে পছন্দ করে রেখেছিলেন তাঁর অজ্ঞাতেই। এরপর ১৯৫৯ সাল ‘অপুর সংসার’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্রথম পা রাখা বর্ষের অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। এরপর সত্যজিৎ রায়ের একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে ছক্কা হাঁকিয়েছেন অভিনেতা। মোট ১৪টি ছবিতে কাজ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৬০ বছরের অভিনয় জীবনে আড়াইশোর বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
 সকলেরই জানা ২০০৪ সালে পদ্মভূষনের মতো পুরস্কার পান সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। জাতীয় পুরস্কারও রয়েছে অভিনেতার । ২০০৬ সালে পরিচালক সুমন ঘোষের ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পান অভিনেতা । মঞ্চ থেকে বড় পর্দা একাধারে কবি, বাচিক শিল্পী তিনি। ২০১২ সালে ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান অভিনেতা । এরপর ২০১৮ সাল ফরাসি সরকারের সেরা নাগরিক সম্মান লিজিয়ঁ দনর পা। হাসপাতালে ভর্তির আগে পর্যন্ত শুটিং করেছেন অভিনেতা। তবে, আর করবেন না শুটিং । চিরবিদায় বাঙালি ফেলুদাকে।
 হিন্দুস্থান সমাচার / পায়েল / কাকলি

g
রাঙাই শুধু নয়, হরেক রঙের জবায় ভাসল বর্ধমানের কালীপুজো
দুর্গাপুর, ১৫ নভেম্বর(হি.স.):  মায়ের গায়ে রাঙা জবা’ই সনাতন প্রথা। তবে বেগুনী, হলুদ, গোলাপী, নীল, মিক্স জবার ভিড়ে বর্ধমানে এবার অনন্তকালের সেই ধারনায় কিঞ্চিত বদল এসেছে। হরেক রঙের জবা উৎসর্গ দেখা গেছে কালীপুজোর দিন প্রাচীন এই জেলাশহরের বেশ কিছু জায়গায়।
” মায়ের পুজোয় শুধুমাত্র রাঙাজবাই চলবে এমনটা নয়। শাস্ত্রমতে কেবল সাদা জবা বাদে যেকোন রঙের জবাই ব্যাবহার হতে পারে।” মত শহরের কালীবাজার এলাকার বীরহাটা কালীবাড়ীর প্রধান পুরোহিত দেবাশীষ মুখার্জীর। তিনি বলেন,” এই বিধান বর্নিত রয়েছে। শ্যামাচরন কবিরত্ন বিদ্যাবারিধীর প্রথমখন্ডের ‘কোন দেবতার কোন ফুল’ অধ্যায়ে।” এখন প্রশ্ন, আচমকা এত রঙ-বেরঙের জবার জেগান মিলছেই বা কোথা থেকে? বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শষ্য ও বীজ গবেষনা ফার্মে তৈরী হয়েছে ১৫০ ধরনের জবা। গত দুবছর আগে এইসব জবার চারা এসেছিল আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপ, অস্ট্রেলিয়া, ভারতের পুণা, হায়দ্রাবাদ, বেঙ্গালুরু থেকে। তারপরই শুরু হয় কলা ও কোষ সংযোজন ও জীববৈচিত্রের গবেষনা।


ফার্মের অধিকর্তা ডঃ জয়প্রকাশ কেশরী বলেন,” জবা আদতে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ফুল। সাতরকমের জবা ওখানে এমনিতেই মেলে। বিভিন্ন দেশ ও রাজ্য থেকে জোগাড় করা জবা চারা নিয়ে আমরা দু-বছর ধরে গবেষনার মধ্যে প্রায় ১০০০ চারা আমরা বিলিও করেছি।”  ডঃ কেশরীর দাবি, ” আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জবার মতো আম রয়েছে প্রায় ৭০ রকমের। যার মধ্যে কেহিতুরের মত আম গাছ রয়েছে। গোলাপ রয়েছে ৮০ রকমের। ধান রয়েছে প্রায় ১০০ রকমের। তারমধ্যে ১০ রকমের গন্ধযুক্ত ধান। ৫-৬ রকমের কলা আছে। মুলত বিরল গাছ জোগাড় করে রাখা হয়। ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকদের এসব চাষে আগ্রহ বাড়ানো ও উৎসাহিত করা। কৃষি খামারে জৈব সার দিয়ে চাষ হয়। এছাড়াও আরও অন্যান্য গাছ ও চারা নিয়ে গবেষনায় আমাদের এই ফার্ম সারা বছরই কাজ করে যাচ্ছে নিরলস।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *